১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ২২:৪১

নিউইয়র্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে বিশেষ আলাপচারিতায় প্রফেসর ড. হোসনে আরা

অনলাইন ডেস্ক

নিউইয়র্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে বিশেষ আলাপচারিতায় প্রফেসর ড. হোসনে আরা

তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পুরুষ হিসেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হন। লতিফ হল থেকে তাকে চলে যেতে হয়েছিল মন্নুজান হলে। আব্দুস সামাদ হয়ে যান হোসনে আরা বেগম। সেই সময় বাংলাদেশ জুড়ে সেটা ছিল ব্যাপক আলোচিত ঘটনা। তখনকার অত্যন্ত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হয়েছে এই ঘটনা নিয়ে অনেকগুলো বিশেষ প্রতিবেদন। পুরুষ থেকে নারীর জীবন যাপনে নতুনভাবে অভ্যস্ত হবার কারণে হোসনে আরা বেগম বুঝতে পারেন, বাংলাদেশে নারীরা কতখানি অসহায়, কতখানি পরাধীন!

এই বেদনা থেকে ১৯৮০ সালে নিজ শহর বগুড়াতে, ১২৬ জন ভিক্ষুকের মুষ্টি চালের মাধ্যমে সংগ্রহিত ২০৬ মন চাল নিয়ে, তিনি শুরু করেন ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের কাজ। যে সংঘের কর্মকর্তা-কর্মচারী এখন ৩১ হাজার, সদস্য সংখ্যা ৫৩ লাখ মানুষ। ২০৬ মন চালের জায়গায় তাদের সম্পদ এখন ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। অত্যন্ত প্রচারবিমুখ এই মানুষটি ও তার সংগঠন ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর বিস্ময়।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিশেষ আমন্ত্রণে প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। মঙ্গলবার ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে এই মহিয়সী নারীকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, প্রতিনিধি এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের নিয়ে আয়োজিত হয় এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও নিউ ইয়র্ক বাংলা ডটকম সম্পাদক আকবর হায়দার কিরন ছিলেন এই আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে টিএমএসএস এর উপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন মিনহাজ আহমেদ, যার মাধ্যমে উপস্থিত সুধী দর্শক সংগঠনের কর্মতৎপরতা সম্বন্ধে ধারনা লাভ করেন। এরপর  পরামর্শক ও খ্যাতনামা সিনিয়র সাংবাদিক ফারুক ফয়সল খুব চমৎকার ভাষায় প্রফেসর হোসনে আরা বেগমকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি জানান এক সময় বিভিন্ন দেশের দাতা সংস্থার সহযোগিতা নিলেও এখন সেই সাহায্যের পরিমান এসে দাঁড়িয়েছে ১০ ভাগেরও কম। প্রফেসর ডঃ হোসনে আরা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে টেকনিক্যাল পেপার উপস্থাপন ছাড়াও নিউ জার্সির কিন ইউনিভার্সিটির নার্সিং ফ্যাকাল্টির সাথে সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি তারা ওয়াশিংটন ডিসি ও ফ্লোরিডায় অনেকগুলো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা পরিদর্শন করেছেন এবং পারস্পরিক সাহায্য এবং সহযোগিতা নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। আমেরিকার রিজেন্টস অব দ্যা ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান এর সাথে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি’র সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর হোসনে আরা বেগম বলেন, আমরা প্রবাসীদের সাথে আলাপ পরিচয় করতেই জনাব আকবর হায়দার কিরনের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আজ মিলিত হতে পেরে খুবই আনন্দবোধ করছি। আমাদের বিশেষ অনুরোধ, আপনাদের সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প ভিজিট করুন। অতিথি হিসেবে কক্সবাজার ও বগুড়ায় আমাদের নিজস্ব হোটেলে অবস্থান করুন। দেশের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা আমাদের আরও ভালো কাজ করতে অনুপ্রানিত করবে। তিনি জানান বর্তমানে টিএমএসএস বেতন ভুক্ত জনবল প্রায় ৩১ হাজার এবং উপকারভুগী পরিবার সংখ্যা ৫.৩ মিলিয়ন। আমাদের সমিতি সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার। সারা বাংলাদেশ জুড়ে অফিস সংখ্যা ১ হাজার ৬শ টি। টিএমএসএস এর রয়েছে একটি এক হাজার বেডের হাসপাতাল, ৭৫টি সাব ক্লিনিক, ৫টি প্রাইমারি হাসপাতাল, ৩২টি সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৪টি শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া আরও রয়েছে ১টি করে পাঁচতারা মানের হোটেল ও রিসোর্ট এবং উন্নত মানের  ৩০টি হোটেল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডঃ মওদুদ হোসেন আলমগীর, স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রধান ডঃ মতিউর রহমান ও সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আয়শা বেগম। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অতিথি হিসেবে আগত বিশিষ্ট অভিনেত্রী রেখা আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কেটে সবাইকে নিয়ে উদযাপন করেন প্রফেসর হোসনে আরা বেগম। এই সময় অন্যান্যের ভেতর আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। পুরো আয়োজনের বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন প্রবাসের জনপ্রিয় ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর