বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটেরিং ক্যানসার সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি।
আর সুস্থ হয়ে ওঠার কোনও সম্ভাবনা না থাকায় এরই মধ্যে চিকিৎসকরা তার ক্যানসার চিকিৎসায় ক্ষান্ত দিয়েছেন।
এদিকে, শেষ ইচ্ছাটিও পূরণ হচ্ছে না সাবেক এই মন্ত্রীর। প্রিয় স্বদেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার প্রচণ্ড আঁকুতি নিয়েই দেশ থেকে বহুদূরে।
কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় এই মুহূর্তে তিনি অনেকটা দেশহীন। এ অবস্থায় যদি তিনি চলে যান না ফেরার দেশে তাহলে তার মৃতদেহটিও দেশে পাঠানোর বিষয়টি অনিশ্চিত।
এ পরিস্থিতিতে তার পরিবারের সদস্যরা প্রচণ্ড হতাশ।
নিউ ইয়র্কে খোকা পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের মে মাসে একজন ভিজিটর হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ঢাকার সাবেক এই মেয়র।
নিউ ইয়র্কের স্লোন কেটেরিং হসপিটালে চিকিৎসা শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাকে চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়েছে। সে কারণে লম্বা সময়ের জন্য নিউ ইয়র্ক ছেড়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু ভিজিটর ভিসার নিয়মানুযায়ী প্রতি ছয় মাসের মধ্যে দু’চার দিনের জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেতে হতো। এভাবেই চলছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের শেষদিকে তার নিজের এবং সার্বক্ষণিক সঙ্গী স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় তারা নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তাদেরকে পাসপোর্ট না দেওয়ায় এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে খোকা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। তার সেই আবেদন এখনও অনিষ্পন্ন। এরমধ্যে দফায় দফায় কনস্যুলেটে খোঁজ নিয়েও পাসপোর্টের কোনও হদিস মেলেনি। সর্বশেষ মাস ছয়েক আগে ইসমত হোসেন সশরীরে কনস্যুলেটে গিয়ে পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা প্রথম সচিব শামীম হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তিনি পাসপোর্টের বিষয়ে কোনও সদুত্তর দেননি। অগত্যা হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।
ওই সূত্র জানায়, বিরতিহীন চিকিৎসার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক মাস ধরে সাদেক হোসেন খোকা দেশে ফেরার জন্য অনেকটা পাগলের মতো হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বলতেন, ঢাকায় যাওয়ার পর জেলে যেতে হলে যাবো, চিকিৎসার জন্য আর আসতে না দিলেও সমস্যা নাই। দেশে গিয়েই মরবো। কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়া দেশে যাবো কি করে?
বিডি প্রতিদিন/কালাম