১০ এপ্রিল, ২০২০ ২১:২৬

সৌদিতে দীর্ঘ হচ্ছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মিছিল, রিয়াদের মর্গে অর্ধশত লাশ

মোহাম্মদ আল-আমীন, সৌদি আরব

সৌদিতে দীর্ঘ হচ্ছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মিছিল, রিয়াদের মর্গে অর্ধশত লাশ

সৌদি আরবে দীর্ঘ হচ্ছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মিছিল। কেউ মরছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে, কেউবা হৃদরোগ আবার কেউবা মারা যাচ্ছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। হজ্ব, উমরা এবং করোনায় মৃত্যুবরণকারীদেরকে স্থানীয়ভাবে (সৌদি আরবের যেখানে মারা যান সেখানে) দাফনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও ব্যক্তিক্রম ওয়ার্ক ভিসায় এসে মৃত্যুবরণকারীদের ক্ষেত্রে। কাজের ভিসায় সৌদি এসে কেউ মারা গেলে তার পরিবারের সম্মতি ছাড়া মৃতদেহ দেশে প্রেরণ বা স্থানীয়ভাবে দাফনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ মিশন।

গত ১ সপ্তাহে সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রিয়াদ, মক্কা এবং জিজান এলাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ বাংলাদেশি। 

তারা হলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের আশেকের পাড়ার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান এর ছেলে আবুল হাসেম (৩৫)-(মক্কা), কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার উল্টাখালী ফকির বাবার কবর এলাকার শাহ আলমের ছেলে বেলাল উদ্দিন (৩২)-(মক্কা), কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার বাড়িকোটা গজারিয়া গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪২)-(রিয়াদ) এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ঈদমনি গ্রামের বাসিন্দা শওকত ওসমান (৪২)।

এছাড়াও গত ৫ এপ্রিল মক্কায় চট্টগ্রামের মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (৫০) এবং জেদ্দায় সিলেটের আবুল কালাম নামে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ফ্লাইট চালু হওয়া অনিশ্চিত। কবে নাগাদ বর্তমান এই পরিস্থিতি শেষ হবে সেটা অনুমান করতে পারছেন না কেউ। তাই নিহতদেরকে স্থানীয়ভাবে দাফনের অনুমতি দিতে মৃতের পরিবারের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে আছে ৪০ এর বেশি বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সবধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে লাশের স্তুত। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে দাফনও করা যাচ্ছে না এসব মরদেহ। 

দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন সময়ে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী প্রবাসীদের লাশ স্থানীয়ভাবে দাফনের জন্য তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মো. মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মৃত প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা খুব কঠিন। যেসব মৃত প্রবাসীর স্বজনরা যোগাযোগ করছেন তাদেরকে দ্রুতম সময়ের মধ্যে দূতাবাস থেকে এনওসি (অনাপত্তি পত্র) দিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেহেতু সবখানেই জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেজন্য অনাপত্তি পত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিষয়টিও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ফোনে কথা বলেও কনফার্ম করে নিচ্ছি।

তিনি বলেন, দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দেয়া হচ্ছে। দূতাবাসের ৭ জন কর্মী সার্বক্ষণিক দূতাবাস ভবনে অবস্থান করে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে টেলিফোনে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, জেদ্দা কনস্যুলেটের একটি সূত্র জানায়, লকডাউন ঘোষণার পূর্বে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মৃত সকল প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হচ্ছে।

জেদ্দা কনস্যুলেটের শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বলেন, বৈধভাবে কাজের ভিসায় সৌদি আরব এসে যারাই মারা যাবেন তাদের প্রত্যেকের পরিবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড থেকে অনুদান হিসেবে ৩ লাখ করে টাকা পাবেন। মৃত প্রবাসীর দাফন স্থানীয়ভাবে হোক বা দেশে হোক অনুদানের ৩ লাখ টাকা পেতে আইনি কোনো বাধা নেই। এছাড়াও যাদের মৃত দেশে দাফনের জন্য পাঠানো হয় তাদের পরিবারকে বিমানবন্দর থেকেই দাফন-কাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর