১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:১২

ঋণ ছাড়াই নারীর সফল ক্ষমতায়ন এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি প্রকল্প

মোঃ সোহেল রানা

ঋণ ছাড়াই নারীর সফল ক্ষমতায়ন এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি প্রকল্প

প্রতীকী ছবি

বিগত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও এবং সমাজ সেবামূলক সংস্থাসমূহ নারীর ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রচুর বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। 

এ প্রতিপাদ্যের মূল বিষয়টি হচ্ছে- বিনিয়োগ ছাড়াই এবং ঋণ প্রদান ছাড়াই প্রথম ধাপে প্রায় ৬ মাসেই শত শত নারীর ক্ষমতায়ন এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি। 

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া প্রতিটি গ্রাম বা মহল্লায় কর্মপোযোগী প্রতি ১০ জনে সর্বোচ্চ ৩ জন নারী কর্মের মাধ্যমে পরিবারের স্বচ্ছলতায় এবং সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু কর্মপোযোগী বাকি ৭ জন নিজেকে কাজে নিয়োজিত করছেন না। এই হিসাবে শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় প্রায় ৬৮,৮১,৪৪০ জনেরও বেশি কর্মপোযোগী নারী রয়েছেন এবং তারা কর্মে নিয়োজিত নন অথচ তাদের অধিকাংশই কোন না কোন এনজিও বা সংস্থার সদস্য এবং ঋণ গ্রহীতা। আরেকটু পর্যালোচনায়- এনজিও বা সংস্থাগুলোর ওয়েব সাইট লক্ষ্য করলে, দেশ ও সমাজ গঠনে বিভিন্ন প্রসংশনীয় পদক্ষেপ এবং ঋণ গ্রহীতা নারীদের সংখ্যা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু উক্ত সংস্থাগুলো কর্তৃক নারী ক্ষমতায়নের সংখ্যা অনেকটাই সুস্পষ্ট নয়। 

এবার আসুন, কীভাবে মোম গলে মোমে পরিণত হয়? ধরুন, দেশীয় কোন সংস্থা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার অর্থায়নে ৫শ জন নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিলেন। এটা অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৫শ জন নারী প্রশিক্ষণ নেয়ার পর কী করছেন? এদের খুবই কম সংখ্যক কাজ পাচ্ছেন বা নিজে নিজে কিছু কাজ করছেন, অধিকাংশই কাজ করছেন না। কারণ, কে কাজ দেবেন, কোথায় গেলে কাজ পাওয়া যাবে, তাদের তৈরিকৃত পণ্য কোন শ্রেণির লোকের কাছে বিক্রয় করবেন, বাজারজাত করার কৌশলটা কী এবং কীভাবে প্রচার করবেন? এই বিষয়গুলো ঐ তৃণমূল পর্যায়ের নারীর পক্ষে করা অনেকটাই অসম্ভব। কিন্তু প্রতিটি প্রশিক্ষিত নারীকে যদি উক্ত সংস্থা কর্তৃক নিয়মিত কাজ দেয়া হত, তাহলে কাউকেই হয়ত প্রশিক্ষণ নিয়ে বসে থাকতে হত না। আবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে সবাইকেই কাজ দেয়াও সম্ভব হয় না এই কারণে যে, উক্ত সংস্থাটির উৎপাদিত পণ্যের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র বা বিক্রয় প্রতিনিধি সীমিত। 

কিন্তু খুব সহজেই কিছু কৌশল অবলম্বন করেই বিনিয়োগ ছাড়াই এবং শর্ত সাপেক্ষে সারা দেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র এবং বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ করা সম্ভব। ফলে এক দিকে যেমন সংস্থাটি কর্তৃক নারীরা নিয়মিত কাজ পেয়ে সফল ক্ষমতায়ন হবে অন্যদিকে আরও অনেকেরই কর্মসংস্থান হবে। 

এখন আসুন, কীভাবে বিনিয়োগ এবং ঋণ প্রদান ছাড়াই প্রথম ধাপে প্রায় ৬ মাসেই শত শত নারীর সফল ক্ষমতায়ন সম্ভব! সেটা হচ্ছে; এই প্রশিক্ষণটা হবে- শিক্ষা, যোগ্যতা, সামর্থ, মেধা এবং ইচ্ছানুসারে কয়েকটি ধাপে, গ্রুপে এবং বিষয়ে। প্রথম ধাপে এবং গ্রুপে থাকবে তৃণমূল পর্যায় থেকে স্বল্প শিক্ষিত নারী। দ্বিতীয় ধাপে ও গ্রুপে বেশিরভাগই থাকবেন শিক্ষিত নারী এবং আইটি ভিত্তিক প্রশিক্ষণ। আমার দেশের নারীরা যেন ঘরে বসেই এশিয়ার অন্য দেশগুলোর, ইউরোপ এবং আমেরিকার কোম্পানির ওয়েব সাইট ডেভেলপ করতে পারেন, শিক্ষা, তথ্য এবং গবেষণামূলক নানা ধরণের এ্যাপস এবং আইটি বিষয়ক অন্য কাজগুলোও করতে পারেন। প্রশিক্ষণে যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা নাম মাত্র ফি’ প্রদান করবেন আর শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ ফি’ দিয়েই প্রথম ধাপের ৬ মাস সফলভাবে এই প্রকল্প চালানো সম্ভব। তারা প্রশিক্ষণ ফি’ এই কারণে প্রদান করবেন যে- এই প্রশিক্ষণ তাদের উপার্জন নিশ্চিত করবে, পরিবারকে স্বচ্ছল করবে, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। 

লেখক: মাস্টার্স ইন জাপানিজ স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর