মফিজ সাহেবের চাকরি আছে আর সাত মাস। এরপর অবসরে যাবেন। এ সময় তাকে পাঠানো হলো বাধ্যতামূলক কম্পিউটার ট্রেনিংয়ে। প্রবীণ আরও কয়েকজন সহকর্মীও সেই দলে যোগ দিলেন। জটিল সব আলাপ-আলোচনার কিছুই তাদের মাথায় না ঢুকলেও ঘাড় নেড়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে জি, হ্যাঁ ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে সবাই একে অপরকে বোঝাতে চান, প্রত্যেকেই খুব বুঝছেন। মফিজ সাহেব সবার সামনে বসে মাথা-ঘাড় বাঁকিয়ে খুব হা হু করেন। তার এই একা বোঝাটা মেনে নিতে পারেন না চাঁনমিয়া। পরদিন লাফ দিয়ে সামনের চেয়ারে গিয়ে বসেন। তার লাফ দেওয়া দেখে পেছনে বসা আরেক সহকর্মী প্রশ্ন তোলেন, ট্রেনিংয়ে এত লাফঝাঁপ, দাপাদাপির কী আছে?
মফিজ সাহেব হাসেন। ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে ওঠেন। হাসিতে ফ্লেক্সিবল ডেনচারে বাঁধাই সামনের চারটি দাঁতের দুটি খুলে পড়ে যায়। দাঁতগুলো লাগাতে লাগাতে বলেন, আর সাত মাস পর রিটায়ার্ড।
দেখতে দেখতে ট্রেনিং শেষ হয়। শেষ দিন চা খাওয়ার সময় বড় আক্ষেপ নিয়ে মফিজ সাহেব তার পাশে বসা চাঁনমিয়াকে অভিযোগ করেন, জনাব আপনি আমাকে সহযোগিতা করলেন না। সব একাই বুঝলেন।: কি বুঝলাম!
: বোঝেন না?
: না।
: ট্রেনিংয়ের সব জটিল বিষয়গুলো।
: ও হ্যাঁ ট্রেনিং। কথা শেষ করে ভদ্রলোক কিছুক্ষণ কাঁদেন। তারপর ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে ওঠেন। তার কাণ্ড দেখে অন্য সবাই হাসতে থাকেন, কাশতে থাকেন। কারও মুখ থেকে চা ছিটকে পড়ে। কারও গলা বুক আটকে যায়। হাসা, কাশা থামলে সবাই ভদ্রলোককে তার কাঁদার এবং হাসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন।
: হাসলেন কেন! কাঁদলেন কেন?
জবাবে মফিজ সাহেব বলেন, কেঁদেছি এ জন্য যে, আপনি বড় আশা করে আমার পাশে বসেছিলেন কিছু শেখার জন্য কিন্তু আমি আপনাকে কিছুই শেখাতে পারিনি। আপনার আশা ভঙ্গ হয়েছে, আপনি কষ্ট পেয়েছেন এ জন্য কেঁদেছি। হাসার কারণ হলো, আপনিও কিছু বোঝেননি, আমিও কিছু বুঝিনি।
চাঁনমিয়া বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বলে ওঠেন, কিছু না হোক মাথা-ঘাড় ঝাঁকানোতে ব্যায়াম তো হয়েছে।