শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের বন্ধু অঁদ্রে মালরো

সাহিত্য ডেস্ক

বাংলাদেশের বন্ধু অঁদ্রে মালরো

অঁদ্রে মালরো (১৯০১-১৯৭৬) খ্যাতিমান ফরাসি ঔপন্যাসিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, শিল্পকলা তাত্ত্বিক এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে পালন করেন অসামান্য ভূমিকা। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মানুষ যে বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়, তারা যে একটি মুক্তিযুদ্ধ করছে, এ কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাতে ভারতের দিল্লিতে অহিংস নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগ নেন। এ জন্য জুলাইয়ের শেষ দিকে ফরাসি চিন্তাবিদ মালরোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন জয়প্রকাশ। কাছাকাছি সময়ে চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ‘বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে সভায় অংশগ্রহণের বিষয়ে মালরোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন। এরই মধ্যে পাকিস্তান প্রচার করল, অস্ত্র সাহায্যের জন্য বাংলাদেশের দূত ইসরায়েলে গেছে! ‘বাঙালিরা ইহুদিদের কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছে’-ছড়িয়ে দেওয়া হলো এই মিথ্যা প্রচারণা। বিভ্রান্তিকর এ সময়টিতে আজীবন বিপ্লবী মানুষের পক্ষাবলম্ব^নকারী অঁদ্রে মালরোর একটি বিবৃতি ঘটনায় নতুন মোড় আনে। ১৮ সেপ্টেম্ব^রের এ বিবৃতিতে মালরো বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর আগেও মালরো স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে সম্মুখসমরে লড়াই করেছিলেন বিপ্লবীদের পক্ষে। এবার তিনি একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড তৈরি করার আহ্বান জানান। ২২ অক্টোবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মালরো বলেন, ‘ফাঁকা বুলি আওড়াবার অভ্যাস আমার নেই... ট্যাংক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমার আছে। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর অধীনে একটি ট্যাংক ইউনিটে অংশগ্রহণে আমি অটল।’ ১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে আসেন। ঢাকার বাইরে মালরো যান রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কাপ্তাইয়ে। ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি দেয়। বাংলাদেশ সফরে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পেয়েছিলেন অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী। ঢাকায় এসে তিনি শ্রদ্ধা জানান নির্মীয়মাণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে। দেখা করেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এসেছিলেন।  বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অঁদ্রে মালরোর সীমাহীন শ্রদ্ধা ছিল। বঙ্গবন্ধুকে তিনি তুলনা করেছেন বিখ্যাত বীর সালাদিনের সঙ্গে। বাংলাদেশের বন্ধু অঁদ্রে মালরো চিরদিন বাঙালির শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকবেন।

সর্বশেষ খবর