যুক্তরাজ্যের কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি সম্মানজনক ‘ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব লন্ডন’-এর স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গত মঙ্গলবার লন্ডনের গিল্ড হলে এক অনুষ্ঠানে উচ্চ আন্তর্জাতিক মর্যাদার এ সম্মাননা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। দ্য ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব লন্ডন হলো এমন একটি স্বীকৃতি যাতে তাঁর কর্মক্ষেত্রে সাফল্য, কমিউনিটিতে অবদান রাখার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। লন্ডন শহরের অনারারি ফ্রিডম হলো আজীবন কৃতিত্ব বা উচ্চ আন্তর্জাতিক মর্যাদার স্বীকৃতি। এটি লন্ডনের সর্বোচ্চ সম্মাননার স্বীকৃতি।
অনুষ্ঠানে ক্লার্ক টু দ্য চ্যাম্বারলেইন মুরে ক্রেইগের আহ্বানে ‘ডিক্লারেশন অব দি ফ্রিম্যান’ পড়তে দেন আহমেদ উস সামাদ চৌধুরীকে। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। পরে সপরিবারে উপস্থিত আহমেদ উস সামাদ চৌধুরীর হাতে সম্মাননাটি তুলে দেন ক্লার্ক টু দ্য চ্যাম্বারলেইন মুরে ক্রেইগ। সম্মাননা পাওয়ার পর আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। কোনো দিন কোনো পজিশন চাইনি। আমার এই সম্মাননা কমিউনিটির মানুষকে কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করবে- এটাই আমার চাওয়া। এ বিরল সম্মান তাদেরই দেওয়া হয়, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখেন। প্রায় ৩০০ বছর আগে চালু হয় এ সম্মানজনক পুরস্কার।’
ব্রিটেনের রাজপরিবারের ১১ জন সদস্য পেয়েছেন এ পুরস্কার। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, প্রিন্স জর্জ-ডিউক অব ক্যামব্রিজ, প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স চার্লস-প্রিন্স অব ওয়েলস, প্রিন্স অ্যাডওয়ার্ড-আর্ল অব ওয়াসেক্স প্রমুখ।
উচ্চ মর্যাদার এ পুরস্কার ব্রিটেনের বর্তমান রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয় এবং এলিজাবেথ প্রথম দুজনকেই দেওয়া হয়। তা ছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল, মার্গারেট থেচারসহ ডিউক অব ওয়েলিংটন, নেলসন ম্যান্ডেলা, জওহরলাল নেহরু, আর্চ বিশপ অব ক্যান্টারবেরি, জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনান পেয়েছেন এ পুরস্কার।
ফেঞ্চুগঞ্জের নূরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী। তার পিতা বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী ও মাতা মরহুমা আছিয়া আক্তার খানম চৌধুরী।
আহমেদ উস সামাদ নিজ গ্রামের দুর্গাপুর প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ফেঞ্চুগঞ্জ ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি হাই স্কুলে ও পিপিএম হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি চলে আসেন যুক্তরাজ্যে। ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী বাথ শহরের সিটি অব বাথ কলেজ থেকে ও-লেভেল পাস করার পর ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে প্রথম ভর্তি হন সাউথ ব্রিস্টল কলেজে এবং পরে এ বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রি শেষ করেন সিটি অব বাথ কলেজে। উভয় কলেজে তিনি স্টুডেন্ট ইউনিয়নে সহ-সভাপতি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চ শিক্ষা শেষ করেই আহমেদ চৌধুরী আত্মনিয়োগ করেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠায়। ১৯৯১ সাল থেকে ‘কমনওয়েলথ জাজেস অ্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাসোসিয়েশন’-এর আজীবন সদস্য আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী। তিনি ‘ব্রিটেন-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৯১ সালে ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্য থেকে ‘জাস্টিস অব পিস (জেপি)’ হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বাথ বেঞ্চের একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৭৫ সালে আহমেদ উস সামাদ ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে প্রথম এশিয়ান ছাত্র সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি নিজের নামে আর্থিক ঋণ নিয়ে ১৯৯০ সালে ব্রিস্টলে বাঙালি কমিউনিটির জন্য প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ হাউস এবং ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সেন্টার। তিনিই প্রথম বিলাতে ব্রডশিট মাল্টিকালার পত্রিকা প্রকাশ করেন।
২০০২ সালে ব্রিস্টলে নান্দনিক শাহজালাল ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড মসজিদ প্রতিষ্ঠায় ছিল অসামান্য অবদান। তিনি ১৯৯৫ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নিউ ডিল প্রোগ্রামের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
