আধুনিক মৎস্য চাষকে সহজ করতে ‘পন্ডগার্ড’ নামের একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন চুয়াডাঙ্গার তরুণ উদ্ভাবক আহমেদুল কবীর উপল। এর ফলে দেশের মৎস্যচাষে যান্ত্রিকীকরণ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। কমে আসবে শ্রমিক নির্ভরতা। সাশ্রয় হবে খরচ। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় যন্ত্রটি মৎস্যচাষীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া গেলে মাছ উৎপাদনে আরও সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের নিভৃত মাঠের একটি পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে ‘পন্ডগার্ড’ নামের যন্ত্রটি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের অল্প সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গেই পাহারায় আছে যন্ত্রটি। দিনে রাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
উদ্ভাবক আহমেদুল কবীর উপল জানান, আইপি ক্যামেরা, ব্যাটারি, সোলার প্যানেলের সঙ্গে কিছু যন্ত্র আর অ্যাপভিত্তিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ‘পন্ডগার্ড’। যন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সোলার সিস্টেম। যন্ত্রটি নিভৃত পল্লীতে থাকা মাছের খামারের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা যাবে। বাড়িতে বসেই দূরের মৎস্য প্রকল্পে করা যাবে নজরদারি। ফলে কমে আসবে শ্রমিক নির্ভরতা।
উদ্ভাবকের মতে, বর্তমানে যন্ত্রটি কেবল নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর হবে। পরবর্তীতে এটি আরও উন্নয়নের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাছের খাবার প্রদান করবে। একই সঙ্গে পানির গুণগত মান নির্ণয় এবং ব্যবহারকারীকে বার্তা প্রেরণ করবে; যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সারা দেশের পানি গবেষণায়ও কাজে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বাসিন্দা কণিকা মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী মো. নূর আলম লিটন ব্যবহার করছেন উপলের উদ্ভাবিত ‘পন্ডগার্ড’ যন্ত্রটি। তিনি জানান, জয়রামপুর গ্রামের নিভৃত মাঠে তাদের মৎস্য প্রকল্পে ‘পন্ডগার্ড’ ব্যবহার করা হয়েছে। পুকুরটি দুর্গম মাঠে হওয়ায় আগে নিয়মিত সেখানে দেখাশোনা করা যেত না। এখন বাড়িতে বসেই সার্বক্ষণিক পুকুরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।
পুকুরে নিরাপত্তার দায়িত্বরত আক্কাস আলী জানান, কণিকা মৎস্য খামারে তারা দুজন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন। এতে তাদের খানিকটা হিমশিম খেতে হতো। বর্তমানে ‘পন্ডগার্ড’ স্থাপনের পর থেকে তাদের দায়িত্ব পালন অনেকাংশে সহজ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যন্ত্রটি প্রথম দেখে তারা উৎসুক হয়ে ওঠেন। পরে তারা এর উপকারিতা জানতে পারেন। তাদের মতে, যন্ত্রটি বেশ উপকারী।
উদ্ভাবকের মতে, ‘পন্ডগার্ডে’ ব্যবহৃত লাইটগুলো আলোকফাঁদ হিসেবে কাজ করছে। এতে একদিকে জলাশয়-সংলগ্ন জমির কীটপতঙ্গ বিনা খরচে নিধন হচ্ছে, অন্যদিকে মাছের প্রোটিনের চাহিদাও মিটছে বিনামূল্যে। ভবিষ্যতে ‘পন্ডগার্ড’ ব্যবহারের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কৃষি প্রকল্প গড়লে কীটনাশকের ব্যবহার ও খরচ কমে আসবে। আহমেদুল কবীর উপল জানান, তিনি ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী যন্ত্র উদ্ভাবন করে নীতিনির্ধারকদের নজরে এসেছেন। তার উদ্ভাবিত ‘সোলারবোট’ সরকারের এটুআই প্রকল্পে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।