শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও প্রবীণদের ভরসা ‘আমাদের বাড়ি’

সাইফুল ইসলাম, যশোর

সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও প্রবীণদের ভরসা ‘আমাদের বাড়ি’

অসচ্ছল, নিঃসঙ্গ প্রবীণ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একই ছাতার নিচে এনে স্বাভাবিক ও উন্নত জীবন যাপনের নিশ্চয়তা প্রদানের ধারণা থেকেই তৈরি ‘আমাদের বাড়ি’। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থা জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরের প্রত্যন্ত গ্রাম নাটুয়াপাড়ায় সর্বাধুনিক সুবিধা সংবলিত চারতলা এ বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে।

২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ‘আমাদের বাড়ি’তে একই সঙ্গে ১৫০ জন প্রবীণ ও শিশু বসবাস করতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘আমাদের বাড়ি’ তৈরিতে খরচের ৮০ শতাংশ দিয়েছে সরকার। বাকি ২০ শতাংশ জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের। এখানে বসবাসের জন্য ইতোমধ্যেই ৭০ জনের ডাটাবেট তৈরি করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের চুক্তি অনুযায়ী ‘আমাদের বাড়ি’তে অবস্থানকারী প্রবীণ ও শিশুদের ৩০ শতাংশ বিনামূল্যে রাখা হবে। বাকি ৭০ শতাংশ থাকবে যৌক্তিক মূল্যে। এটি সম্পূর্ণ অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সে কারণে দানশীলরা এখানে আর্থিক সহায়তা করতে পারবেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এ সহায়তার অর্থ সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকবে।

জিএমএসএস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রফেসর ডা. এম এ রশিদ বলেন, গ্রামগঞ্জের বহু পরিবারের ছেলে-মেয়েরা কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে বড় বড় শহরগুলোতে চলে যাচ্ছেন। অনেকে চলে যাচ্ছেন বিদেশেও। এসব পরিবারের প্রবীণরা বাড়িতে একা হয়ে যাচ্ছেন। তাদের দেখাশোনা করার কেউ না থাকায় অবহেলায় অযতেœ দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও অবহেলার শিকার হচ্ছে। এক পর্যায়ে খুব সহজেই তারা বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে।

ডা. এম এম রশিদ বলেন, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া এসব প্রবীণ এবং শিশুদের একই ছাতার নিচে এনে ‘আমাদের বাড়ি’তে যতেœর সঙ্গে গড়ে তোলা হবে। এখানে তারা যে কেবল শুয়ে, বসে সময় কাটাবে আর খাবে, ব্যাপারটা তেমনও নয়। এখানকার বাসিন্দাদের সবার জন্য রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ‘আমাদের বাড়ি’ কম্পাউন্ডের চারপাশে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, মহিলা মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে শিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রবীণদের জন্য এই কম্পাউন্ডেই কৃষিকাজ, বাগান করা, পোলট্রি, গরু-ছাগলের খামার, এমনকি মাছ চাষের মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ থাকছে। সবার জন্যই থাকছে শরীরচর্চা ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ। থাকছে ইসিজি, এক্সরেসহ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, বার্ষিক স্বাস্থ্য চেকআপের সুবিধা। জরুরি প্রয়োজনে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে শহরের দুটি বড় হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

অনন্য এই ‘আমাদের বাড়ি’ গত শনিবার উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী, যশোর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ‘আমাদের বাড়ি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর