শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রাকেশের পকেট নেবুলাইজার

নাটোরের শিক্ষার্থী রাকেশ সাহা নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করেছে পকেট নেবুলাইজার। মাস্কের ভিতরে এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করায় এটি বুক পকেটে রেখে সব সময় বহন করা যায়।

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

রাকেশের পকেট নেবুলাইজার

নিজের প্রচেষ্টায় যে সবকিছু করা সম্ভব এমনটাই প্রমাণ করল নাটোরের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাকেশ সাহা। স¤পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে  সে উদ্ভাবন করেছে পকেট নেবুলাইজার। মাস্কের ভিতরে এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করায় এটি বুক পকেটে রেখে সব সময় বহন করা যায়। সে সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। এ বছর ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করে সিংড়া উপজেলা থেকে প্রথম স্থান, নাটোর জেলা থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জনসহ বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অংশগ্রহণ করে সিংড়া উপজেলা থেকে ‘সেরা মেধাবী’ শিক্ষার্থীর পুরস্কার লাভ করেছে। রাকেশ সাহা জানায়, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন ইলেকট্রিক প্রকল্প উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নের পেছনে ব্যয় করি। আমি ইলেকট্রনিকস ও রোবটিকস সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। সব সময় আমার স্বপ্ন আমি ব্যবহারযোগ্য কিছু উদ্ভাবন করব। সে চিন্তা থেকেই মাথায় এলো সহজলভ্য এবং সহজে বহনযোগ্য সাশ্রয়ী মূল্যের পকেট নেবুলাইজার মেশিন তৈরির কথা। আমি খুশি যে নিজে কিছু উদ্ভাবন করতে পেরেছি। করোনার সময় অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। এ ছাড়া অনেক মানুষ নিয়মিত শ্বাসকষ্টে ভোগে। কিন্তু শ্বাসকষ্টের রোগীদের অনেকেরই ব্যক্তিগতভাবে নেবুলাইজার মেশিন কেনার সামর্থ্য নেই। এ ছাড়া নেবুলাইজার মেশিনগুলো আমাদের দেশে তৈরি হয় না। নেবুলাইজার মেশিনের বেশির ভাগই চীন থেকে এ দেশে আমদানি করতে হয়। বাজারে অথবা হাসপাতালে যে নেবুলাইজার মেশিন ব্যবহার হয় তা আকারে সাধারণত বড় হয়ে থাকে। যা বাংলাদেশে তৈরি হয় না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। একটি নেবুলাইজার মেশিনের দাম ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। যা অনেক ব্যয়বহুল। তাই আমি এ বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করলাম। গুগল-ইউটিউব সব জায়গায় আমি নেবুলাইজারের বিস্তারিত তথ্য খুঁজতে লাগলাম। কেউ কি সব থেকে ছোট নেবুলাইজার মেশিন বানিয়েছে? দেখলাম ছোট নেবুলাইজার মেশিন যন্ত্র কেউ আবিষ্কার করেনি। আর যেসব যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে তা খুব একটা সাশ্রয়ী নয় এবং খুব একটা ছোটও নয়। তখনই মাথায় আইডিয়াটা আসে। বিষয়টি আমি সঙ্গে সঙ্গে তরুণ উদ্ভাবক জয় বড়ুয়া দাদাকে জানালাম। দাদা আমাকে অনুপ্রেরণা এবং সাহস দিলেন। আমি কাজ শুরু করে দিলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করলাম। কাজ শুরু করলাম একটা নেবুলাইজার মেশিন তৈরির। মাত্র তিন দিনের ভিতর আমার কাক্সিক্ষত যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হলাম। আমি নিজেই একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। গত কয়েক বছর ধরে শ্বাসকষ্টের জন্য আমি কলকাতায় চিকিৎসা করাচ্ছি। আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। আমার ইনহেলারটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর এটি ব্যবহার করে আমি ভালো ফল পাচ্ছি।’

এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি বড় মেশিনের মতো শব্দ সৃষ্টি হয় না। এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি তৈরি করতে আমার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে।

রাকেশ জানায়, ‘আমার তৈরি এই ছোট মিনি পকেট নেবুলাইজারটি বেশ কাজে দিচ্ছে। বড় নেবুলাইজার মেশিনগুলো ব্যবহার করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হয় এবং এসব মেশিন থেকে অনেক শব্দ সৃষ্টি হয়। আমার তৈরি এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি ছোট, দেখতে সুন্দর এবং পকেটে বহনযোগ্য। এমনকি রিচার্জেবল হওয়ায় এটি ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন নেই। আমার তৈরি এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি বড় মেশিনের মতো শব্দ সৃষ্টি হয় না। এই পকেট নেবুলাইজার মেশিনটি তৈরি করতে আমার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। ফলে এটি আমি অনেক কম খরচেই তৈরি করে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে সক্ষম।’

 সে জানায়, ‘যেহেতু একটি পকেট নেবুলাইজার মেশিন কিনতে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগছে। এতে বাইরের দেশ থেকে বড় বড় নেবুলাইজার মেশিনের আমদানি কমিয়ে আমাদের দেশীয় পণ্য তথা আমার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পকেট নেবুলাইজার মেশিন উৎপাদন করে এবং সাধারণ জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হবে।’

দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভোগা স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘রাকেশের তৈরি নেবুলাইজার মেশিন আমি ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছি। এটা বড় মেশিনের মতোই কাজ করে। পকেটে রেখে ব্যবহার করা যায়। এটা সত্যিই একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।’

রাকেশের দাবি, এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে খুব বেশি খরচ হবে না। স্বল্প খরচের এই প্রযুক্তিটি সে দেশের কল্যাণের জন্য সরকারকে দিতে চায়। রাকেশ সাহা সিংড়া পৌর শহরের মাদারীপুর মহল্লার মুদি দোকানি রতন কুমার সাহা ও গৃহিণী শ্রীবানী সাহার একমাত্র ছেলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর