শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
মানবসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত

১৩০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের রেকর্ড ডা. কামরুলের

শনিবারের সকাল ডেস্ক

১৩০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের রেকর্ড ডা. কামরুলের

অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে কিংবদন্তিতুল্য চিকিৎসক। গত ১৫ মার্চ তিনি স্পর্শ করেছেন নতুন এক মাইলফলক। গড়েছেন একাই ১ হাজার ৩০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের নজির। রাজধানীর শ্যামলীতে নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে এক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ কীর্তি গড়েন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফাহিম হোসেনের (২৪) কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই কীর্তি গড়ল সিকেডি। ছয় মাস আগে তার কিডনিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দুটি কিডনি বিকল পাওয়া যায় তার। ছেলের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মা ফাতেমা বেগম। সরকারি হাসপাতালে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের সংখ্যা অতি নগণ্য, সেখানে সিকেডিতে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে ৫ লাখ টাকার নিচে মিলছে না কিডনি প্রতিস্থাপন সেবা, সেখানে মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় প্রতিস্থাপন করছে সিকেডি। 

শুধু চিকিৎসক হিসেবে নন, ডা. কামরুল পরিচিত তার মহানুভবতার জন্যও। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিকই নেন না। সিকেডি হাসপাতালে খরচও ন্যূনতম। রোগীদের ফলোআপে উৎসাহিত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট দেখার ফি নেওয়া হয় না। এ ছাড়া খরচ কমাতে কিডনি সংরক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা এক ধরনের দামি তরলের বিকল্প তৈরি করেছেন তিনি। কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলে সিকেডি হাসপাতালেই তার ব্যবস্থা আছে। আছে ২২ বেডের একটি ডায়ালাইসিস ইউনিট। খরচ দেড় হাজার টাকা। আইসিইউ শয্যার খরচ ৭ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। অনেকেই বলেন, বর্তমান সময়ে ডা. কামরুল ইসলাম কাজের পরিধির মধ্যে সুশৃঙ্খলতা আনয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। সিকেডি হাসপাতাল ছাড়াও জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালসহ অন্যান্য কর্মস্থলে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ডাক্তার অধ্যাপক কামরুল ইসলাম চিকিৎসা দেন, রোগীকে মানসিক ভরসাও দেন।

মানবসেবার মহান ব্রত থেকেই চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। পেছনে ছিল মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পিতার অনুপ্রেরণা। সেই পথ ধরে নিজের পেশাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মানুষের কল্যাণে। তিনি মনে করেন অর্থ উপার্জন করাই সফলতা নয়, বরং একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারলেই আসল সার্থকতা। ছাত্রজীবন থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিলেন ডা. কামরুল ইসলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ঈর্ষণীয় রেজাল্ট করে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। ইন্টার্নির সময় পাওয়া অর্জিত অর্থ রেখে দিয়েছিলেন এফসিপিএস করার জন্য। তিনি বলেন, ছাত্রাবস্থায় জ্ঞান উপার্জন প্রয়োজন, অর্থ উপার্জন নয়। ডাক্তারিতে উচ্চতর পড়াশোনায় আর গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন তিনি। আর সাফল্য এখন আমাদের চোখের সামনে। নিজের পেশার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সুবিচার করেছেন তিনি। দেশের দরিদ্র কিডনি রোগীদের জন্য নামমাত্র মূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য তৈরি করেছেন বিশেষায়িত  প্রতিষ্ঠান। গরিব রোগীদের কমমূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন কামরুল ইসলাম। দেশে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন হয় ১৯৮২ সালে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজারের মতো কিডনি প্রতিস্থাপন       হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কিডনি একাই প্রতিস্থাপন করেছেন ডা. কামরুল। চিকিৎসাবিদ্যায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০২২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর