শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের বাউকসার জমিদার বাড়ি

চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকালে বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। বাড়ি ও মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি সংরক্ষণ করে প্রত্ন পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ঐতিহ্যের বাউকসার জমিদার বাড়ি

বাউকসার জমিদার বাড়ি। প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন। খসে পড়ছে বাড়ির ইট। কয়েকটি ভবনের দেয়াল কোনো রকমে টিকে আছে। বাড়ির সামনে আছে প্রাচীন নান্দনিক মসজিদ। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় এই বাড়ির অবস্থান। স্থানীয়দের দাবি, বাড়িটি সংস্কার হলে এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা হবে। এদিকে এই বাড়িকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে একটি প্রত্ন পর্যটন কেন্দ্র।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কয়েকটি ভবন। কোনোটির দেয়াল আছে। কোনোটির দেয়াল নেই। নেই সীমানা প্রাচীর। একটি ভবন কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বয়স্ক দেয়ালে বটবৃক্ষ তার শেকড় গজিয়েছে। বাড়ি লাগোয়া মসজিদটি দর্শনীয়। এটি বাড়ির ঐতিহ্য অনেকটা ধরে রেখেছে। বাড়ির প্রথম পুরুষের নাম স্থানীয়রা কেউ জানেন না। তবে লাকসামের নওয়াব ফয়জুন্নেছার স্বামী মাহমুদ গাজী চৌধুরীর নামে এই বাড়ি বেশি পরিচিত বলে তারা জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল লতিফ বলেন, এই বাড়িটি এলাকার ঐতিহ্য। এটি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। এই বাড়িকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।

বাড়ির মোতাওয়াল্লি সৈয়দ মো. কামরুল হক বলেন, ‘বাউকসারের বাড়িটি নওয়াব ফয়জুন্নেছার স্বামী গাজী চৌধুরীর বাড়ি। আমরা ফয়জুন্নেছার বংশের পঞ্চম পুরুষ। বাউকসারের বাড়ির মোতাওয়াল্লি ছিলেন আমার চাচা। তার মৃত্যুর পর আমার ওপর দায়িত্ব আসে। বাড়ির ভবন বলতে তেমন কিছু নেই। সেখানে তেমন যাওয়া হয় না। বাড়ির মসজিদটি টিকে আছে। সেটি সংস্কার করেছি। বাড়িটি সংস্কার হলে এলাকার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা হবে। বেঁচে থাকবে নওয়াব ফয়জুন্নেছা ও গাজী চৌধুরীর স্মৃতি।’

ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘চান্দিনার মহিচাইল থেকে লাকসামে গিয়েছেন ফয়জুন্নেছার পূর্বপুরুষরা। সেখান থেকে একটি অংশ বরুড়ার বাউকসার গেছেন। এই বাড়ির গোড়াপত্তন করেন ইমাম বখশ গাজী চৌধুরী। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ও গাজী চৌধুরী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। গাজী চৌধুরী ধনী জমিদার ছিলেন। তিনি দাতা ছিলেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছার অনুরোধে কুমিল্লা নগরীর চর্থায় সংগীতসাধক শচীন দেব বর্মণের পরিবারকে থাকার জন্য ভূমি দিয়েছিলেন গাজী চৌধুরী। বাউকসার জমিদারবাড়িটি সংস্কার করে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’

বরুড়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাউকসার জমিদারবাড়ি বরুড়ার একটি ঐতিহ্যের অংশ। বাড়ির মসজিদের সংস্কারের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বাড়ির সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে জানাব।’

চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকালে বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। বাড়ি ও মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি সংরক্ষণ করে প্রত্ন পর্যটনে রূপ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর