শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
দেশের রাস্তায় পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি
জামশেদ আলম রনি
► টেসলা, অডি, মার্সিডিজ কিংবা পোরশে ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির দেখা মিলছে দেশের রাস্তায়
► বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সংকট মোকাবিলায়ও ভূমিকা রাখবে
► আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ এ খাত সংশ্লিষ্টদের
সারা বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বেড়েই চলছে। এটি গ্যাস ও তেলচালিত গাড়ির তুলনায় পরিবেশের অনেক কম ক্ষতি করে। এই গাড়ি থেকে পরিবেশে কার্বন ও ধোঁয়া নির্গমন হয় অনেক কম। এ ছাড়া পেট্রল নিষ্কাশন ও পরিশোধন করতে যে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ হয়, সেটিও পরিহার করে বৈদ্যুতিক গাড়ি। বৈদ্যুতিক গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত টেসলা। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় এই বৈদ্যুতিক গাড়ি এখন চলছে বাংলাদেশের রাস্তায়। সংখ্যায় কম হলেও পথ চলতে যে কারও নজরে পড়তে পারে এ ধরনের গাড়ি। তবে টেসলা ছাড়াও ইউরোপের অডি, মার্সিডিজ কিংবা পোরশে ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়িরও দেখা মিলছে দেশের রাস্তায়। প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেড অডির পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক গাড়ি ই-ট্রন বাজারজাত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাজারে অডির একমাত্র পরিবেশক। বৈদ্যুতিক গাড়ি ই-ট্রন একবার চার্জ দিলে চালানো যায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। গাড়ি স্টার্ট নেওয়ার পর খুব অল্প সময়ে এর গতি বাড়ানো যায়। বাংলাদেশের বাজারে অডির বৈদ্যুতিক গাড়ি ই-ট্রন নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রোগ্রেস মোটরস ইম্পোর্টস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান সাফায়েত বিন তৈয়ব। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, বায়ুদূষণের এই শহরে ইলেকট্রিক গাড়ি যেন আশীর্বাদ। ইলেকট্রিক গাড়ি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না। অল্প বিদ্যুৎশক্তিতে চলে। গাড়ি চালাতে ফুয়েল বা ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। বায়ুদূষণ হয় না। অনেক সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এই গাড়ি। গাড়ি কোনো কার্বন নিঃসরণ করে না। অডি ই-ট্রনে আছে ৩৬০ ডিগ্রি সারাউন্ড ভিউ
ক্যামেরা, প্যানারোমিক সানরুফ, অ্যাডাপটিভ এয়ার সাসপেনশন। তা ছাড়া আছে ৩১৩ হর্স পাওয়ার ও ৫৪০ নিউটন-মিটার টর্কের সম্পূর্ণ দুটি ইলেকট্রিক্যাল মোটর, যা গাড়িটিকে শূন্য থেকে ১০০ কিলো বা ঘণ্টায় গতিবেগ ৭ সেকেন্ডে তুলতে সাহায্য করে। আরও আছে প্রিমিয়াম ভালকোনা লেদার সিট ও ব্যাং, ওলুফসেনের প্রিমিয়াম সাউন্ড সিস্টেমও রয়েছে।
কবে চালু হলো : অডি ই-ট্রন হলো একটি সর্ব-ইলেকট্রিক এসইউভি, যা ২০১৯ সালে প্রথম চালু করা হয়। এরপর থেকে মডেলটি আপডেট করা হয়েছে। অডি ই-ট্রনে কিছু আধুনিক প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে। যেমন : ডুয়াল-মোটর সিস্টেম। এর ফলে অল-হুইল ড্রাইভের সুবিধা পাওয়া যায় এবং ৩১৩ হর্স পাওয়ার ও ৫৪০ নিউটন-মিটার টর্ক সরবরাহ করে। দ্রুত চার্জিং সিস্টেম ব্যবহার করে চার্জ করা যায়। যার ফলে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ৮০ শতাংশ চার্জ হয়। এ ছাড়া ই-ট্রনে অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, লেন ডিপার্চার ওয়ার্নিং এবং স্বয়ংক্রিয় জরুরি ব্রেকিংসহ এডিএএস বৈশিষ্ট্যগুলোর সংযোগ রয়েছে। ই-ট্রনে অডির ভার্চুয়াল ককপিটও আছে। একটি ডিজিটাল যন্ত্র ক্লাস্টার, যা একটি উচ্চ-রেজুলেশন স্ক্রিনে গতি, পরিসর এবং নেভিগেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করে। রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম থাকায় ব্রেক করার সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া শক্তি ক্যাপচার করে এবং ব্যাটারি রিচার্জ করতে ব্যবহার করে। সামগ্রিকভাবে অডি ই-ট্রন প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বৈদ্যুতিক এসইউভি। বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা : বৈদ্যুতিক গাড়ি অডি ই-ট্রনে রয়েছে আট বছরের ব্যাটারির ওয়ারেন্টি। এ ছাড়া রয়েছে দুই বছরের ম্যানুফ্যাকচারিং ওয়ারেন্টি। পাঁচ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি বাড়ানোর সুযোগও আছে। এই গাড়িগুলোর মেইনটেন্যান্স খরচ তেলের ইঞ্জিনের গাড়ির তুলনায় কম। অন্য সব গাড়ির মতো অডি ই-ট্রন গাড়ির জন্য ছয় মাস পর জেনারেল সার্ভিসিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জেনারেল সার্ভিসিংয়ে শুধু ফিল্টার পরিবর্তন এবং ব্রেক ও ব্যাটারি চেকআপ করতে হয়। ইঞ্জিন তেল ও ট্রান্সমিশন-সংক্রান্ত কোনো পার্টস এই গাড়িতে না থাকায় জেনারেল সার্ভিসিংয়ে বড় খরচ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অডি ই-ট্রনে রয়েছে ৭১ কিলোওয়াট ঘণ্টার ব্যাটারি। এক চার্জে একজন ব্যবহারকারী ৩০০ কিলোমিটার চালাতে পারবেন। অডি ই-ট্রনের সঙ্গে একটি ১১ কিলো ওয়াটের (৩ ফেজ ১৬ অ্যাম্পিয়ার ৪০০ ভোল্ট) ই-ভি চার্জার আছে, যা দিয়ে গাড়িটি শূন্য থেকে সম্পূর্ণ চার্জ করতে ৮ ঘণ্টা লাগবে। অর্থাৎ একজন ব্যবহারকারী এক রাতের পুরো চার্জে ৩০০ কিলোমিটার চালাতে পারবেন। একটি ৩ ফেজের বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে গাড়িটি চার্জ করতে পারবেন। তা ছাড়া অডি সার্ভিস সেন্টারে ৬০ কিলোওয়াটের দ্রুতগতির চার্জার রয়েছে, যা দিয়ে একটি অডি ই-ট্রন ৪০ মিনিটে পুরো চার্জ করা যাবে। ঠিক এ রকম এবং এর চেয়ে আরও বড় চার্জার সারা দেশে স্থাপন করা হচ্ছে। বিলাসবহুল এই গাড়ির দাম ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা অতিরিক্ত শুল্কহার। সেজন্য এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে সরকারি শুল্ক আরও সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া, দ্রুত চার্জিং স্টেশন অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের সহায়তা কামনা করেন তারা। এতে করে মানুষ এ ধরনের গাড়ি ব্যবহারে আরও আগ্রহী হবে বলে অভিমত তাদের।