মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের তৈরি যত রোবট

সারা বিশ্বে প্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়ে। আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এখন তৈরি করছেন হরেক রকম রোবট। যাদের কোনোটা কথা বলে বাংলায়, কোনোটা ইংরেজিতে। হাত নাড়িয়ে সম্বোধন থেকে শুরু করে করমর্দন এমনকি বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে দেয় নানা প্রশ্নের উত্তরও। দেশের তারুণ্যের এমন কিছু উদ্ভাবন থাকছে এই ফিচারে।

বাংলাদেশের তৈরি যত রোবট

প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের তারুণ্য উদ্ভাবন করছে দারুণ সব রোবট। শুধু দেশের মাটিতেই সমাদৃত হচ্ছে না, বহির্বিশ্বেও বেশ প্রশংসিত হচ্ছে এসব উদ্ভাবন। বাংলাদেশে তৈরি বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনী রোবট মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-রোবট লি, ‘আফরিন’, ‘মি. টিভেট’, ‘আলপনা’, ‘মাইশা’, ‘আরমিনা’। এ ছাড়াও রয়েছে ডুবুরি রোবট, ফায়ার ফাইটিং রোবট, সকার রোবট, ড্রোন এবং ব্যালান্সিং রোবটের। এসব ছাড়াও দেশের তারুণ্য বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও কিছু রোবট উদ্ভাবন করে যা কিনা শুধু দেশের মাটিতেই সমাদৃত নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সমানভাবে প্রশংসিত। বাংলাদশের প্রযুক্তিগত এসব সমসাময়িক রোবট উদ্ভাবন নিয়েই আমাদের এই ফিচার।

 

পূর্ণাঙ্গ রোবট লি

পাঁচ শিক্ষার্থীর দল ফ্রাইডে ল্যাবের উদ্ভাবন দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রোবট লি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা সরকারি সহায়তায় এটি উদ্ভাবন করেন। বাংলায় কথা বলা হিউম্যানয়েড রোবটটি দেখতে অনেকটা মানুষের মতো। দুই পায়ে হাঁটা, বাংলায় কথা বলা, বাংলা ভাষা বুঝতে পারা এমনকি বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনেক প্রশ্নেরও উত্তর দিতে সক্ষম এটি। মানুষের চেহারাও ভোলে না। দর্শকদের সঙ্গে করমর্দন ও স্যালুটও করে লি। রোবটটির উদ্ভাবক দলের নেতৃত্বে ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নশাদ সজীব। রোবটটি উদ্ভাবনে সহায়তা করেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সাইফুল ইসলাম, আর্কিটেকচার বিভাগের মেহেদী হাসান রূপক এবং মেকানিক্যাল বিভাগের জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি ও সমিউল হাসান।

 

অ্যাসিসট্যান্ট রোবটমি. টিভেট

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) আইওটি অ্যান্ড রোবটিকস রিসার্স ল্যাবের তিন উদ্ভাবক প্রদর্শনীতে ‘মি. টিভেট’ নামের একটি হোম অ্যাসিসট্যান্ট রোবট প্রদর্শন করেন। টানা দুই বছর গবেষণা শেষে উদ্ভাবনী দল এই হিউম্যানয়েড রোবটটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিসত্তাসম্পন্ন এই রোবটটি কথা বলতে পারে, হাত নাড়িয়ে অভিবাদন জানাতে পারে। করতে পারে টুকটাক কাজও। শব্দের উৎস শুনে ঘাড় নাড়িয়ে তাকাতেও পারে। রোবটটি হোম অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে (রান্নায় রাঁধুনিকে সহায়তা, রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন এবং হাসপাতালের রোগীকে দেখভাল করা ইত্যাদি) কাজে লাগানো সম্ভব বলে মনে করেন উদ্ভাবক দলের প্রধান ফরিদ হোসেন। রোবটটি উদ্ভাবক দলের সদস্য হিসেবে কাজ করেন আবদুল্লাহ আল আরাফাত এবং রাহাত উদ্দিন।

 

প্রথম ওপেনসোর্স হিউম্যানয়েড রোবট

কুমিল্লার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মিয়া-১ নামের হিউম্যানয়েড রোবট উদ্ভাবন করেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম ওপেনসোর্স হিউম্যানয়েড রোবট বলে দাবি করে উদ্ভাবক দলের প্রধান আশরাফুর রহমান মিনহাজ। রোবটটির বুকে ৭ ইঞ্চি টাচ স্ক্রিন এলসিডি মনিটর রয়েছে, যার মাধ্যমে একজন ইউজার সহজে রোবটটিকে কমান্ড করে তার কাছ থেকে তথ্য জেনে নিতে পারবে। রোবট মিয়া-১ মুখে কথা বলার পাশাপাশি তার মনিটরে সংশ্লিষ্ট ছবিও প্রদর্শন করবে। রোবটটির চোখে অত্যাধুনিক ক্যামেরা সংযুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এটি দেখতে পারবে। এটি টিচিং ও রিসিপশনের কাজ করতে পারবে। মিয়া-১ রোবটটি উদ্ভাবক দলের দুই শিক্ষার্থী হলেন- ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুর রহমান মিনহাজ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদা আফরীন।

 

অভিযোগ জানাবে আলপনা

সমাজ আজ অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভরপুর। চোখের সামনে এমন অনিয়ম দেখেও নিরাপত্তার ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে নারাজ। এসব কথা চিন্তা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল শিক্ষার্থী রোবটটি উদ্ভাবন করেন। রোবট আলপনা অভিযোগ জানাবে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রেখেই। আলপনা একটি হিউম্যানয়েড রোবট। এটি শুধু অভিযোগ গ্রহণ ও প্রেরণই করবে না বরং অভিযোগ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনও তৈরি করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন সহ-উদ্ভাবক ফারহান আহমেদ। উদ্ভাবক দলের আরও দুই সদস্য হলেন- নাহিদ হাসান ও রবিন হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন শিক্ষার্থীর স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘লেজারাস রোবোটিকস’ থেকে আলপনাকে তৈরি করে। রোবট আলপনা স্বাভাবিক মানুষের মতো বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে।

 

রোবট আফরিন

রোবট আফরিন একটি হিউম্যানয়েড রোবট। কথা বলার পাশাপাশি চোখ পিট পিট করে ডানে-বামে তাকাতে পারে আফরিন। দর্শনার্থীদের উপহার দিতে পারে এক চিলতে হাসিও। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তর দিতেও সক্ষম এই রোবট। আইসিটি বিভাগের এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের ‘আই ল্যাব’-এর সহযোগিতায় এক দল উদ্ভাবক রোবটটি উদ্ভাবন করে। উদ্ভাবনী প্রকল্পের পরিচালক ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শুরুতে আফরিনকে নারীর আদলে অর্ধেক অবয়ব দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এর পূর্ণাঙ্গ অবয়ব দেওয়া হবে। তখন এটি হাঁটাহাঁটিও করতে পারবে।’

 

কুবির রোবট সিনা

অবিকল মানুষের মতো কথা বলে, গানের তালে নাচে, গান গায়, নতুন অতিথি এলে হাত নেড়ে অভ্যর্থনাও জানায় রোবট সিনা। করমর্দন করতে চাইলে হাত বাড়িয়ে দেয়। চলতে পারে সামনে-পেছনে। প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে তার উত্তরও দিতে পারে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) অর্থায়নে রোবট সিনাকে তৈরি করা হয়েছে। তিন মাসের পরিশ্রমে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে রোবট সিনা। রোবটটি তৈরি করতে কাজ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সঞ্জিত মন্ডল। তার সঙ্গে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র সাইয়্যেদুর রহমান এবং আইসিটি বিভাগের ছাত্র জুয়েল নাথ।

 

প্রথম বাংলাভাষী রোবট

বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী রোবট এটি। সোশ্যাল হিউম্যানয়েড এই রোবটটি মানুষের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা এবং বাংলায় লিখতে পারাসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দিতে পারে। ‘রিবো’ বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল রোবটও। ‘রিবো’র কারিগর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ স্বপ্নবাজ তরুণ এই রোবটটি উদ্ভাবন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তারা। ‘প্রজেক্ট রিবো’র পুরো তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাবির সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাফর ইকবাল এবং টিম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন।

 

বাংলাদেশি তরঙ্গের তারু

তারু একটি হিউম্যানয়েড সোশ্যাল রোবট। কাঠামো মানুষের মতোই। ওটা থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি। ভয়েস শনাক্ত করে বিভিন্ন কাজ করতে পারে তারু। আরেকটি বড় দিক হচ্ছে, এর সঙ্গে কথা চালিয়ে নেওয়া যায়। কথা বলার সময় হাতও নাড়ায় এটি। তবে তারু ইংরেজিতে কথা বলে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এসএস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইয়্যেদুল মোস্তায়িন তরঙ্গ এই রোবটটির উদ্ভাবক। দুই ফুট উচ্চতার রোবটটি প্রথমে রান্নাঘর থেকে পানি এনে দেওয়ার মতো কাজগুলো করত। এখন এটি অনেক কাজ করতে পারে। রোবটটির জন্যই আলাদা অ্যাপ্লিকেশন বানিয়েছে তরঙ্গ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর