শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানবতাবাদী পিতার মমতাময়ী কন্যা

এ এস এম মাকসুদ কামাল

মানবতাবাদী পিতার মমতাময়ী কন্যা

যাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মহান মানবতাবাদী, যিনি পিতার কাছে ছিলেন অতি আদরের ‘হাচু’- তিনি যে পিতৃ-আদর্শেই বড় হবেন তা বলাই বাহুল্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা শেখ হাসিনা মানবিক বিশে^র রোল মডেল হিসেবে আজ সমাদৃত। অসহায় মানুষের হৃদয়ের বেদনা তিনি অনুভব করেন। বিলাসব্যসনহীন সহজ-সরল জীবনযাপন শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর মানবিক চিন্তার একটি সুস্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা যায় স্বীয় কন্যা শেখ হাসিনার জীবন ও কর্মের বিশ্লেষণে।

মাদার তেরেসার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালের ৩ জুলাই ‘মাদার তেরেসা সেন্টার’-এর পরিচালক সিস্টার প্রেমার নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিস্টার প্রেমা মাদার তেরেসার সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি ছবির অ্যালবাম তাঁকে উপহার দেন। তিনি শেখ হাসিনার মানবিক গুণাবলির প্রশংসা করে বলেন, ‘মাদার তেরেসার মানবিক গুণাবলি ও কর্মকান্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনার অনেক মিল রয়েছে।’

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে স্বজন হারানো দুই বোনসহ মোট তিন মেয়েকে (রুনা-রত্না-শান্তা) নিজের মেয়ে হিসেবে বুকে টেনে নিয়ে এক অসাধারণ মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। স্বজন হারানোর ব্যথা তিনি নিজে উপলব্ধি করেন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। শেখ হাসিনা নিজে গণভবনে অনুষ্ঠান করে স্বজনহারা মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। বর-কনের উপহারসামগ্রী, ঘর সাজানোর সবকিছুই দেওয়া হয়। তিনি নিয়মিত তাদের খোঁজ নেন। নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১২৭ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনাকে এতটাই মর্মাহত করে যার ফলে ২০১৩ সালে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের শয্যাসংখ্যা ৩০০-এ উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেন। ২০১৬ সালে চানখাঁরপুলে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’-এর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনার মানবিক গুণাবলির সুনিপুণ দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে তাঁর ‘একানব্বইয়ের ডায়েরি’তে। ‘ওরা টোকাই কেন’ গ্রন্থের এ অধ্যায়ে তিনি ১৯৯১ সালে সমগ্র চট্টগ্রামে তথা উপকূলীয় বিশাল জনপদে সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনের চিত্র তুলে ধরেন। সাইক্লোন-পরবর্তী একজন মানবতার কর্মী হিসেবে তাদের দেখতে ছুটে যান এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে পাশে দাঁড়ান মানবতার এই নেত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমি শুধু এটুকুই জানি এই বিপন্ন মানবতার পাশে গিয়ে আমাকে দাঁড়াতে হবে। এই হতভাগ্য মানুষদের জন্য আমি আর কিছুই করতে না পারি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত¡নার কথাটুকু তো অন্তত বলতে পারব।’ মানবসন্তান আর গো-শিশুর গলাগলি করে জড়িয়ে মরে পড়ে থাকার সেই বীভৎস দৃশ্য, গাছের শাখায় ঝুলে থাকা কিশোরী কিংবা গৃহবধূর লাশ মানবতার নেত্রীকে বিমূঢ় করে-তিনি বেদনায় ব্যাকুল হয়েছিলেন সেই দৃশ্য দেখে। একজন লেখক কিংবা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়; শেখ হাসিনা সেই করুণ দৃশ্য অনুভব করেছেন তাঁর মানবতাবাদী হৃদয় দিয়ে।

অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশু, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী, বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি শেখ হাসিনার উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে অনন্য মানবিক নেতৃত্বে পৌঁছে দিয়েছে। মানবিক নেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বক্তৃতায় বলেন, ‘অটিজমসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রকাশেরও অধিকার আছে। তাদের সে সুযোগ দিতে হবে।’ অটিজম শিশুদের আঁকা ছবিসংবলিত শুভেচ্ছা কার্ড বিভিন্ন উৎসবের সময় ব্যবহার করে তিনি কেবল তাদের উৎসাহিতই করেননি; বরং রাষ্ট্রের কর্মজীবী মানুষের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যাতে করে পূর্বের ন্যায় অটিজম শিশু ও তাদের মা-বাবারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন না হয়। নিজ কন্যা সায়মা ওয়াজেদের কাছে অটিজম শিশুদের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদের উদ্যোগে জাতিসংঘে অটিজম শিশুদের বিষয়ে রেজুলেশন হয় যা সারা বিশে^ সাড়া ফেলে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী-কন্যা সায়মা জাতিসংঘের অটিজম সচেতনতা উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে আসছেন।

শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা আইন-২০১৩ প্রণয়ন, নিউরো প্রতিবন্ধী ডেভেলপমেন্ট সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ পাস, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস, অটিজম ব্যক্তিদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য নিউরো প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট বোর্ড গঠনসহ বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে অটিজম রিসোর্স সেন্টার এবং অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে বিনামূল্যে তা বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মার্কিন জেনারেল ডগলাস ম্যাক আর্থার বলেছেন : ‘যিনি একজন সত্যিকারের নেতা তাঁর থাকবে আত্মবিশ্বাস, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস, আর অন্যের চাহিদা শোনার অনুভূতি। তিনি যদি নেতা হতে প্রস্তুত নাও থাকেন তবুও তাঁর কর্মের ও চিন্তার এই সমতা তাঁকে মহান নেতা করে তোলে।’ ম্যাক আর্থার উপস্থাপিত আদর্শ নেতার এই গুণাবলি বঙ্গবন্ধুকন্যা মানবতাবাদী নেত্রী শেখ হাসিনার মাঝে লক্ষ্য করা যায়। তিনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান আর মানুষের কথা শোনেন।

এমন অনেক ক্ষুদ্র বিষয় রয়েছে যা শেখ হাসিনার চোখ এড়াতে পারেনি। নাগরিকের প্রতিটি বিষয়কে তিনি দেখেছেন সমান দৃষ্টিতে। ময়মনসিংহের আবদুস সামাদ তার অটোরিকশা চুরি হওয়ার পর উপায়ান্তর না দেখে এসএমএস পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। তাকে নতুন অটোরিকশা কিনে দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হয়েও হাজার কাজের ফাঁকে খেলোয়াড়দের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিতে দেশের খেলা দেখতে চলে যান স্টেডিয়ামে। এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহিম-ওয়াসফিয়া-নিশাতকে ডেকে অভিনন্দন জানাতেও ভোলেননি তিনি। সোনারগাঁয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু সেঁজুতি প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবেসে চিঠি লিখেছিল। মানবতাবাদী শেখ হাসিনা মুগ্ধ হয়ে সেই চিঠির জবাবও দিতে ভোলেননি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের যেখানে সমাজ অচ্ছুত হিসেবে দেখে, শেখ হাসিনা তাদের বুকে জড়িয়ে বলেন, ‘তুমি আমার সন্তানের মতো’। শেখ হাসিনার কাছে এরকম ঘটনা নতুন নয়। ব্যস্ততার মাঝেও শিশুদের সঙ্গে গণভবনের লনে খেলার দৃশ্য আমরা গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখতে পাই।

ফুটপাথে বেড়ে ওঠা টোকাইদের জীবনের চিত্র উঠে এসেছে শেখ হাসিনার ওরা টোকাই কেন গ্রন্থে। টোকাই হওয়ার পেছনে যে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তা তুলে এনেছেন মানবতাবাদী শেখ হাসিনা তাঁর এ বর্ণনায়। তিনি শুধু টোকাইদের জীবনের বর্ণনাই দেননি; বরং তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন। শেখ হাসিনা টোকাই শিশুদের ‘স্বর্গের দূত’ নামে অভিহিত করে আক্ষেপ করেছেন-কেন এ শিশুরা রাস্তায়? এদের নাম কেন হলো টোকাই? এদের জন্ম, বেঁচে থাকা, ভবিষ্যৎ সব কিছু আমার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে।... এদের জন্মের যেমন কেউ খবর রাখে না, তেমনি মৃত্যুর খবরও কেউ রাখে না।

শেখ হাসিনার মানবতাবাদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি তাঁর মানবিক আচরণ। ইউরোপের দেশগুলো যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যত্র থেকে উচ্ছেদ হওয়া আশ্রয়হীন জনগোষ্ঠীর জন্য ‘দরজা বন্ধ নীতি’ অনুসরণ করেছে, শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রশ্নে এর সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে মানবতাবাদী নীতি গ্রহণ করলেন। অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্ব-দরবারে প্রশংসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ সময় আশ্রয়হীন অনিরাপদ জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। এমনকি ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পরও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির অধিকার ফিরে পেতে তাঁকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ফলে মানবিক অনুভূতি থেকে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সদয় আচরণ করে তিনি বিশে^র প্রভাবশালী প্রায় সব গণমাধ্যমে ‘মানবিক এক রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে সেখানে অবস্থানকারী স্বজনহারা মা ও শিশুরা তাঁকে জড়িয়ে ধরে পরম আশ্রয়স্থল হিসেবে। শেখ হাসিনার উখিয়া পরিদর্শনকালে বিবিসি শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কেউ অমানবিক হলেও আমরা অমানবিক হতে পারি না। আমরা আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে আবার বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না, কারণ আমরা মানবিক।’

একদিকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, অবার অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ বাসস্থান ফিরিয়ে দিতে তিনি একের পর এক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার জান্তা সরকারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। যার মধ্যে ছিল- অনতিবিলম্বে ও চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করা; মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ; মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা; রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন। শেখ হাসিনার মানবিক চিন্তার বিবেচনায় ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন তাঁকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করে যার শিরোনাম ছিল- শেখ হাসিনা : দ্য ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। ২০১৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, শেখ হাসিনা ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’। ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর ভাষায় শেখ হাসিনা ‘বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা’।

শেখ হাসিনার দারিদ্র্য দূরীকরণ : কিছু চিন্তাভাবনা গ্রন্থে গ্রামের কৃষক শ্রেণি, দিনমজুরের প্রতি অকৃত্রিম দরদ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। কীভাবে দরিদ্র-নিপীড়িত মানুষ নিঃস্ব হয়ে শহরমুখী হয় তার বর্ণনা উঠে এসেছে। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘গরিব কৃষক ও শ্রমিকের মুখে যতদিন হাসি না ফুটবে ততদিন আমার মনে শান্তি নাই। এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলাদেশের কৃষক মজুর ও দুঃখী মানুষের দুঃখের অবসান হবে।’ এ কথা সত্য যে বাংলাদেশে সমস্যার অন্ত নেই। রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু এসব সমস্যা মোকাবিলা করে কীভাবে দেশের মানুষ উন্নত সমৃদ্ধিশালী জীবন পেতে পারে সে লক্ষ্যে শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ফুটে উঠেছে তাঁর লেখনীতে।

২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করার আহ্‌বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘নিজ নিজ এলাকায় দরিদ্র, গৃহহারা, হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী তালিকা বানান। তাঁদের জন্য আমরা বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দেব। তাঁরা যেন বেঁচে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দেব।’ ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত সব পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দরিদ্র মানুষের তালিকা করার আহ্‌বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। নিজ নিজ এলাকায় কতজন দরিদ্র মানুষ আছে, গৃহহারা মানুষ আছে। যাঁর ঘর নাই, বাড়ি নাই-ঠিকানা নাই। নিঃস্ব-রিক্ত মানুষ আছে। কারা হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আছেন, আপনারা তাঁদের তালিকা বানান। তাঁদের জন্য আমরা বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দেব। তাঁরা যেন বেঁচে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দেব। কারণ, তাঁরা আমাদের নাগরিক, এটা আমাদের দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। কাজেই জনগণের কল্যাণ করাই আমাদের দায়িত্ব।’ এই মমতাময় কল্যাণকামী রাজনীতি প্রসারের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

শেখ হাসিনার মানবতাবাদী চিন্তার আরেকটি দিক উঠে এসেছে তাঁর রচিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন গ্রন্থে। আজ মানবতা ভুলে মানুষ যে কেবল অর্থসম্পদের পেছনে ছুটছে তাকে তিরস্কার করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা চিন্তা করেন একটি বৈষম্যহীন সমাজ- যেখানে থাকবে না বিভেদ। শেখ হাসিনার ভাষায়- ‘আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই- যে সমাজে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোনো দ্ধন্ধ থাকবে না। মানুষের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হবে।’ বস্তুত, সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা অতি সরল জীবনযাপন, মানবতাবাদী উদার দৃষ্টিভঙ্গি পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘ফাঁসির রজ্জুকে যিনি উন্নত মস্তকে ধারণ করতে এগিয়ে গেছেন বহুবার, শুধু এই জাতির জন্য এ দেশের মানুষের জন্য! সেই মহান মানুষের ভালোবাসার জাতি আর মানুষই আমার কাছে তাঁর বড় আমানত। আর সেই আমানতকে শিরোধার্য করেই আমি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত থাকতে চাই সোচ্চার, এদেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে, তাঁদের স্বার্থের প্রশ্নে।’ বঙ্গবন্ধুর মানবিক মূল্যবোধ ও নীতির উত্তরাধিকারে শেখ হাসিনা তাঁর যোগ্য কন্যা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। একটি দেশের উন্নতির জন্য এমন মানবতাবাদী ও মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজনই অধিক।

লেখক : প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর