তখন জুলাইয়ের আন্দোলনে উত্তাল সারা দেশ। প্রতিদিনই সংবাদ সংগ্রহের জন্য চষে বেড়াচ্ছি এখান থেকে ওখানে। চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছি জুলাইয়ের ভয়াবহতা। ১৯ জুলাই ২০২৪। রামপুরা আফতাবনগরে তখন তুমুল আন্দালন। সেদিন আন্দোলন শুধু ছাত্রদের ছিল না, তখন সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষ এসে যোগ দিয়েছে চলমান জুলাইয়ের উত্তাল আন্দোলনে। এর আগে ছাত্রদের হত্যা করার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বেসরকারি এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আহ্বান জানায় সারা দেশের মানুষকে তাদের আন্দোলনে যোগ দিতে। কারণ ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্বিচারে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে গোটা দেশের মানুষ যোগ দেয় জুলাইয়ের চলমান আন্দোলনে। আফতাবনগর, রামপুরা, বনশ্রী সেদিন পরিণত হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। তবে পার্থক্য জনসাধারণের হাতে ছিল গাছের ডাল আর ইটপাটকেল, অন্যদিকে পুলিশ চালাচ্ছে নির্বিচারে গুলি। শুক্রবার বিকাল ৪টা ১০ থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে ১৩ জনকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখি আমি নিজের চোখের সামনে। এর মধ্যে নাম না জানা একজন ১৬/১৭ বছর বয়সি ছেলের গোপনাঙ্গে এসে বিদ্ধ হয় বুলেট। আমার থেকে মাত্র ১০-১৫ হাত দূরে থাকা ছেলেটি ততক্ষণাৎ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। দৌড়ে তাকে উঠিয়ে একটি রিকশায় তুলে নেই। ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই ছেলেটি মারা যায়। তার পরেও রিকশাচালক নিজের জীবন বাজি রেখে দ্রুত নিয়ে চলতে থাকে নাম না জানা ছেলেটিকে। আর আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভাবছি, জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র-গুলি খুনি হাসিনা সরকার জনগণের বিপক্ষেই ব্যবহার করার নির্মম সাক্ষী আমাকেই হতে হলো!
৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। অর্থাৎ পরদিন থেকে সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করবে তারা। ৯ দফা দাবিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত চত্বর এবং প্রধান সড়কে এই কর্মসূচি পালন করবেন তারা। কিন্তু খুনি হাসিনার গুলি থামছেই না। ৯ দফা পরিণত হলো এক দফায়। শুধু রাজপথেই নয়; এ সময় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিপ্লবের নতুন মাত্রা দেখে পুরো বিশ্ব। নেটিজেনরা প্রোফাইল পিকচারে লাল রং ব্যবহার করে বিক্ষোভ জানান। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সবাই যেন লালে লাল হয়ে ওঠেন। রক্তের রঙে ছবি প্রকাশ করে লেখেন শুধু কোটা নয়, গোটা দেশটার সংস্কার প্রয়োজন। পরের গল্পটা স্বৈরাচার পতনের, ছাত্রজনতার বিজয়ের।
লেখক : রিপোর্টার, বাংলাদেশ প্রতিদিন