দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পরিচিত শত্রু এডিস মশা এবং তার দ্বারা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। ২০০০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু এবং এর বাহক মশা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত এবং এর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাও আমাদের জানা। তার পরেও আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগার সব সময়ই মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে। আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এ কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভ্যারিয়েট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি; যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারি। আমাদের গবেষণাগার থেকে এ পর্যন্ত যে আগাম তথ্য দিয়েছি তার সবই সঠিক হয়েছে। আমাদের বর্তমান ফোরকাস্টিং মডেল বলছে আগামী বছরগুলোয় বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। শুধু ঢাকায় নয়, দেশের সব জায়গায় ডেঙ্গু আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি। এ মডেল অনুযায়ী পাঁচ বছর কার্যক্রম চালাতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। ধারণা করা হয়, ২০২৩ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমার এ মডেলটি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হবে তা মোট নিয়ন্ত্রণ ব্যয়ের চাইতে অনেক কম। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিত ‘কেবি মডেল’ রূপরেখা নিম্নরূপ-
১. স্বাস্থ্যকর্মী : প্রতি ১ হাজার হোল্ডিং বা বাড়ির জন্য একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এ জনবল নিয়োগ করা যেতে পারে। এ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে প্রতিটি বাড়ির মালিকের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা থাকবে। বাড়ির মালিকের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে। ২. ক্লিনার : প্রতিটি ব্লকে একজন করে ক্লিনার থাকবেন। ক্লিনারের কাজ হচ্ছে আটকে যাওয়া ড্রেন, ডোবা, নর্দমার পানি প্রবাহিত রাখা। ৩. মশককর্মী : প্রতিটি ব্লকে দুজন করে মশককর্মী থাকবেন যাঁরা সকালে লার্ভিসাইড এবং বিকালে অ্যাডাল্টিসাইড স্প্রে করবেন। ৪. সুপারভাইজার : একটি ওয়ার্ডের জন্য একজন সুপারভাইজার থাকবেন। তিনি তাঁর ওয়ার্ডের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী-মশককর্মীর নিয়মিত কাজ নিশ্চিত করবেন। ৫. সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা : প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে চিকিৎসক সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে থাকবেন। তিনি সুপারভাইজারের কাছ থেকে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা, তার প্রজননস্থল, ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগী ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।
নাগরিককে মশা নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করার জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে আইন রয়েছে। সে রকম একটি আইন বাংলাদেশে তৈরি করে তার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের পর্যাপ্ততা : মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক মানুষের হাতের নাগালে আনতে হবে। আমাদের দেশে একটি কীটনাশক বাজারজাত করতে গেলে যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া রয়েছে তাতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়। একটি কীটনাশক রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করার পর সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন।