৪ জুলাই, ২০১৯ ১৫:০০

গণতান্ত্রিক দলে এখন পাইকারিহারে নেতা পয়দা হয়

পীর হাবিবুর রহমান

গণতান্ত্রিক দলে এখন পাইকারিহারে নেতা পয়দা হয়

কি লিখতে গিয়ে কি লিখি, কি বলতে গিয়ে কি বলি! নিজেই তাজ্জব হয়ে যাই। অন্তহীন দহনে দগ্ধ হই!আত্মতৃপ্তি নেই, মনের সুখ নেই। রাজনীতির জায়গা রাজদুর্নীতি দখল করেছে। আদর্শিক রাজনীতি নেই। রাজনীতির দীর্ঘপথ পরিক্রমায় আদর্শিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সাংগঠনিক দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা ও গণমুখী সৎ চরিত্র নিয়ে আর রাজনীতিতে আসতে হয় না।

যখন যার খুশি অর্থ পেশী শক্তি আর অনুকম্পা বা করুণা লাভের মধ্য দিয়ে হঠাৎ নেতা, হঠাৎ রাজনীতিবিদ হওয়া যায়। সরকারি চাকরি-বাকরি করে নিরাপদ জীবন গড়ে, অবসরে গিয়ে রাজনীতির মঞ্চ দখলই নয় এক লাফে এমপি, মন্ত্রী ও নেতা হওয়া যায়। রাজনীতি করে, কর্মী তৈরি করে, দলের জন্য নিবেদিত হওয়ার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েই যেমন খুশি, যখন খুশি নেতা হওয়া যায়।

আগে রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠক ও নেতা আসতেন দলের প্রতি আদর্শিক কমিটমেন্ট নিয়ে কাজ করতে করতে কর্মী ও মানুষের মন জয় করে। সাদামাটা নিরাভরণ তাদের জীবন হতো মানুষের আদর্শ।শ্রদ্ধা ভালোবাসায় তাদের জন্য মানুষের মন ভরে যেতো। এখন রাজনীতির পথপরিক্রমা বাদ দিয়ে সামরিক শাসকদের দলের নেতা হওয়ার মত গণতান্ত্রিক দলেও পাইকারি হারে নেতা পয়দা হয়।

রাজনীতিবিদরা বোকার মত ঠকে গিয়ে অসহায়ের মত দেখেন কিভাবে তাদের পিছনে ফেলে অর্বাচীন বালকেরা করুণা ভিক্ষায়, ব্যবসায়ীরা বিত্তের গরমে, অবসরপ্রাপ্ত আমলারা সুবিধাবাদী চরিত্রের ষোলকলা পূর্ণ করে, দলকানা দলদাস সুযোগ সন্ধানীরা হঠাৎ চাটুকারিতায় ছাত্রজীবনে যা বিশ্বাস করেনি, নয়া মুসলমানের গরু বেশি খাবার মত সেই বন্দনা বেশি বেশি করে উঠে আসে।

রাজনীতি এভাবে রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হয়ে মরুকবলিতই নয়, প্রাণহীন আকর্ষণহীন সুবিধাবাদীদের গনিমতের মালে পরিণত হয়। যেভাবে যার খুশি যখন তখন রাজনীতিবিদদের অসহায় করে দিয়ে ভোগের নেশায় দখল করে। নিজেদের আত্মগ্লানির কারণে রাজনীতির মূলশক্তি বা কর্মীদের মাঝে হয় বিভেদ, নয় ভেজাল মাল গোডাউনে ঢুকিয়ে দলকে নড়বড়ে করে দেয়। আর যখন যে দল ক্ষমতা হারায় তখন তারা হায় হায় করে, ত্যাগী কর্মীরা মার খায়, লুটেরা সুবিধাবাদীরা নিরাপদে, নয় আপোসে কেটে পড়ে!

কি অদ্ভূত রাজনীতির নীতিহীন আগ্রাসন দেখতে দেখতে বড় বেশি ক্লান্ত লাগে। এ নিয়ে না বলা যায়, না লেখা যায়, না সয়ে যাওয়া যায়। আর মুক্তিযুদ্ধে ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে দেখা স্বপ্ন ও অঙ্গীকার অধরাই থেকে যায়। আহারে মন বড় বিষাদ হয়, বেদনায় ভারি হয়! সেই কৈশোর থেকে পুরো যৌবন কি স্বপ্নই না দেখেছিলাম!

বেশি কিছুই চাইনি। চেয়েছিলাম আত্মমর্যাদা নিয়ে অবাধ স্বাধীনতাভোগ করতে। লিখতে হাত খুলে।বলতে প্রাণ খুলে। পারিনি।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিডি-প্রতিদিন/০৪ জুলাই, ২০১৯/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর