২২ জুন, ২০২০ ১৫:৩৯

বিজ্ঞাপন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ মুহূর্তে ঠিক নয়

ইকবাল সোবহান চৌধুরী

বিজ্ঞাপন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ মুহূর্তে ঠিক নয়

ইকবাল সোবহান চৌধুরী

বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশেও করোনার আঘাত পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছেই। স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করছেন। জীবন ও জীবিকা সচল রাখার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেসব দেশবাসীকে জানাতে ফ্রন্টলাইনের অন্যতম কাজ করছে মিডিয়া। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তিন শতাধিক সংবাদকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। সংবাদকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন। সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মূল আয় বিজ্ঞাপন। হোক সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারি খাতের। 

করোনার মন্দার কারণে বিজ্ঞাপনের প্রবাহ কমে গেছে। পাশাপাশি যেসব বকেয়া বিল রয়েছে তার প্রাপ্তিও এখন অনিশ্চিত। সে কারণে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর্থিক সংকটে পড়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখায় যেমন সংকট তৈরি হচ্ছে, তেমন কর্মীদেরও সংকট তৈরি হচ্ছে। অনেক পত্রিকায় কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। বেতন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকটি বন্ধ হয়ে গেছে। সংকটকালে গণমাধ্যমকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এ মুহূর্তে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কীভাবে মিডিয়াকে টিকিয়ে রাখা যায় সে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এখানে মিডিয়া মালিক, সাংবাদিক, কর্মচারী যারা আছেন তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সরকার করোনার শুরু থেকে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা জাতিকে জানিয়েছে মিডিয়া। 

মিডিয়া যদি না থাকে বা দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে রাষ্ট্র বলুন, সরকার বলুন, আমাদের সমাজ বলুন কেউই জয়ী হতে পারব না। মিডিয়ার গুরুত্ব বিবেচনা করে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে, সাহস দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হবে। যেসব বিজ্ঞাপনের বিল বকেয়া রয়েছে, তার ছাড় দেওয়া হলে পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া যে সংকটে পড়েছে তা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। টিকিয়ে থাকতে পারবে। 

ডিজিটাল আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার কাম্য নয়। সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। আবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যা খুশি লিখে দেব তা নয়। দুই দিকেই একটা সীমা থাকবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের যেমন বিরোধিতা করি, সেটা যার পক্ষ থেকেই আসুক না কেন। আবার সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা ত্যাগ করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদ প্রকাশ, ব্যক্তিকে আঘাত করে, সমাজে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে এমনটাও করা উচিত নয়। 

যখন তখন যাকে তাকে গ্রেফতার হয়রানি কাম্য নয়। ডিজিটাল আইন যখন হয় তখন আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সে সময় বলা হয়েছিল, মামলা হলেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হবে না। কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা হলে সেটা আগে শীর্ষ মহল অর্থাৎ আইজিপি পর্যায়ে অনুমতি নিয়েই পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা এখনো মনে করি এ নির্দেশনাটি ফলো করা প্রয়োজন আছে। কোনো সাংবাদিক যদি একটু বাড়াবাড়ি করেও থাকেন, তিনি কিন্তু অপরাধী চক্র নন। যদি কেউ অপরাধ করেন, অবশ্যই বিচার করা যাবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়ে এসে যা করা হচ্ছে বা অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভীতি সৃষ্টি করছে- এটা কাম্য নয়। 

ভীতি ও ভয়ের মধ্য দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী সাংবাদিকতা হয় না। কেউ যদি আইনের বরখেলাপ করেন, তাকে গ্রেফতারের আগে অনুমতি নিতে হবে। তাহলে তৃণমূলে যে বাড়াবাড়ি চলছে তা কমে যাবে। ব্যাংকের মালিক যারা আছেন, তারা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ মুহূর্তে পত্রিকা ও টেলিভিশনে কোনো বিজ্ঞাপন দেবেন না। 

বিজ্ঞাপন দেওয়া না দেওয়া তাদের ব্যাপার। কিন্তু এ মুহূর্তে তাদের এ সিদ্ধান্তটা ঠিক নয়। ব্যাংক একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। গ্রাহককে যে সেবা দেবেন তা তো জানাতে হবে। জানাতে হলে অবশ্যই বিজ্ঞাপন দিতে হবে।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর