২২ জুন, ২০২০ ১৬:১১

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের বক্তব্য শুনে আমি স্তম্ভিত

মাহফুজ আনাম

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের বক্তব্য শুনে আমি স্তম্ভিত

মাহফুজ আনাম

যখন করোনা সংকটে জনগণের সেবায় সবাই নিয়োজিত, গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে; এ মুহূর্তে মিডিয়ার ওপর এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক-বিএবি যে বিবৃতি দিয়েছে, তাদের এ বক্তব্য শুনে আমি স্তম্ভিত। প্রতিটি ব্যাংক তার নিজস্ব প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দেবে কি দেবে না, তা তারা নিজেই নির্ধারণ করবে। সেখানে এ সংগঠনের বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। আমরা মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত মিডিয়াকে হেনস্তা করবে। মিডিয়ার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে। মিডিয়ার সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক রয়েছে, তা নষ্ট হবে। মনে রাখতে হবে, মিডিয়ার যেমন ব্যাংকের প্রয়োজন, তেমন ব্যাংকেরও মিডিয়া প্রয়োজন। অবশ্যই বিএবির এ সিদ্ধান্ত নেতিবাচক। এতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকতে বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা খুব জোরালো দাবি করব, বিএবি কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে। 

সরকার যখন সব সেক্টরকে প্রণোদনার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে, সেখানে আমরা সংবাদপত্রশিল্প কিছুই পাইনি। এমনকি আমাদের ন্যায্য পাওনা, বহু বছর ধরে বকেয়া বিল জমা পড়ে আছে। তারা যদি এ মুহূর্তে সে বিল পরিশোধ করত, তাহলে আমাদের অনেক সাহায্য হতো। এ নিয়ে আমরা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু আজ অবধি কোনো ফল পাইনি। সরকার যখন অন্যান্য শিল্পকে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে আমরাও তো প্রণোদনার যোগ্য, জনসেবামূলক খাত হিসেবে। এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা তো পাচ্ছিই না, আমাদের ন্যায্য পাওনা যদি সরকার আমাদের দিত, তাহলে এ শিল্পে অনেক সহায়তা হতো। 

দুর্দিনে বেঁচে থাকার সহায়তা হতো। এ ব্যাপারেও আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই ডিজিটাল আইনের ঘোরতর বিরোধিতা করে এসেছি। এ আইন প্রণয়নকালে আমরা সংসদীয় কমিটির ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরও আমাদের কথার তোয়াক্কা না করেই এ আইন পাস হয়েছে। পাস হওয়ার সময়ও আইনমন্ত্রী আমাদের বারবার নিশ্চিত করেছেন, এটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধু সাইবার ক্রাইমকে প্রতিহত করার জন্য প্রযোজ্য হবে। মতপ্রকাশে বিশেষ করে মিডিয়ার স্বাধীনতায় কোনোভাবেই ব্যবহার হবে না। আজকে আড়াই বছরের মাথায় আমরা দেখছি, এ আইন মূলত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সময় অন্য সবকিছুই যখন স্থবির অবস্থা, এ সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্ট আরও দ্রুতবেগে প্রয়োগ হচ্ছে। 

কেউ কিছু বললেই ডিজিটাল আইনে মামলা হয় এবং সঙ্গেই সঙ্গেই তাকে গ্রেফতার হয়। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলে এমনকি ওই স্ট্যাটাসে লাইক দিলেও এখন গ্রেফতার করা হয়। দেশে এখন একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চলছে। ডিজিটাল অ্যাক্টের যদি আমরা প্রয়োগ দেখি, দেখা যাবে বড় অংশই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের এই সময় সরকারের সঙ্গে জনগণের একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকা উচিত। সেখানে সঠিক তথ্য প্রচারই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যারা প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া, তাদের কাছে জনগণ সঠিক তথ্যও প্রত্যাশা করে। এভাবে যদি ডিজিটাল অ্যাক্ট প্রয়োগ হয়, তাহলে ফেক নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য, মিথ্যা তথ্য প্রকাশ পাবে। জনগণকে তার সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। 

আজ অনেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মুখে। এ কারণেই মূলত অনেক গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব, তারা অন্য সেক্টর চালু রাখার জন্য যে ধরনের উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছেন, ঠিক তেমন মিডিয়ার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবেন। কারণ, এখানে অনেক মানুষের রুটি-রুজির বিষয় আছে। সেখানেও যেন সরকার সুদৃষ্টি দেন- সে প্রত্যাশাই করি।

মাহফুজ আনাম, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর