সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলোচনা সাকিব মাহমুদুল্লাহকে ঘিরেই

আলোচনা সাকিব মাহমুদুল্লাহকে ঘিরেই

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ খেলছে— এতেই খুশি ছিল গ্রেট ব্রিটেনে থাকা বাঙালিরা! এমন একটি জমকালো টুর্নামেন্টে তারা মাঠে বসে বাংলাদেশের খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন- তাতেই তারা ধন্য! মাশরাফিরা যে সেমিফাইনালে উঠে যাবে এটা কল্পনাতেও ছিল না! কিন্তু এখন বাস্তব! সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাশরাফিরা শেষ চারে!

ইংল্যান্ডের প্রতিকূল কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে! ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে এখন বইছে আনন্দের বন্যা। সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এখন ইংল্যান্ডে মহানায়ক!

আহ্! কী তৃপ্তিদায়ক দুই সেঞ্চুরি। এখানকার বাঙালিরা সময় পেলেই কার্ডিফের ম্যাচটির হাইলাইটস দেখছেন। সাকিবের ১১৪ রান এবং মাহমুদুল্লাহর হার না মানা ১০২ রানের ইনিংসে কখন কোন শট খেলেছেন তা মুখস্থ করে ফেলেছেন সমর্থকরা।

শুধু বাঙালি সমর্থকরা কেন, এখন তো ইংল্যান্ড জুড়েই আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক ম্যাচই যেন পাল্টে দিয়েছে ক্রিকেটবোদ্ধাদের চিন্তা-চেতনা। ভারতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৪ রানে অলআউট হওয়ার পর যারা বাংলাদেশকে নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিল, তারা এখন মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না!

কেউ কেউ বলেছিলেন, বাংলাদেশ খুবই ‘আনপ্রেডিকটেবল’! কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি দেখার পর নিশ্চয়ই তারাও মত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছেন। কেন না কোনো আনপ্রেডিকটেবল দলের পক্ষে এমন ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়।

এখন ক্রিকেট বিশ্বে উড়ছে বাংলাদেশের বিজয় কেতন। প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো মেঘা ইভেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে মাশরাফিরা এগিয়ে যাচ্ছেন তার ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিলেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেই। তারপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। তবে ঘরের মাঠে যতই জিতুক তাতে ক্রিকেট বিশ্ব খুব একটা পাত্তা দেয় না। কিন্তু এবার বিদেশের মাটিতেই মাশরাফিরা প্রমাণ করে দিয়েছেন— তারা এখন কতটা ভয়ঙ্কর!

কার্ডিফ জয়ের পর কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। ২২৪ রানের সেই অবিশ্বাস্য জুটির পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফির আসরটাই যেন সাকিব-মাহমুদুল্লাহময় হয়ে পড়েছে। ধারাভাষ্যকাররা সুযোগ পেলেই এই জুটি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিচ্ছেন।

বলা হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড’ ম্যাচটি ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ম্যাচগুলোর মধ্যে একটি। এই ম্যাচের মধ্যে অনেক ছিল অনেক বারতা! ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে এখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পৌঁছে গেছে। সাকিব-মাহমুদুল্লাহর এক জুটি বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ এখন কতটা পরিপক্ব! ১২ বছর আগে কার্ডিফে টাইগাররা যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় পায় তখন গোটা বিশ্ব বলেছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অঘটন! কিন্তু এবার আর সেকথা বলার সুযোগ নেই। কেন না এই নিউজিল্যান্ডকে দুই দুবার হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচেই কিউইদের হারিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পাচ্ছে, ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির পরও জিতে যাওয়ায়।

মাত্র ৩৩ রানে দলের সেরা চার ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর কে ভেবেছিল ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ? কিন্তু মাশরাফিরা জিতেছেন। সাকিব-মাহমুদুল্লাহর ঐতিহাসিক এক জুটিই সব কিছু বদলে দিয়েছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান বা কোনো জুটি ভালো খেললে অন্য কোনো জুটি বা ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তুলনা করা হতো। কিন্তু কার্ডিফের ম্যাচের পর বদলে গেছে চিত্র। এখন অন্য জুটিকেই তুলনা করা হচ্ছে সাকিব-মাহমুদুল্লাহর জুটির সঙ্গে। যেমন—অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সব শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৩৫ রানে ৩ উইকেট পতনের পর ইয়ন মরগান ও বেন স্টোকস মিলে যখন বড় জুটি গড়ছিল তখন বার বার স্মরণ করা হচ্ছিল সাকিব ও মাহমাদুল্লাহকে। মরগান-স্টোকসের ১৫৯ রানের জুটিকে তুলনা করা হচ্ছিল সাকিব-মাহমুদুল্লাহর ঐতিহাসিক জুটির সঙ্গে। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

তবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় সার্টিফিকেট দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি বোলার গতি তারকা শেন বন্ড। কার্ডিফে বসেই তিনি দেখেছেন ‘বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড’ ম্যাচ। বাংলাদেশের খেলা দেখে বন্ড মুগ্ধ-অভিভূত। টাইগারদের প্রশংসা করতে গিয়ে নিজের কলামে লিখেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড এই টুর্নামেন্টে নিজেদের খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করেছেন। তারা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে শূন্য হাতে। এটা প্রত্যাশা ছিল না। তবে সত্যি বাংলাদেশ অসাধারণ খেলেছেন, এটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই জানি, ঘরের মাঠে টাইগাররা ভয়ঙ্কর। কিন্তু দলটি যে দেশের বাইরেও ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে তা বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে। ৩৩ রানে চার উইকেট পড়ার পরও এমন জয় দলটিকে অনন্য উচ্চতায় তুলে দিয়েছে। তারা যোগ্য দল হিসেবেই সেমিতে উঠেছে। এটা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যই একটা সুসংবাদ।’ বন্ডের দাবি, ‘সাকিব-মাহমুদুল্লাহর জন্য যেকোনো বিশেষণই কম হয়ে যাবে। তবে এই বাংলাদেশ দলে বিশ্বমানের আরও বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার রয়েছেন। তাই সামনে এই বাংলাদেশকে যদি আরও ভয়ঙ্কর রূপে দেখি তবুও অবাক হবো না!’

সর্বশেষ খবর