দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালের বিশ্বকাপটি ছিল টাইগারদের জন্য দুঃস্বপ্ন। কানাডার মতো পুচকে দলের কাছেও হেরে যায় বাংলাদেশ। অনেকে টাইগারদের ওয়ানডে মর্যাদা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু ক্যারিবীয় দ্বীপে ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে উল্টো চিত্র। গ্রুপ পর্বে টপ ফেভারিট ভারতকে এবং সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নিজেদের জাতটা চিনিয়ে দেয় বাশারবাহিনী।
২০০৭ সালের ভারতীয় দলটিকে বলা হয়ে থাকে তাদের ইতিহাসের সেরা দল। বিশ্ব মানের সব তারকায় ভরপুর। শচীন টেন্ডুলকার, বিরেন্দর শেবাগ, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং, জহির খানদের মতো তারকা সমৃদ্ধ দলকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা ক্রিকেটার হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তখনকার তিন উদীয়মান তারকা সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম।
গ্রুপ পর্বে ভারতের মতো সুপার পাওয়ার দলকে বিদায় করে দিয়ে প্রথমবারের মতো সুপার-এইটে উঠে বাংলাদেশ। পরের রাউন্ডে আরেকটি চমক। এবার বাংলাদেশের শিকার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। জ্যাক ক্যালিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, হার্শেল গিবস, শন পলক, মার্ক বাউচার, গ্রায়েম স্মিথের মতো তারকার দলকে বাংলাদেশ হারায় ৬৭ রানের বড় ব্যবধানে। এ নায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। ৮৩ বলে খেলেছিলেন ৮৭ রানের ইনিংস।ঘটনা বহুল এই বিশ্বকাপে ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। উইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েডের পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করেন রিকি পন্টিং। এটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক শিরোপা। তবে সব মিলে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলে অসিরা।
দুর্দান্ত বোলিং করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা। একাই নেন ২৬ উইকেট। ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারও জেতেন তিনি। সব মিলে বিশ্বকাপে ৫৭ উইকেট শিকার করে অনন্য নজীর স্থাপন করেন এই অসি পেসার।
বাংলাদেশ-ভারত স্কোরকার্ড
ভারত
১৯১/১০ (৪৯.৩ ওভার)
(গাঙ্গুলি ৬৬, যুবরাজ ৪৭, জহির ১৫*, প্যাটেল ১৫; মাশরাফি ২/৩৮, রফিক ৩/৩৫, রাজ্জাক ৩/৩৮)
বাংলাদেশ
১৯২/৫ (৪৮.৩ ওভার)
(মুশফিকুর ৫৬, সাকিব ৫৩, তামিম ৫১; শেবাগ ২/১৭, প্যাটেল ২/৩৯, জহির ১/৪১)
ফল
বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা
মাশরাফি বিন মর্তুজা
চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া
রানার্সআপ : শ্রীলঙ্কা
অংশগ্রহণকারী দল : ১৬টি
মোট ম্যাচ : ৫১টি
ম্যান অব দ্য ফাইনাল
গ্লেন ম্যাকগ্রা, অস্ট্রেলিয়া।
ম্যান অব দ্য সিরিজ
গ্লেন ম্যাকগ্রা, অস্ট্রেলিয়া।
দলীয় সর্বোচ্চ
৪১৩/৫ ভারত, প্রতিপক্ষ বারমুডা।
দলীয় সর্বনিম্ন
৭৭ আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ (মোট)
৬৫৯ রান, ম্যাথু হেডেন।
সর্বোচ্চ স্কোর
১৬০ রান, ইমরান নাজির, পাকিস্তান।
সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ
২০৪ রান, ব্রাড হজ ও মাইকেল ক্লার্ক, অস্ট্রেলিয়া।
সর্বোচ্চ ছক্কা : ২৯টি, ম্যাথু হেডেন, অস্ট্রেলিয়া।
সর্বাধিক উইকেট : ২৬টি, গ্লেন ম্যাকগ্রা।
সেরা বোলিং: ৫/১৮, অ্যান্ড্রু হল।
সর্বাধিক ডিসমিশাল : ১৭টি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ।
অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াড
৪ বলে ৪ উইকেট
প্রোটিয়া বোলার লেঙ্গেভেল্ট ও এনটিনির দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ২০৯ রানেই আটকে যায় শ্রীলঙ্কা। ২১০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে হেসে খেলেই জিতে যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৪ ওভারে ২০৬ রান করে প্রোটিয়ারা। জয় থেকে তখন মাত্র ৪ রান দূরে। এমন সময় বোলিংয়ে এসে সব ওলট পালট করে দেন লাসিথ মালিঙ্গা। ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ১ উইকেটে জিতে যায় প্রোটিয়ারা।
ফরম্যাট
অংশগ্রহণকারী ১৬ দল ৪ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গ্রুপপর্ব খেলে। প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা ২টি করে দল সুপার-এইটে সুযোগ পায়। সুপার এইটের প্রতিটি দল একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ চার দল সেমিফাইনালে অংশ নেয়। তারপর ফাইনাল।
রেকর্ড
দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি : ২১ বলে, মার্ক বাউচার, দক্ষিণ আফ্রিকা।
চতুর্থ উইকেট জুটি : ২০৪ রান, মাইকেল ক্লার্ক ও ব্রাড হজ, অস্ট্রেলিয়া।
বড় ব্যবধানে জয় : ২৫৭ রান, ভারত।
সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর : ৪১৩ রান, ভারত।
ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা : ১৮টি, ভারত।
দ্রুততম দলীয় ৫০ রান : ২০ বলে, নিউজিল্যান্ড
দ্রুততম দলীয় ১০০ রান : ৬৬ বলে অস্ট্রেলিয়া।
এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান : ৬৭১, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ।
৪ বলে ৪ উইকেট : লাসিথ মালিঙ্গা, শ্রীলঙ্কা।.