মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

টাইগারদের ‘প্রমিথিউস’ মাশরাফি

আসিফ ইকবাল

টাইগারদের ‘প্রমিথিউস’ মাশরাফি

গ্রীক পূরাণে কত বর্ণাঢ্য চরিত্র। জিউস, হারকিউলিস, ভেনাস, পসেডিয়াম, হেরাক্লিটাস, প্রমিথিউস। সবাই দেবতা। মানুষকে কম বেশী উপকার করেছেন সবাই। প্রমিথিউস একজন ‘টাইটান’ দেবতা। মানুষের প্রকৃত উপকারী বন্ধু। দেবতা রাজ জিউসের নির্দেশ অমান্য করে মানুষকে উপহার দিয়েছিলেন জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু ‘আগুন’। বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘প্রমিথিউস’ হচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। যিনি প্রমিথিউসের ‘আগুন’ দেওয়ার মতো উপহার দিয়েছেন স্বপ্নের ‘শিরোপা’। ছয় ছয়টি কষ্টের রাত নিদ্রাহীণ থাকার পর সপ্তম রাতে লাল-নীল-সোনালী আবীরের মাখিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। রঙধনুর সাত রঙয়ে রাঙিয়েছেন টাইগার ক্রিকেটারদের। স্বপ্ন পূরণের রাস্তায় টেনে তুলে মাশরাফি এখন টাইগারদের ‘প্রমিথিউস’। স্বপ্ন দেখানোর নায়ক। স্বপ্ন দ্রষ্টা ও স্্রষ্টা।

প্রিয় মিরপুর, দুর্ভেদ্য কলম্বো এবং আলো ঝলমলে দুবাইয়ে যা পারেনি টাইগাররা, জ্যামিতিক কাটা কম্পাসের মাপঝোকে সাজানো অনিন্দ্য সুন্দর ডাবলিনে পূর্ণতা পেয়েছে সেই স্বপ্নের। বাংলাদেশের ক্রিকেট যে স্বপ্ন দেখছিল ২০০০ সালে টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার পর থেকে। ১৯ বছর পর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর অসাধারন পারফরম্যান্সে। ডাবলিনের আগে মাশরাফির নেতৃত্বে গত জানুয়ারীতে তিন জাতির টুর্নামেন্ট, দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল টাইগাররা। কিন্তু কস্ট ও বেদনাবিধূর রাত কাটানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি মাশরাফিরা। নিদ্রাহীণ রাত কাটানোর পরও ভেঙে পরেননি ক্রিকেটাররা। দুরন্ত ক্রিকেট খেলে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকে খেলতে নামেন ডাবলিনে তিন জাতির টুর্নামেন্টে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যন্ডের বিপক্ষে অপ্রতিরোধ্য ক্রিকেট খেলে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ইতিহাসের সোনালী খাতায় চিরস্থায়ী করেছে। এবার স্বপ্ন দেখছে বিশ্বকাপ জয়ের। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন মাশরাফি, তাই ক্যারিয়ারের মধূর সমাপ্তি টানতে চাইছেন টাইগার অধিনায়ক।

২০০১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারনা মাশরাফির। দীর্ঘ দেড় যুগের পথ চলায় বাংলাদেশকে তিনি উপহার দিয়েছেন বহু জয়। যুগিয়েছেন আত্মবিশ্বাস। মাশরাফি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি ছয় ছয়টি অস্ত্রোপচারের পরও ক্রিকেট খেলছেন দাটের সঙ্গে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। ফাইনাল খেলেছে এশিয়া কাপের। এবার স্বপ্ন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের। ‘প্রমিথিউস’ মাশরাফির হাত ধরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখা অসম্ভব নয়।

২০০১ সাল থেকে চলতি বিশ্বকাপ পর্যন্ত ২০৯টি ওয়ানডে খেলেছেন মাশরাফি। ১৭৫২ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ২৬৫টি। টাইগারদের সবচেয়ে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ মাশরাফি এবার নিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপ খেলছেন। যদি ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতেন, তাহলে বাংলাদেশে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলা বিরল কৃতিত্ব দেখাতেন মাশরাফি। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষপাতমূলক কারনে ২০১১ সালে ঘরের মাঠে খেলতে পারেননি। মাশরাফি একাই চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছেন না, ক্যারিয়ারের চতুর্থ  বিশ্বকাপ খেলবেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। প্রমিথিউস যখন মানুষের উপকারে নানা সংঘাত কাটিয়ে মানুষকে প্রয়োজণীয় আগুন উপহার দিয়েছিলেন। ১৮ বছরের কারিয়ারে বল হাতে মাশরাফি দেশকে জয় উপহার দিয়েছেন। অধিনায়ক হয়ে দেশকে উপহার দিয়েছেন ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অকুতোভয় জয়। ক্রিকেট পরাশক্তিদের বিপক্ষে লড়াই করে এবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এবং স্বপ্ন উপহার দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘প্রমিথিউস’ মাশরাফি।

সর্বশেষ খবর