মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মানসিনিতে ইতালির নবজাগরণ

রাশেদুর রহমান

মানসিনিতে ইতালির নবজাগরণ

কথা রাখলেন রবার্তো মানসিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্ব খেলতে ব্যর্থ হওয়া ইতালির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ইতালিয়ান ফুটবলের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকছিলেন অনেক ফুটবলবোদ্ধারা। মানসিনি দায়িত্ব নিয়েই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, অনেকদিন ইউরো কাপ জেতা হয়নি ইতালির। এবার লক্ষ্য ইউরো কাপ জেতা। তার হুঙ্কারে সমালোচকরা বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলেন। ইতালির অধিনায়ক কিয়েল্লিনিও কোচের বক্তব্য বিশ্বাস করতে পারেননি। পাগলের প্রলাপ ভেবেছিলেন। কিন্তু পৃথিবীর বেশির ভাগ বিখ্যাত ঘটনার নায়ক তো পাগলরাই! রবার্তো মানসিনি নামক পাগলের প্রলাপ সত্যি প্রমাণ হলো। ইংলিশ ফুটবলের হৃৎপিণ্ডে (ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম) চূড়ান্ত আঘাত হানল ইতালি। ৫৩ বছর পর আবারও ইউরো কাপ জয় করল তারা। এবার রোমের অলি-গলি থেকে মানসিনির নামে জয়ধ্বনি উঠল। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলো পুরো ইতালি।

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজের কান্না লুকাতে পারেননি রবার্তো মানসিনি। আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন। পরে বলেছেন, ‘এই আবেগ সামলানো সত্যিই কঠিন কাজ। জয়ের পর ছেলেদেরকে আনন্দ করতে দেখে এবং সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে আমি আবেগী হয়ে পড়েছি।’

রবার্তো মানসিনির কৌশল সহজ-সরল। ‘প্রতিপক্ষকে নিজেদের জালে গোল করতে দিও না। এতেই ম্যাচটা নব্বই ভাগ জিতে যাবে।’ শিষ্যদের কানে কানে এ মন্ত্রই জঁপতে থাকেন তিনি সব সময়। মানসিনির ইতালি এই কৌশলেই খেলেছে ইউরো কাপে। খেলাটা বেশির ভাগ সময় নিজেদের কাছে রেখেছে। এটাকে ঠিক স্প্যানিশ টিকিটাকা ফুটবলের অনুরূপ বলা যাবে না। বরং তার চেয়ে ‘আপডেট ভার্সন’। বল পায়ে রাখতে হবে ডিফেন্সের ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্য। প্রতিপক্ষকে নিজেদের গোলবারের কাছাকাছিও ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না। এই নীতিতে খেললে অনেক সময়ই ফুটবল খুব সাদামাটা হয়ে যায়। উত্তাপ কমে যায়। কিন্তু মানসিনির নীতিতে ফুটবলীয় উত্তাপ মোটেও কমেনি। বরং বেড়েছে। নিজেদের দিকটা সামলে ইতালি যখন আক্রমণে যায়, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স তছনছ হয়ে যায়। দ্রুততালে ইতালির আক্রমণে উঠা দেখলে পুরনো আমলের সম্মুখ সমরের কথাই মনে পড়ে!

ইতালির ফুটবলে মানসিনি পরিচিত নাম অনেক আগে থেকেই। ১৯৮৮ ইউরো কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল ইতালি। সেই গোলটা করেছিলেন মানসিনি। ক্যারিয়ারে মাত্র ৪টা গোল করলেও মানসিনিকে ভুলে যায়নি ইতালি। ১৯৯০ বিশ্বকাপের দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফুটবলার হিসেবে কখনো বড় কিছু জিততে পারেননি। ক্লাব ফুটবলারই থেকে গিয়েছিলেন তিনি। কোচ হিসেবে যেন কড়ায় গন্ডায় সব আদায় করে নিলেন তিনি! ম্যানসিটি, ইন্টার মিলান ও লেজিওর মতো ক্লাবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন মানসিনি। ইংলিশ লিগ জিতেছেন। তবে এতটা সফল কোচ হওয়ার পরও ২০১৮ সালে তার কাঁধে জাতীয় দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার সময় খুব বেশি কিছু আশা ছিল না ইতালির। আজ্জুরিরা কেবল নিজেদের ধ্বংসস্তূপের উপর নতুন একটা ভিত্তি দাঁড় করাতে চাইছিল। রবার্তো মানসিনি কেবল ভিত্তিই গড়ে দেননি, ইতালিকে অন্তত এক যুগ রাজত্ব করার খোরাক যুগিয়ে দিলেন। ইউরো কাপ জিতে এবার মানসিনির দৃষ্টি বিশ্বকাপে! একবার বিশ্বকাপ না খেলার যন্ত্রণার উপশম দু-দুটি শিরোপায়!

সর্বশেষ খবর