অস্কার ব্রুজোনের মুখে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। শরীরী ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে চঞ্চলতা। আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছেন তিনি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বসুন্ধরা কিংসকে উপহার দিলেন প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। কেবল অস্কার ব্রুজোনই নন, দলের কোচিং স্টাফ, ফুটবলার, অফিশিয়াল সবাই উচ্ছ্বসিত। বেশ কিছুদিন আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়েছিল। গতকাল লিগের শেষ ম্যাচের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বসুন্ধরা কিংসের হাতে ট্রফি তুলে দিলেন বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। কিংসের ঘরের ট্রফি ঘরেই রইল। লিগের শেষ ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস ১-১ গোলে ড্র করেছে আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে।
লিগ শিরোপার হাতে ট্রফি নিয়েই উল্লাসে ফেটে পড়লেন তপু বর্মণরা। খালেদ শাফিই, এলিটা কিংসলে, রবসনরা একে একে ট্রফি হাতে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে থাকেন। চলতে থাকে ক্যামেরার ক্লিক, ক্লিক। বসুন্ধরা কিংসের জয়ের উৎসবটা শুরু ম্যাচের আগে থেকেই। ম্যাচের আগে স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নিতে যাওয়া লিগজয়ী কোচকে অভিবাদন জানালেন তিনি। অস্কার ব্রুজোনের চিন্তায় অবশ্য জাতীয় দল ছিল না। গতকাল সন্ধ্যায় ম্যাচ জিতে বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তে লিগ জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে চাই।’
আগেই লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তারপরও বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনীর দ্বৈরথ বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় উত্তেজনার কমতি নেই। লিগের শেষ ম্যাচেও ছিল দুই দলের লড়াইয়ের উত্তাপ। রেফারিকে ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চারটা হলুদ কার্ড দেখাতে হয়। ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে যায় আবাহনী লিমিটেড। ২৮তম মিনিটে ডান পাশ থেকে রাফায়েলের ক্রস ক্লিয়ার করতে শট নেন বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক তপু বর্মণ। নিজেদের গোলবার বিপদমুক্ত করার পরিবর্তে তিনি বল জালে জাড়িয়ে দেন। তপুর আত্মঘাতী গোলেই এগিয়ে যায় আবাহনী লিমিটেড। তপু ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আত্মঘাতী গোলটা হওয়ার পর মন শান্তিতে ছিল না। সুযোগ খুঁজছিলাম। আর গোলটাও পেয়ে গেলাম। দলকে হারতে হয়নি। এটাই সবচেয়ে ভালো লাগছে।’ তপু ম্যাচের ৩৭ মিনিটে দারুণ এক হেডে গোল করেন। বাম দিক থেকে রবসনের ফ্রি কিকে বল পেয়ে ছোটো ডি বক্সের লাইন থেকে হেড করেন তপু বর্মণ। আবাহনীর গোলরক্ষক সোহেলের তেমন কিছুই করার ছিল না। এই গোলেই ১-১ সমতায় শেষ হয় ম্যাচ।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে একটা রেকর্ড স্পর্শ করা হলো না বসুন্ধরা কিংসের। ২০০৯-১০ মৌসুমে আবাহনী লিমিটেড ২৪ ম্যাচের লিগে ৬৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল। রেকর্ডটা অক্ষতই থাকল। বসুন্ধরা কিংস ২৪ ম্যাচে ৬৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতায় ঘরের ট্রফি ঘরেই থাকল বসুন্ধরা কিংসের। লক্ষ্য এখন হ্যাটট্রিক শিরোপা। লিগে এবার ৫২ পয়েন্ট নিয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব রানার্সআপ ও ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে আবাহনী লিমিটেড তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। পাশাপাশি তারা ফেয়ার প্লে ট্রফিও পেয়েছে।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০১৭ সালে কমলাপুর স্টেডিয়ামের সবুজ টার্ফে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ জিতে উৎসব করেছিল বসুন্ধরা কিংস। এরপর দেশের ফুটবলের গতিপথটাই বদলে দেয় তারা।
প্রিমিয়ার লিগে নাম লেখানোর পর শক্তিশালী দল গঠন করে। পাশাপাশি কোচিং স্টাফে যোগ করে বাড়তি মাত্রা। অস্কার ব্রুজোন এক অসাধারণ দল গড়ে তোলেন বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকান ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে কেন্দ্র করে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লিগ ও স্বাধীনতা কাপ জিতে বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে দলটা। পরের মৌসুমেও (২০১৯-২০) শক্তিশালী দল নিয়ে মাঠে নামে। কিন্তু করোনাভাইরাস সেই মৌসুমটা কেড়ে নেয় ফুটবল থেকে। তারপরও অধরা ফেডারেশন কাপ জয় করে তারা।