বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ইংল্যান্ড বদলে দিচ্ছে টেস্টের মেজাজ

ক্রীড়া ডেস্ক

ইংল্যান্ড বদলে দিচ্ছে টেস্টের মেজাজ

টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাটিং করা ভয়ংকর। রান হয় না। বোলাররা বাড়তি সুবিধা পান। কিন্তু দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো-এসব আপ্তবাক্যকে পাত্তাই দিলেন না। উড়াধুরা ব্যাটিং করে ভারতের দেওয়া ৩৭৮ রানের টার্গেটে তারা পৌঁছে গেলেন ৭ উইকেট হাতে রেখে।

ইংল্যান্ডের ইতিহাসে তাড়া করে জয়ের নতুন রেকর্ড। ভারতেরও একটা রেকর্ড হয়েছে। তা লজ্জার। এর আগে এতো বড় টার্গেট দিয়ে কখনো হারেনি ভারত।

ইংল্যান্ড যেন টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজই বদলে দিল। দুই ব্যাটসম্যান রুট ও বেয়ারস্টো ওভারপ্রতি পাঁচের মতো গড় রেখে দুর্দান্ত একটি জয়ে এনে দিলেন ইংল্যান্ডকে। এই জয়ে সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ হলো।

এর আগে করোনার মধ্যে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ভারত। কিন্তু বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের সামনে তারা সুবিধা করতে পারেনি।

জো রুট খেললেন ১৭৩ বলে ১৪২ রানের হার না মানা ইনিংস। মারকুটে জনি বেয়ারস্টো ১৪৫ বলে ১১৪ রান করে দলের জয় নিশ্চিতের পর মাঠ ছাড়েন।

এমন এক মহাকাব্যিক জয়ের পর দুই তারকা রুট এবং বেয়ারস্টো যেন মহানায়ক বনে গেলেন।

ক্যাপ্টেন ও কোচ পরিবর্তনের পর যেন বদলে গেছে ইংল্যান্ড দল। কিছুদিন আগেও টেস্টে তারা হারের বৃত্তে আটকে ছিল। একের পর ম্যাচ হারার পর বাধ্য হয়েই কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন ক্রিস সিলভারউড। ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিতে হয় জো রুটকে। কিন্তু এক সময়ের আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কোচ এবং বর্তমানের তা বে ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস অধিনায়কত্ব পাওয়ায় যেন রাতারাতি বদলে যায় দলটি।

ম্যাককালাম-স্টোকস জুটির অধীনে কেবলমাত্র চারটি টেস্ট খেলল ইংল্যান্ড। চারটিতেই ক্যারিশম্যাটিক জয়। আর চারটি জয়ই কিনা টেস্টের সেরা দুই দলের বিরুদ্ধে।

নিউজিল্যান্ডকে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করার পর ভারতের বিরুদ্ধে আগের সিরিজের বাদ পড়া শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে বাজিমাত করে দিল ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড বর্তমানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন দল, আর ভারত রানার্সআপ।

টেস্টের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৪১৮ রানের। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রেকর্ডটি করেছিল স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ইংল্যান্ডের রান চেজ করে জয়ের রেকর্ডটি ছিল ৩৫৯ রানের। অস্ট্র্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেডিংলিতে শেষ উইকেট জুটিতে জ্যাক লিচের সঙ্গে শেষ উইকেট জুটিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। টেস্টের ইতিহাসে সেটি ছিল অন্যতম সেরা ম্যাচ। এবার সেই স্টোকসের নেতৃত্বেই ওই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ল ইংল্যান্ড।

বেন স্টোকস বলেন, ‘যখন সতীর্থরা পারফর্ম করেন তখন অধিনায়কত্ব করা অনেক সহজ হয়ে যায়। ৫ সপ্তাহ আগেও যদি দেখতাম টার্গেট ৩৭৮ রান তখন ভয় পেতাম। জনি এবং রুট একবারে স্ম্যাশ করে দিয়েছেন। বুমরাহ এবং শামির মতো বোলারের বিরুদ্ধে রান করা কিন্তু সোজা কথা নয়। আমরা শুরু স্কোর বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখেছি আর কত দরকার। আসলে কখনো কখনো দল সামর্থ্যরে চেয়েও যেন অনেক বেশি ভালো খেলে।’

টেস্ট ক্রিকেট মানেই অসহ্যকর, ঘণ্টার পর ঘণ্টা উইকেটে পড়ে থাকা কিংবা একের পর এক বোলারের আক্রমণ সহ্য করে যাওয়া। কিন্তু ইংল্যান্ডের এই দলটি টেস্টেও টি-২০র গতিতে রান তুলে পাল্টে দিচ্ছে দৃশ্যপট।

ইংলিশ ক্যাপ্টেন বলেন, ‘কিভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে হয় সেই ইতিহাসটা যেন আমরা নতুন করে লিখছি। আমরা টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন করে জীবন দিয়েছি। আমরা ফ্যানদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিচ্ছি, আমার ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্সের মাধ্যমে।’

সর্বশেষ খবর