বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
শেষ হইয়াও হইল না শেষ

কেবল জয়টাই পায়নি বাংলাদেশ!

আসিফ ইকবাল

কেবল জয়টাই পায়নি বাংলাদেশ!

রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা- বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে অভাব ছিল না কোনোটিরই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইয়ারা নদীর পাড়ের অ্যাডিলেড ওভালের ম্যাচটি উত্তেজনা ছড়িয়েছে পরতে পরতে। টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে দুই প্রতিবেশীর হেভিওয়েট ম্যাচটিতে সব ছিল। টেনসনে ছিল। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছিল। সব থাকার ম্যাচটিতে শুধু শেষ হাসিটি ছিল না বাংলাদেশের। কার্টেল ওভারের ম্যাচটি টাইগাররা হেরে যায় মাত্র ৫ রানে। হেরে গেলেও ২০ ওভারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলার সুক্ষ্ম একটি সম্ভাবনা রয়েছে সাকিব বাহিনীর। এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর শেষে। জিততে না পারলেও লিটন দাসের বিধ্বংসী ব্যাটিং ও তাসকিন আহমেদের দুরন্ত বোলিং অন্য উচ্চতায় ঠাঁই দিয়েছে ম্যাচটিকে। আবারও প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই ভিন গ্রহের লড়াই। 

ইদানীংকালে দুই দেশের ম্যাচের স্ক্রিপ্ট পাল্টাতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। কখনো হেলে পড়ে এক দলের দিকে। কখনো আবার আরেক দলের দিকে। গতকালের ম্যাচটি রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে এক আকাশ সমান। লিটনের পর নুরুল হাসান সোহানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি জমেছিল পুরোপুরি। শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে ম্যাচ। বৃষ্টিস্নাত ম্যাচে শেষ ওভারে অবিশ্বাস্য জয়ের জন্য টাইগারদের দরকার ছিল ২০ রান। ২০ ওভারের ম্যাচে হরহামেশাই ২০-২২ রান নেওয়ার ঘটনা রয়েছে। সোহান ও তাসকিন শেষ বল পর্যন্ত জানবাজি রেখে ব্যাট চালিয়েছেন। চার, ছক্কায় মাঠ গরম করেছেন। করতালিতে মুখর করেছেন গ্যালারি। কিন্তু জয়োৎসবে মেতে উঠতে পারেননি। প্রথম ৫ বলে ১৩ রান নিয়ে নেন সোহান। শেষ বলে জিততে টাইগারদের দরকার ছিল ৭ রান। সাদা চোখে যা অসম্ভব। কিন্তু ‘নো’ বল হলেও অসম্ভবটাই সম্ভব হতো। শেষ বলে ৬ হলে ম্যাচ গড়াতো সুপার ওভারে। আর্শদ্বীপ সিংয়ের শেষ বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি সোহান। টান টান উত্তেজনার ম্যাচ হেরেও টাইগার অধিনায়ক সাকিব বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচগুলো এখন সবসময়ই উত্তেজনা ছড়ায়। খুব কাছাকাছি গিয়েও আমরা জয় পাচ্ছি না। অ্যাডিলেডে হারলেও দারুণ একটি ম্যাচ উপভোগ করেছেন দর্শক। লিটন অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। সে আমাদের সেরা ব্যাটার। তাসকিনের দুর্ভাগ্য দারুণ বোলিং করেও উইকেট পায়নি। আমরা সব সময়ই পজিটিভ। বিশ্বকাপটা আমরা এনজয় করতে চাই।’     

বৃষ্টিই কী ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশকে? ১৮৫ রানের টার্গেটে লিটন দাসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ম্যাচে টাইগাররা ছুটছিল জেট বিমানের গতিতে। ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান তুলেছিল। লিটনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে অ্যাডিলেডে বৃষ্টিস্নাত ঠাণ্ডায়ও কপালে ঘাম জমেছিল রোহিত শর্মাদের। রোহিত, বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ সামিদের টেনসন ভর করেছিল প্রচণ্ড টেনসন। তখনই ঝুম বৃষ্টি। অ্যাডিলেডের আকাশ ফুড়ে নেমে আসা বৃষ্টি থামিয়ে দেয় খেলা। তখনই হয়তো ম্যাচের ভাগ্যটা হেলে পড়ে ভারতের দিকে। খেলা বন্ধ ছিল আধাঘণ্টা। ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন সাকিবদের টার্গেট দেন ১৬ ওভারে ১৫১ রান। নতুন করে খেলা শুরু হলে ৫৪ বলে ৮৫ রানের টার্গেটে খেলতে নামে সাকিব বাহিনী। ৯ ওভারে সংগ্রহ করে ৭৯ রান। তীরে এসে তরী ডোবার ম্যাচে বিরাট কোহলি ম্যাচসেরা হয়েছেন। কিন্তু সেরা ব্যাটিং করেছেন লিটন। পা পিছলে রান আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৬০ রানের ইনিংস। ২৭ বলে ২২২.২২ স্ট্রাইকের ম্যাচে লিটন ছক্কা মেরেছেন ৩টি এবং চার ৭টি। শেষ দিকে সোহান ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ বলে ২ চার ও এক ছক্কায়।

সর্বশেষ খবর