শেষ বিকালে হঠাৎই পাল্টে গেল ম্যাচের চিত্র। মাত্র ৪৫ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে দিশাহারা ভারত। জিততে হলে আরও ১০০ রান করতে হবে সফরকারীদের। হাতে ছয় উইকেট আছে। কিন্তু ড্রেসিং রুমে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মাত্র দুজন- রিশভ পান্থ ও শ্রেয়াস আইয়ার। তৃতীয় দিন শেষ বিকালে মিরপুরের উইকেটের যে আচরণ, তাতে ১০০ রানই এখন ভারতীয়দের কাছে মনে হচ্ছে দূরের বাতিঘর।
যদিও তৃতীয় দিন শেষে ঢাকা টেস্টের যে সমীকরণ- সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হবে এগিয়ে ভারত। কিন্তু ম্যাচের যে পরিস্থিতি, পাহাড় সমান চাপ এবং উইকেটের যে অবস্থা-তাতে বাংলাদেশ জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

মিরপুরে কাল ব্যাট হাতে তাসকিন আহমেদের লড়াই ছিল দেখার মতো। ৯ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের মতো তার ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। লিটন দাসের সঙ্গে নবম উইকেটে তার ৬০ রানের জুটিই বাংলাদেশকে দারুণ ভরসা দিয়েছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, লিটন আউট হওয়ার পর তাসকিনকে আরও বেশি পরিণত ব্যাটসম্যানের মতো মনে হচ্ছিল। অপরপ্রান্তে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নেই, তাই স্টাইক রোটেট করে খেলছিলেন। ওভারের প্রথম দিকে সিঙ্গেল রান নিচ্ছিলেন না। চেষ্টা করছিলেন বাউন্ডারি হাঁকানোর। আবার ওভারের পঞ্চম কিংবা শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্টাইকিং প্রান্তে চলে যাচ্ছিলেন নতুন ওভারে।
শেষ উইকেট জুটি খালিদের সঙ্গে তার ১১ রানের জুটি। তবে তাসকিন যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভারতীয় বোলারদের মোকাবিলা করছিলেন, মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের স্কোরটা আরও বড় হবে। কিন্তু হঠাৎই শট রান নিতে গিয়ে আউট হয়ে যান খালিদ। ৩১ রানেই অপরাজিত থাকেন তাসকিন। তবে ড্রেসিংরুমে যখন ফিরছিলেন, তার চোখে মুখে ছিল বিরক্তির ছাপ। শট রানটা নেওয়ার জন্য হয়তো অনুতপ্ত।
তাসকিন কাল বিকালে যে ৪৫টি বল মোকাবিল করেছেন, মনেই হয়নি মিরপুরের উইকেটে আহামরি কিছু আছে। প্রতিটি বলই আস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। এমন উইকেটেই কিনা সাকিব, মুশফিক, মুমিনুল, শান্ত, মিরাজরা উইকেট বিলিয়ে দিলেন!
অবশ্য আসল নাটক দেখা গেল শেষ বিকালে। ভারতকে প্রথম ওভার থেকেই চাপে রাখে বাংলাদেশ। সাকিবের ওভারে শুভমন গিল শট লেগে ক্যাচও তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা তালুবন্দী করতে পারেননি মুমিনুল হক। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে আরেক ওপেনার ভারতের ক্যাপ্টেন লোকেশ রাহুলকে আউট করেন সাকিব। এরপর স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ এসেছে ভারতীয়দের ব্যাটিং অর্ডার তছনছ করে দিলেন। মাত্র ১২ রানে নিলেন ৩ উইকেট।
শেষ বিকালে বাইশগজে নামতে চাননি তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। তাই তার নিয়মিত ব্যাটিং অর্ডারে বদলে তিনে চেতেশ্বর পূজারা ও চারে অক্ষর প্যাটেলকে নামিয়ে দেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। দ্রুত উইকেট পতন ঘটায় বাধ্য হয়েই কোহলিকে নামতে হয়। পড়ন্ত বিকালে ভারতীয় তারকা চেয়েছিলেন কোনো রকমে শেষের সময়টুকু পার করে দিতে। কিন্তু মিরপুরের উইকেট এমন ছিল যে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। ২২ বল থেকে ১ রান করে আউট হয়ে যান কোহলি। চার সেরা ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে একটুখানি হলেও পিছিয়ে পড়েছে ভারত। অন্যদিকে, জয়ের আশা দেখতে পাচ্ছে স্বাগতিকরা। শেষ বিকালের নাটকের পর এখন রোমাঞ্চকর সকালের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।