বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বসুন্ধরায় সচল ফুটবল

মনোয়ার হক

বসুন্ধরায় সচল ফুটবল

ফুটবলে চারদিকে হাহাকার। অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। অথচ মাঠে নামার জন্য অস্থির হয়ে আছেন ফুটবলাররা। কিন্তু খেলবেন কীভাবে? বাফুফের তো ঘরোয়া আসরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ও চ্যাম্পিয়ন লিগ ছাড়া আর কোনো আয়োজন নেই। তা-ও আবার এখানে শুধু বড় বড় খেলোয়াড় খেলেন। বাকি লিগগুলো মাঠে নামাতে পারছিল না ফেডারেশন। এমনিতেই নাকি তাদের অর্থ সংকট। তাই নিজ অর্থায়নে লিগ আয়োজন করাও বাফুফের পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে কি শত শত তরুণ ফুটবলারের আশা পূরণ হবে না? অন্ধকারে নিমজ্জিত ফেডারেশন। মানের চরম অবনতি বলে কোনো প্রতিষ্ঠানই স্পন্সরে আগ্রহী নয়। এতগুলো লিগ বন্ধ থাকলে তো দেশের ফুটবলও একদিন হারিয়ে যাবে। যে খেলা বাঙালির রক্তে মিশে আছে, তা যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে তো দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অচলাবস্থা নেমে আসবে।

কেউ না এলেও বসুন্ধরা গ্রুপই এগিয়ে এলো। দুঃসময়ে তারাই ফুটবলের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে অন্যরা যা পারেনি তা করে দেখিয়ে দিল দেশের এই শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় অচল ফুটবল সচল হয়ে উঠেছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নাম। তিনিও ছিলেন নামকরা ক্রীড়াবিদ। তাঁর বড় ভাই আবদুস সাদেক হকির বড় খেলোয়াড় ছিলেন। ফুটবলেও দাপটের স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের ফুটবলে সবচেয়ে সফল দল ঢাকা আবাহনীর ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন সাদেক। বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের দুই ছেলে আবার দেশের জনপ্রিয় দুই ক্লাবের প্রধান দায়িত্বে আছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান। বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি।

খেলাধুলা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের হৃদয়ে ভালোভাবে গেঁথে আছে। বাংলাদেশের এমন কোনো খেলা নেই যাতে বসুন্ধরা গ্রুপ পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। তবে ফুটবলে যা করছে তা ইতিহাসই বলা যায়। ঘরোয়া ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতা নতুন নয়। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ যা করছে তা অবাক করে দেওয়ার মতো। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বার্ষিক পঞ্জিকা অনুযায়ী ঘরোয়া ফুটবলে নয়টি আসর হয়ে থাকে। যার আটটিই মাঠে গড়াচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ, পাইওনিয়ার, নারী লিগ- সবই হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায়। শুধু কি তাই, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপের স্পন্সরও তারা। ফুটবলের দুর্দিন দেখে যারা পিছু হটে গেছে, সেখানে কি না ফুটবলে এত স্পন্সর করে উপমহাদেশে নতুন এক রেকর্ডও গড়েছে এই গ্রুপ।

এ ব্যাপারে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান বরাবর একটাই কথা বলেন, ফুটবল বাঙালির প্রাণের খেলা। এর আবেগ অন্যরকম। সুতরাং দেশের ফুটবলকে জাগাতে হবে, মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। স্যারের নির্দেশনায় আমরা ফুটবলে এতগুলো লিগ স্পন্সর করছি। স্যারের মুখে কোনো না নেই। তাঁর এক কথা- ফুটবলের পাশে আছি, থাকব। দেখুন বসুন্ধরা গ্রুপ স্পন্সর করার পর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পাইওনিয়ার লিগ নিয়মিত হচ্ছে। এতগুলো লিগ থেকে ভালো মানের ফুটবলার বের হবে। পরে তাদের উন্নতমানের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। অচল ফুটবল সচল হয়ে উঠছে। এতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে উন্নয়নের পরিকল্পনা বাফুফেকেই নিতে হবে। শুধু ফুটবল নয়, ক্রিকেট, হকি ও অন্যান্য খেলাকে গুরুত্ব দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ নির্মাণ করছে আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স।’

জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘ফুটবলে বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকান্ড দেখে আমি শুধু মুগ্ধ নই, অবাক হচ্ছি। তাদেরই নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস পেশাদার লিগের অভিষেকের পর থেকে শিরোপা জিতেই চলেছে। নারী  ফুটবলেও শিরোপার ছড়াছড়ি। তারপর আবার বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বড় দুই দল শেখ রাসেল ও শেখ জামাল পরিচালিত হচ্ছে। ইচ্ছা করলে এখানেই তারা থেমে যেতে পারত। অতীতে অনেকের ক্ষেত্রে তা দেখেছি। সত্যিই বসুন্ধরা গ্রুপ ব্যতিক্রম। তারা ফুটবলের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। এতগুলো লিগ স্পন্সর করা কি চাট্টিখানি কথা? বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ সেদিকে তাকায়নি। তারা চায় ফুটবলের জাগরণ ও উন্নয়ন। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে ধন্যবাদ জানাই। সত্যি বলতে কি, ফুটবল বেঁচে আছে তাঁর গ্রুপের কল্যাণে।’

জাতীয় দলের সাবেক আরেক তারকা খেলোয়াড় শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘আমি বসুন্ধরায় মুগ্ধ।

গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে স্যালুট জানাই। তিনিই ফুটবলকে নতুন প্রাণ দিয়েছেন। আমি বলব বসুন্ধরা গ্রুপ হচ্ছে দেশের ফুটবলের অক্সিজেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর