নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সিলেটে ১৫০ রানের জয়ের পর এই স্বপ্ন শক্ত ভিত পেয়েছে। এগিয়ে রয়েছে ২ টেস্ট ম্যাচ সিরিজে। মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ হয়েছে গতকাল। বাকি আরও দুই দিন। তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র, ৩০ রানে এগিয়ে গেছে টাইগাররা। হাতে আছে ৮ উইকেট। কঠিন সমীকরণ! উইকেটের যে চরিত্র, কত রান টার্গেট দেবে নিউজিল্যান্ডকে, এখনো নিশ্চিত নয়। তারপরও জয়ের আশা করছেন টাইগার অফ স্পিনার নাঈম হাসান। গতকাল সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নেওয়া নাঈম মিরপুর টেস্টের আগাম ফল নিয়ে বলেন, ‘টোটাল যা-ই হোক আমরা ফাইট করে ইনশাল্লাহ জিতব।’ অবশ্য একই সঙ্গে স্কোর কার্ডে ২০০ থেকে ২২০ রান যোগ করতে চায় বাংলাদেশ।
সিলেটের উইকেটে বরাবরই একটু বাউন্স থাকে। ব্যাটাররা স্ট্রোক খেলেন সাবলীল। এবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টেও স্ট্রোক খেলেছেন ব্যাটাররা। কিন্তু বাজিমাত করেছেন স্পিনাররা। বিশেষ করে তাইজুলের ঘূর্ণিতে ঘরের মাঠে প্রথমবার নিউজিল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত মিরপুরেও এক পেসার নিয়ে খেলতে নামেন। মিরপুরের উইকেট দেশের অন্য উইকেটগুলো থেকেই একেবারে আলাদা। টিপিক্যাল উপমহাদেশীয় উইকেট। বল একটু নিচু হয়ে আসেন। স্পিনাররা বল ঘুরাতে পারেন লাটিমের মতো। স্ট্রোক খেলতে ভীষণ কষ্ট হয় ব্যাটারদের। যদিও গত জুনে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে পেসাররা সফল ছিলেন। তারপরও এবারের মিরপুরের উইকেট তৈরি করা হয়েছে স্পিনারদের কথা মাথায় রেখে। টাইগার স্পিনত্রয়-তাইজুল, মেহেদি মিরাজ ও নাঈম হাসান উইকেট থেকে পুরোপুরি সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। তবে নিউজিল্যান্ডের তিন স্পিনার মিচেল সান্তানার, গ্লেন ফিলিপস ও এজাজ প্যাটেলও দারুণ বোলিং করেছেন। তিন কিউই স্পিনারের সাঁড়াশি আক্রমণে বাংলাদেশ ১৭২ রানে গুটিয়ে যায়। স্বস্তিতে ছিল না ব্ল্যাক ক্যাপসরাও। প্রথম দিন পার করে ৫ উইকেটে ৫৫ রান তুলে। তখন মনে হয়েছিল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দ্বিতীয় দিনের পুরোটা ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। গতকাল তৃতীয় দিন খেলা হয়েছে মাত্র ৩২.৫ ওভার। এই সময়ে নিউজিল্যান্ড বাকি ৫ উইকেট হারায় ১২৫ রানে। এই রান তুলেছে আবার গ্লেন ফিলিপসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। ৫ রান নিয়ে খেলতে নামা ফিলিপস উইকেটের পেছনে শরিফুলের বলে আউট হওয়ার আগে রান করেন ৭২ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৭। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ১৮০ রান। টাইগার দুই স্পিনার তাইজুল ও মিরাজ উইকেট নেন ৩টি করে। নাঈম ও শরিফুল নেন ২টি করে। ৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৩৮ রান তুলে ২ উইকেট হারিয়ে। আজ ৩০ রানে এগিয়ে থেকে খেলতে নামবে নাজমুল বাহিনী।
প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টি ও আলো বাধা হয়েছিল টেস্টে। প্রথম দিন খেলায় বৃষ্টি বাধা হয়নি। কিন্তু আলোর স্বল্পতায় খেলা হয়নি ৮.২ ওভার। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টিতে ভেসে গেছে পুরোটা সময়। গতকাল নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা ৭ মিনিট আগে খেলা শেষ হয়েছে আলোর স্বল্পতায়। আবহাওয়া জানাচ্ছে, আগামী দুই দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দুই দিন বাকি, খেলার ফল হতেই পারে! ৩০ রানে এগিয়ে থাকায় টাইগার স্পিনার বিশ্বাস করেন জয়ের সম্ভাবনা তাদের দিকেই হেলে আছে। জয়ের জন্য স্কোর বোর্ডে ২০০ থেকে ২২০ রান যোগ করার কথা বলেন ২১ রানে ২ উইকেট নেওয়া নাঈম, ‘এই ম্যাচ জেতার জন্য যা যা কিছু দরকার, সবকিছু আমরা করতে রাজি আছি। আশা করছি দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০ থেকে ২২০ রান করলে ম্যাচে লড়াই করতে পারব। উইকেট ভালো আছে, এখানে ব্যাটিং ভালো হতে পারে।’ ভালো ব্যাটিং করতে দায়িত্বশীল হতে হবে অন্য ব্যাটারদের।
জিততে শুধু স্কোর বোর্ডে রান যোগ করলেই হবে না। বোলারদের ভালো বোলিংয়ের পাশাপাশি দলকে ভালো ফিল্ডিংও করতে হবে।