'মারাকানাজো' ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এখনো বিভীষিকাময় এক রাত। ১৯৫০ সালের ১৬ জুলাই বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিল হেরে গিয়েছিল উরুগুয়ের কাছে। এরপর গত ৬৪ বছরে পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ দেশটি। কিন্তু পঞ্চাশের সেই কষ্ট এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ব্রাজিলিয়ানদের। এবার সেখানে যোগ হলো স্পেনের নাম। ১৮ জুন, ২০১৪ সালে মারাকানাতেই পতন হলো টিকি-টাকা সাম্রাজ্যের। একই সঙ্গে অস্তাচলে ঠাঁই হলো জাভি, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, জেরার্ড পিকে, সেস ফ্যাব্রিগাস, ইকার ক্যাসিয়াসদের এক গোল্ডেন জেনারেশনের। ফুটবল বিশ্বে প্রথম আলোচিত কৌশলী ফুটবলের নাম 'জোগো বোনিতো'। এরপর নেদারল্যান্ডসের 'টোটাল ফুটবল'। ১৯৭৪-১৯৭৮; দু-দুটি বিশ্বকাপে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলে ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে ডাচরা। এরপর আবির্ভাব 'টিকি-টাকা' ফুটবলের। জনক স্পেন। ২০০৬ সাল থেকে এই সৌন্দর্যময় টিকি-টাকা ফুটবল দেখছে বিশ্ব। দেখেছে বার্সেলোনা, স্পেনের আধিপত্য। লুই অ্যারগোনাস, ভিনসেন্ট দেল বঙ্, পেপ গার্ডিওলারা এই টিকি-টাকা ফুটবল খেলিয়ে জয় করেছেন বিশ্বকাপ, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ, লা-লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ। গত দুই যুগ ধরে ফুটবলপ্রেমীরা দেখেছেন টিকি-টাকা ফুটবলের আধিপত্য। এর মধ্যে অ্যারাগোনাস ও দেল বক্সে কোচিংয়ে দু-দুটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপ জয় করে গত ছয় বছর এককভাবে পৃথিবী শাসন করেছে স্পেন। শাসক সেই স্পেনের সিপাহি ছিলেন জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ইকার ক্যাসিয়াস, সেস ফ্যাব্রিগাস, জেরার্ড পিকে, জাভি অ্যালোন্সো, ডেভিড সিলভা, ডেভিড ভিয়া, সার্জিও র্যামোস। এদের সবাই এক-একজন তারকা ফুটবলার। অথচ এবারের বিশ্বকাপে এদের পতন হয়েছে করুণভাবে। স্পেন, টিকি-টাকা, জাভিদের সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়েছিল গত জুলাইয়ে। কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল ৩-০ গোলে। ওই হারেই পতনের শুরুটা দেখেছিলেন অনেকে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর ওই হারকে নিছক দুর্ঘটনাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেটা যে ভুল, তার প্রমাণ ফুটবল মহাযজ্ঞের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর। চিলির কাছে হারের পর পরিষ্কার হয়ে গেছে টিকি-টাকা সাম্রাজ্যের পতন। নাম লিখে ফেলেছে অতীতের খাতায়। টিকি-টাকার সঙ্গে অতীত হয়ে গেল জাভি, ক্যাসিয়াস, ইনিয়েস্তারা।