ক্রীড়াঙ্গনে ফেডারেশনের সংখ্যা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে। অথচ অনেক আগেই সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত ছিল প্রয়োজন ছাড়া ফেডারেশন রাখা হবে না। স্বাধীনতার পর সরকারিভাবে স্বীকৃত ফেডারেশনের সংখ্যা ছিল ৭টি। কিন্তু এখন ৩০ ছাড়িয়ে ৪০ ছুঁই ছুঁই করেছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছরে ২/৩ ছাড়া কোনো খেলার মান বাড়েনি। অথচ ফেডারেশনের সংখ্যা স্রোতের মতো বেড়েই চলেছে। ২০০৪ সালে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন ক্রীড়া পরিষদের বাজেট তৈরির সময় হিমশিম খেতে হয়। কেননা এতগুলো ফেডারেশনকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই চিন্তা ভাবনা করছি প্রয়োজন ছাড়া ফেডারেশন রাখব কিনা। ১৯৯৬ সালে বিকেএসপিতে জাতীয় ক্রীড়া সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কোন কোন খেলায় উন্নয়ন সম্ভব তার তালিকা করতে হবে। তা ধরেই এগুতে হবে, তা না হলে খেলাধুলার উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দু'দলই চেয়েছিল ফেডারেশনের সংখ্যা কমিয়ে আনতে। বাস্তবে তা আর সম্ভব হয়নি। কারণ এতে লবিং বা প্রভাব দুটোই রয়েছে। যাক বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত না হলেও ক্রীড়াঙ্গনে সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্তের পর প্রশ্ন উঠেছে এত ফেডারেশনের প্রয়োজন আছে কিনা। হ্যাঁ ভালো করার সম্ভাবনা নেই বলে এশিয়ান গেমস থেকে ৯ ইভেন্ট বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। যদিও এ নিয়ে কম-বেশি বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা অতীতে কেউ এমন কাজ করতে সাহস পায়নি। ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা নেই বলে যদি ইভেন্ট কমানো হয়। তাহলে ফেডারেশনের সংখ্যা কেন কমানো যাবে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে সব ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনকে বার্ষিক অনুদান দেয় তাতে লাভ না ক্ষতি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। কাজটি খুব একটা কঠিন নয়। এখানে যাচাই করতে হবে দেশ কোন খেলা থেকে সাফল্য পেতে পারে। ক্রীড়াঙ্গনে অনুদান বরাদ্দের সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, যে খেলা কর্মকর্তারাই ভালো বোঝেন না, তাদের যে অর্থ দেওয়া হলো আমাদের তাই। বাস্তবে কিন্তু তাই হচ্ছে অধিক ফেডারেশন থাকাতে সম্ভাবনাময় খেলাগুলো তাদের প্রয়োজনীয় ফান্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এতটা অর্থ সংকটে পড়ে যে নিয়মিত জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারে না। এতে করে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নষ্ট হচ্ছে। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উচিত হবে ফেডারেশনগুলো নিয়ে ভাববার। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ক্রীড়া পরিষদ রাখাতে এমনিতেই বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেন, তাদের কাজটা কি? অপ্রয়োজনীয় ফেডারেশন বিলুপ্তি করলে হয়তো কোনো কোনো মহল নাখোশ হবেন। কিন্তু দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতি ঘটবে। সাফল্যের সম্ভাবনা আছে যেসব ফেডারেশনে সেখানে সরকার ভালোভাবে নজর দিতে পারবে। প্রতিবেশী দেশ ভারততো আছেই, উন্নত বিশ্ব কিন্তু তাই করে। তারা মান বুঝে সেই খেলাকে গুরুত্ব দেয়। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাহসী সিদ্ধান্তের পর ফেডারেশন কমানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে।