দিন দিন অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট! গত এক বছরে সাফল্য নেই বললেই চলে। এমনকি নিজেদের আদর্শ মানটাও ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। অথচ আগের দুই বছর সাফল্যের যাত্রাটা ছিল ঊর্ধ্বুগামী। আর একটু পেছনে তাকালে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য গ্রাফটা বেশ ধারাবাহিকভাবেই এগিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট শক্তিকে হোয়াইটওয়াশ। একই বছর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যর্থতার তালিকাটা দীর্ঘ হলেও ওই বছর ২০ ওয়ানডে খেলে তবু ছয়টি জয় পেয়েছে টাইগাররা। সেদিক থেকে নিয়ে চিন্তা করলে ২০১২ ও ২০১৩ সাল ছিল ওয়ানডের স্বর্ণ যুগ। এ দুই বছরে বাংলাদেশ ১৭টি ওয়ানডের মধ্যে জিতেছে ১০টিতে। এশিয়া কাপে রানার্স-আপ হয়েছিল। কিউইদের দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করেছে। টেস্ট ও টি-২০ ক্রিকেটেও ভালো করেছিল বাংলাদেশ। আর চলতি বছরটা ব্যর্থতায় ভরপুর। টানা ১২ ওয়ানডেতে জয়বঞ্চিত মুশফিকরা। এই সময়ে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও হেরেছে দল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাংলাদেশ।
এখন যতই দিন যাচ্ছে ক্রিকেটের মান নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। চার বছর আগে গুয়াংজু এশিয়াডে বাংলাদেশ 'এ' দল জিতেছিল স্বর্ণ। কিন্তু এবার জাতীয় দল সেই স্বর্ণ ধরে রাখতে পারবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়! আসলে একের পর এক ম্যাচে হারতে হারতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আত্দবিশ্বাস অনেকটা শূন্যে নেমে এসেছে। এ কারণেই সক্ষমতা থাকার পরও ক্যারিবিয়ানদের কাছে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ।
দেশের প্রধান তারকা সাকিব আল হাসান ছিলেন না বলেই কি দলের এমন অবস্থা! তা কী করে হয়? কেননা এক বছর আগেও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে সিরিজে গেইল-স্যামুয়েলসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল সে সিরিজেও তো সাকিব ছিলেন না। তা ছাড়া ওই দলের চেয়ে বাংলাদেশের বর্তমান দলকে অনেক শক্তিশালী ভাবা হচ্ছে। তার পরেও কেন এমন দশা? নাকি সাকিবের বিষয়টি ছাড়াও দলে আরও কোনো বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে?
সত্যি কথা বলতে কী, বাংলাদেশ দল এখনো এমন পর্যায়ে যায়নি যে একক কোনো ক্রিকেটার নির্দিষ্ট দিনে দলকে জয়ের বন্দরে পেঁৗছে দেবেন। কেউ কেউ অনেক ভালো পারফরম্যান্স করলেও জয়টা আসে কিন্তু দলীয় সমন্বয়েই। এখন বাংলাদেশ দলের বড় সমস্যার নাম 'সমন্বয়হীনতা'! ক্যারিবীয় সিরিজে খেলা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, ক্রিকেটাররা দলের চেয়ে নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই বেশি চিন্তিত। সবার মাঝে এমন টেনশন কাজ করছে যে, পরের ম্যাচে সুযোগ হবে তো! আর এমন ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের মতো দলের জয় পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাবে। ক্রিকেটাররা টেনশনে থাকলে ম্যাচের ফল নেতিবাচক হবে, এটাই স্বাভাবিক।
দলের এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ান গেমসের স্বর্ণ ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যদিও এবার কাগজ-কলমে বাংলাদেশই ফেবারিট। কেননা ইনচেনে পাকিস্তান ছেলেদের ক্রিকেটে অংশ নেবে না। শ্রীলঙ্কা দলকেও খুব শক্তিশালী বলা যাবে না। আর থাকে আফগানিস্তান ও হংকং। একটি টেস্ট খেলুড়ে দল যদি আফগানিস্তান ও হংকংয়ের মতো তরুণ দলকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে তাহলে তাদের অংশগ্রহণ নিয়েই সমর্থকদের মনে প্রশ্ন উঠবে।
অনেকের মনে হতে পারে, টি-২০ ক্রিকেটে সব দলই শক্তিশালী। নির্দিষ্ট দিনে যে কেউ জিততে পারে। তা ছাড়া গত বিশ্বকাপে এই হংকংয়ের কাছেই হেরেছিল বাংলাদেশ। সবই ঠিক আছে, কিন্তু হংকংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পরাজয়টা মোটেও স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। আর আফগানদের নিয়েও এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কেননা বাংলাদেশ জাতীয় দলই যাবে এশিয়াডে।
এটা ঠিক যে, এশিয়াডে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কোনো দল নেই। টাইগারদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেরাই! বাংলাদেশ যদি হারানো আত্দবিশ্বাসটা ফিরে পায় তবে স্বর্ণ জয় করা মোটেও কঠিন হওয়ার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত যদি সাকিব আল হাসান এশিয়াডের দলে অন্তর্ভুক্ত হন তাহলে তো কথাই নেই। আত্দবিশ্বাসের সঙ্গে ক্রিকেটের স্বর্ণ জয় করাও সহজ হয়ে যাবে টাইগারদের। আর এশিয়ান গেমসের স্বর্ণ বদলে দিতে পারে ক্রিকেটের চেহেরা। ঝিমিয়ে পড়া ক্রিকেটে নতুন করে আসবে গতি। জয়ের ধারায় ফিরতে পারলে ক্রিকেটারদের মানসিকতায়ও আসতে পারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, যা ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে কাজে লাগতে পারে। আবারও ঊর্ধ্বুমুখী হোক ক্রিকেটের সাফল্য, আর নতুন করে শুরুটা হোক ইনচেন এশিয়ান গেমস থেকেই।