বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেনে ১৭তম এশিয়ান গেমসের পর্দা উঠবে। তবে গতকালই গেমসে দলগত আকর্ষণীয় ইভেন্টে পুরুষ ফুটবলের লড়াই শুরু হয়ে গেছে। শুরুতেই ছয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আজ বাংলাদেশ মাঠে নামবে। গ্রুপ 'বি'তে বাংলাদেশ খেলবে আফগানিস্তান, হংকং ও উজবেকিস্তানের বিপক্ষে। প্রথম লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ১৮ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তান ও ২২ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের সঙ্গে গ্রুপের শেষ ম্যাচে লড়বে। ১৯৭৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে অংশ নিচ্ছে। সেবার ফুটবলে অধিনায়ককে ঘিরে দুঃখজনক ঘটনাও ঘটে। বাফুফে প্রথমে অধিনায়ক মনোনীত করেছিল আবাহনীর মনোয়ার হোসেন নান্নুকে। শেষ মুহূর্তে তা বদল করে মোহামেডানের শহিদুর রহমান সান্টুকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়। তা আবার মেনে নিতে পারেননি দলে থাকা আবাহনীর ছয় ফুটবলার। প্রতিবাদ হিসেবে তারা এশিয়ান গেমস বয়কট করে। বাফুফে শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে ছয় ফুটবলারকে ছয় মাস সাসপেন্ড করলেও পরে তা অল্পদিনের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৭৮ থেকে ২০১০ বাংলাদেশ প্রতিটি গেমসে অংশ নিলেও ফুটবল ইভেন্টে দুই আসরে দল পাঠায়নি।
এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ফলাফল সুখকর নয়। ১৯৮২ সালে দিল্লি গেমসে মালয়েশিয়াকে ২-১ ও ৮৬তে সিউল গেমসে নেপালকে ১-০ গোলে হারানোটাই বড় প্রাপ্তি। এরপর বাংলাদেশ আর জয়ের মুখ দেখেনি। অর্থাৎ ২৮ বছর আগে বাংলাদেশ শেষবারের মতো জয়ের মুখ দেখে। ২০ ম্যাচে ১৮ হার ও ২ জয়। ৭ গোল দিলেও হজম করেছে ৫৯টি। এই হচ্ছে এশিয়ান গেমসে পরিসংখ্যান। শক্তিশালী গ্রুপ হওয়াতে এবারও জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আমরা খেলতে এসেছি। আশা রাখি ভালো কিছু করব। তিনি বলেন, গ্রুপে তিন প্রতিপক্ষই শক্তিশালী। বিশেষ করে উজবেকিস্তান এশিয়ান ফুটবলে সম্মানজনক অবস্থানে আছে। তবে আফগানিস্তান ও হংকং ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। ভালো খেললে অবশ্যই তাদের হারানো সম্ভব। আফগানিস্তান সাফ চ্যাম্পিয়ন হলেও তাদের অনূর্ধ্ব-২৩ দল ততটা শক্তিশালী নয়। মামুনুলরা মাঠে ভালো পারফরম্যান্স শো করতে পারলে জয় দিয়েই এশিয়ান গেমস শুরু করা সম্ভব। গত এশিয়ান গেমসে হংকংয়ের কাছে ১-৪ গোলে হারলেও মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সমানই বলা যায়। সত্যি বলতে কি, এবার বাংলাদেশের প্রস্তুতি একেবারে খারাপ নয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে দুই ডাচ্ কোচ লোডডিক ক্রুইফ ও রেনে কোস্টারের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। লোকাল দলের বিপক্ষে ছয় প্রস্তুতি ম্যাচে পাঁচ জয়। নেপালের সঙ্গে এক জয়, এক হার। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ভিয়েতনামের কাছে ২-৪ গোলে হেরে যায়। অর্থাৎ মূল লড়াইয়ের নামার আগে মামুনুলরা ভুল শোধরানোর সুযোগ পেয়েছে ভালোভাবেই। দলীয় ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা জয় দিয়েই গেমস শুরু করতে চাই। আমার বিশ্বাস ছেলেরা নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারলে আফগানিস্তানকে হারানো সম্ভব। তিনি বলেন, ২০১০ সালে ঢাকায় এসএ গেমসে আমরা আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছিলাম। সুতরাং আফগান এমন কোনো ভয়ঙ্কর দল নয় যে তাদের হারানোই যাবে না। বাবু আশা প্রকাশ করেন হংকংকেও হারানোর সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশের। কোচ লোডডিক ক্রুইফ বলেন, ছেলেরা প্রশিক্ষণে ভালো করেছে। ভুল-ত্রুটি শোধরানোর সুযোগও পেয়েছে। এখন মাঠের লড়াইয়ে ঠিকমতো নিজেদের তুলে ধরতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। ক্রুইফ আরও বলেন, উজবেকরা অবশ্যই ভালো মানের দল। আমার দৃষ্টিতে গ্রুপে তারাই ফেবারিট। কিন্তু আফগানিস্তান বা হংকং ততটা শক্তিশালী নয়। ছেলেরা ভালো খেলতে পারলে দুই ম্যাচেই জেতা কষ্টের কিছু হবে না। এখন মাঠে তারা কেমন খেলবে সেটার ওপরই ভালো-মন্দ নির্ভর করছে। আর্জেন্টিনা ২৮ বছর আগে ফুটবলে বিশ্বজয় করেছিল। বাংলাদেশও এশিয়ান গেমসে শেষ জয় পেয়েছিল ১৯৮৬ সালে। দীর্ঘদিন পর এবার পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। পদক জয় স্বপ্নেও ভাবা যায় না।
ফেবারিটদের শুভ সূচনা
জয় দিয়েই ফেবারিটরা যাত্রা করেছে ইনচেন এশিয়ান গেমস। গতকাল পুরুষ ফুটবল ইভেন্টে ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। 'এ' গ্রুপে সৌদি আরব ৩-০ গোলে লাওসকে পরাজিত করে আরেক ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়াও ৩-০ গোলে মালয়েশিয়াকে হারিয়ে দেয়। অন্যদিকে 'সি' গ্রুপে তাজাকিস্তান ১-০ গোলে সিঙ্গাপুরকে পরাজিত করে। প্যালেস্টাইন ২-০ গোলে ওমানকে হারায়। 'ডি' গ্রুপে শক্তিশালী ইরাক ৪-০ গোলে নেপালকে বিধ্বস্ত করে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ৪-১ গোলে কুয়েতকে হারিয়ে গেমসের শুভ সূচনা করেছে।