ক্রিকেটে একটা নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন স্টিভ ওয়াহরা। অ্যালান বোর্ডারদের পর আরও একবার অস্ট্রেলিয়ানরা ধারণ করেছিল ক্রিকেট দুনিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ওয়াসিম-ওয়াকারদের পতনের মধ্যদিয়েই বিজয় কেতন উড়িয়েছিলেন পন্টিংরা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে যে প্রতাপ দেখিয়েছিল ক্যাঙ্গারুরা তা পরবর্তী দশক জুড়েই ছিল বিদ্যমান। ২০০৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সূর্য ছিল মধ্য গগনে। ক্যাঙ্গারুদের ফাইনালে ধরেই প্রতিপক্ষের হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছিল আরও একবার। ক্রিকেটবিশ্বে প্রবাদ ছিল, এবার রানার্সআপ হবে কে! অবধারিত সেই বিষয়টাই সত্যি প্রমাণ হলো ২০০৩ সালে। রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, হেইডেন, মার্টিন, ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি এবং সাইমন্ডসের সামনে দাঁড়াবার মতো শক্তি আক্ষরিক অর্থেই কোথাও ছিল না। ফাইনালে সৌরভ গাঙ্গুলির ভারত পন্টিংদের দুর্দান্ত ক্রিকেটের কাছে এক রকম উড়েই গিয়েছিল!
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ২০০৩ বিশ্বকাপটাকে ভুলতে চাইবে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আকরাম-আমিনুলরা তা ২০০৩ সালেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। রাউন্ড রবিনের ছয়টা ম্যাচের পাঁচটাতেই হেরে যায় বাংলাদেশ। এমনকি কানাডার কাছেও ৬০ রানের পরাজয় স্বীকার করে বাংলাদেশ। হেরে যায় কেনিয়ার কাছে। পাইলটের নেতৃত্বে সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ রচনা করেছিল স্বপ্নের সমাধি। ২০০৩ বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৪টা দল। রাউন্ড রবিন পর্বে অস্ট্রেলিয়ানরা প্রতিপক্ষদের বলতে গেলে উড়িয়েই দিয়েছিল। এ পর্বে ছয় ম্যাচ জিতে সুপার সিক্সেও সবগুলো ম্যাচে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড এবং কেনিয়াকে হারিয়ে পেঁৗছে যায় সেমিফাইনালে। বিপরীত দিকে ভারত খেলছিল গাঙ্গুলির নেতৃত্বে। শচীন, দ্রাবিড়, শেবাগ, যুবরাজদের নিয়ে ভারতও ছিল দুর্দান্ত। রাউন্ড রবিনে কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই পরাজিত হয়েছিলেন সৌরভরা। সুপার সিক্সে ভারত তিনটা ম্যাচেই জিতেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল খেলার যোগ্যতম দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছিলেন সৌরভরা। টেন্ডুলকারের ব্যাট ঝলসে উঠছিল প্রতিটা ম্যাচেই। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে লিটল মাস্টার রেকর্ডটাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক নতুন উচ্চতায়। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ফাইনালে উঠে আসে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে কেনিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে আসে ভারত। ফাইনালে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেন অসি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। তার ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসেই ফাইনালে ৩৫৯ করে অসিরা। ব্যাটিংয়ে নামার আগেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল ভারত! মাত্র ৩৯.২ ওভারে ২৩৪ রান করতেই শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। পুরো বিশ্বকাপে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকার এদিন ছিলেন নিষ্প্রভ। ম্যাকগ্রার দুরন্ত বোলিংয়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনে ধস নামে। ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেন পন্টিং। তবে সিরিজ সেরার পুরস্কার জয় করেন টেন্ডুলকার।
এক নজরে ২০০৩ বিশ্বকাপ
চ্যাম্পিয়ন : অস্ট্রেলিয়া।
রানার্সআপ : ভারত।
আয়োজক : দক্ষিণ আফ্রিকা।
সিরিজ সেরা : শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
সর্বোচ্চ রান : শচীন টেন্ডুলকার-৬৭৩।
সর্বোচ্চ উইকেট : চামিন্দা ভাস-২৩।