১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে আমরা লর্ডস ক্রিকেট মাঠের উইকেট বুঝতে ভুল করেছিলাম। সে কারণেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাজেভাবে হেরেছি। আমি এখনো বিশ্বাস করি, আমি যে পাঁচ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে খেলেছি তার মধ্যে ৯৯-এর দলটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।
ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে 'অনভিজ্ঞ পাকিস্তান'ই বিশ্বকাপ জিতেছিল। কিন্তু ১৯৯৯ বিশ্বকাপের দলটি ছিল খুবই দুর্দান্ত। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আমাদের দলের বোলার এবং ব্যাটসম্যানরা দারুণ অভিজ্ঞ। তারপরও আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারিনি।
৯৯-র বিশ্বকাপে বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। যা খেলোয়াড়রা কিংবা কোচরাও বিশ্বাস করতে পারেননি। তখনকার চ্যাম্পিয়ন দল শ্রীলঙ্কা এবং স্বাগতিক দল ইংল্যান্ড যে সুপার সিক্সে উঠতেই পারবে না এটা কি কেউ ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিল? কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে সেবার সুপার সিক্সে জায়গা করে নিয়েছিল পুঁচকে জিম্বাবুয়ে। আমরাও গ্রুপের শীর্ষে থেকেই সুপার সিক্স নিশ্চিত করেছিলাম।
একটি বাজে দিন কিংবা উইকেটের ভিন্ন আচরণের কারণে অনেক সময় বড় দলও হেরে বসে ছোট দলের কাছে। ওয়ানডের মতো বড় টুর্নামেন্টগুলোতে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এমনটা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়। কেননা যে দল বিশ্বকাপের আশায় চার বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করে কিন্তু একদিনের বাজে ফলাফলের কারণে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে! আমি এ ধরনের বাজে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে। সেবার আমি অধিনায়ক ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গ্রুপ পর্বে আমরা আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পর আর পরের রাউন্ডে যেতে পারিনি।
১৯৯৯ বিশ্বকাপটা শুরু হয়েছিল মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। সেটা ছিল ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মৌসুমের শুরু। তখন উইকেটের অবস্থা এমন থাকে যে, ব্যাটসম্যানদের অগি্নপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের ব্যাটসম্যানরাও অনেক সংগ্রাম করেছে। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে সেবার আমরা ওয়াসিম আকরাম ও শোয়েব আকতারের মতো বোলারকে দলে পেয়েছিলাম। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সে আসরে সেরা বোলারের ফোকাসটা ছিল কার্টলি অ্যামব্রস, কোর্টনি ওয়ালস এবং গ্লেন ম্যাকগ্রার দিকে। যদিও বোলিংয়ে তখন ওয়াসিমের পড়ন্ত বিকাল, তারপরও পুরনো বলে তার রিভার্স সুইং ছিল অসাধারণ। তবে তখন আমাদের দলে ছিল বিশ্বসেরা স্পিনার সাকলাইন মুশতাক, যিনি যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য রাখতেন। টানা প্রথম দুই জয় আমাদের আত্দবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটা জয়ের পর তো মনে হচ্ছিল আমরা আবারও বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছি। ওই ম্যাচে আমার ৮১ রানের ইনিংসটা ছিল অসাধারণ। রাজ্জাকের সঙ্গে সেঞ্চুরি জুটি গড়ে পাকিস্তানকে ২৭৫ রান এনে দিয়েছিলাম। তারপর বোলিংয়ে ওয়াসিম আকরামের শেষ মুহূর্তের চমকে আমরা ১০ রানে জিতে যাই। তারপর স্কটল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আমরা সুপার সিক্স নিশ্চিত করি। কিন্তু চার চারটি দুর্দান্ত জয়ের পর আমাদের সামনে যে একটা 'কালো দিন' অপেক্ষা করছিল তা কে জানত? আমরা হেরে যাই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে আসা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে! এটা পরিষ্কার যে, ওই দিনটি আমাদের ছিল না। তাই ভালো দল হয়েও আমরা হেরেছি। পিচের চতুরতার কারণে অনেক সময় অনেক শক্তিশালী দলের সঙ্গে দুর্বল দলের পার্থক্যটা কমে যায়। ১৯৯৯ সালের সালের ৩১ মে আমরা এমন একটা পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল আট বছর পর জ্যামাইকার কিংস্টনে, যখন আমাদের হাতে আর কোনো সুযোগই ছিল না। ৯৯-এ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরাজয়টা আমাদের খেলোয়াড়দের অনেক বেশি চাপে ফেলে দিয়েছিল। যে কারণে সুপার সিক্সে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যাই।
সবার একটা কঠিন প্রশ্ন, কেন আমরা বিশ্বকাপে বার বার ভারতের কাছে হেরে যাই? সত্যি কথা বলতে কি, ১৯৯২ সালে আমাদের দলটা ছিল একেবারেই অনভিজ্ঞ, আর ১৯৯৬ সালে আমাদের খেলোয়াড়রা ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে চাপ সহ্য করতে পারেনি। ৯৯-এ তো বাংলাদেশের সঙ্গে হারটাই মানসিকতা দুর্বল করে দিয়েছে। তবে আমি হলফ করে বলতে পারি, সেবার আমরা ভারতের চেয়ে অনেক ভালো দল ছিলাম। একটা বিষয় আমার ভাবতেই অবাক লাগে, কেন আমরা বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে একবারও জিততে পারিনি। কোথায় আমাদের ভুল ছিল, তার ব্যাখ্যাও নেই। তবে আমার বিশ্বাস এবার অস্ট্রেলিয়ায় ভারতকে ঠিকই হারাবে পাকিস্তান।
সূত্র : আইসিসির ওয়েবসাইট