কে ছিল না সেই দলে? শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, বিরেন্দর শেবাগ, মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং, জহির খান, হরভজন সিং- নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক স্বয়ং সৌরভ গাঙ্গুলী। তারপরেও তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতকে নাজেহাল করেছিল বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ত্রিনিদাদ টোবাগোর ছোট্ট শহর পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে হেসে খেলে ৫ উইকেটে জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ।
অবশ্যই ক্রিকেটাতিহাসে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়! কেননা ২০০৭ সালে গাঙ্গুলীর নেতৃত্ব ভারতীয় দলটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, ভারত যে দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছে, ১৯৮৩ এবং ২০১১ সালের দল দুটির চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল গাঙ্গুলির দলটি। ভারতীয় ভক্তরা তো সেবার, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই তাদের দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে রেখেছিল! আর কেনই বা ভাববে না, এক দলে এতো বেশি তারকা কি আর কখনো দেখা গেছে। অথচ সেই দলটিকেই কিনা হারিয়েছিল হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে এক 'তরুণ বাংলাদেশ'।
অনেকে হয়তো 'তরুণ বাংলাদেশ' নিয়ে আপত্তি করতে পারেন! কিন্তু একটু ভাবুন তো, ওই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবালের বয়স তখন কতো ছিল? কিংবা অন্য দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। আজ থেকে আট বছর আগে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজার বয়সইবা কত ছিল! তরুণ সেই দলটাই যখন ভারতের সেরা দলকে হারিয়েছিল, আর এই বাংলাদেশ কেন ধোনির দলকে হারাতে পারবে না! কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে তাই 'কুইন্স পার্ক ওভাল'কে প্রেরণা হিসেবে দেখছেন টাইগাররা!
ভারতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের সেরা চার তারকাই এখন বাংলাদেশ দলের প্রধান অস্ত্র! মাশরাফি এখন দারুণ বোলিং করার পাশাপাশি অসাধারণভাবে দলকে পরিচালিত করছেন। সাকিবের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। সেদিন 'সাকিব' ছিলেন নিছকই এক তরুণ ক্রিকেটার মাত্র। কিন্তু আজকের সাকিব ক্রিকেট দুনিয়ায় 'মহানায়ক'। একসঙ্গে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়ার গৌরব তার রয়েছে। তাছাড়া সাকিবকে সমীহ করে না, এমন ক্রিকেটার খুঁজে যাওয়া যাবে না! কী আইপিএল, কী বিগ ব্যাশ, কী ক্যারিবীয়ান লিগ -দুনিয়ার সব ক্রিকেট লিগেই, সব উইকেটেই পারফেক্ট সাকিব। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপেও রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়েছেন চার উইকেট। আর মুশফিক তো এক কথায় অসাধারণ। প্রতিটি ম্যাচেই রান পাচ্ছেন। ৫ ম্যাচে তিন হাফ সেঞ্চুরি। হয়তো তামিমের ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কেননা দেশসেরা ওপেনার এখনো তার সেরা ফর্ম দেখাতে পারছেন না। কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঠিকই ৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালেই দেখা যেতে পারে তামিমের আসল রূপ।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড তো এখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ঠিক বাস্তবে নয়, যেন স্বপ্নে ব্যাটিং করে চলেছেন ময়মনসিংহের এই ক্রিকেটার। এক ম্যাচ কম খেলেও তিনি সেরাদের কাতারে (সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ৪ নম্বরে)। অথচ সেরা পাঁচে এখনো ভারতের কোনো ব্যাটসম্যান নেই। শেষ দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি মাহমুদুল্লাহর। ৮৬ গড়ে ৩৪৪ রান। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা সৌম্য সরকার অভিজ্ঞতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও কৌশল ও বুদ্ধিমত্তায় কিন্তু অনেক ওপরে। আগের ম্যাচে কিউই 'ভয়ঙ্কর' বোলারদের বিরুদ্ধে দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।
এবারের বিশ্বকাপে টাইগারদের সবচেয়ে বড় ক্যারিশমা বোধহয় পেস বোলিংয়ে বিস্ময়! বাংলাদেশ আগা-গোড়ায় একটা স্পিননির্ভর দল। সেই দলে এমন সব তুখোড় পেসার -অবাক করেছে ক্রিকেট বিশ্বকেই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে রুবেলের শেষ ওভারটির কথা তো কারো ভোলার কথা নয়! তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যেভাবে লড়াই করে তা দেখে বিস্মিত হয়েছে কিউই কিংবদন্তি রিচার্ড হ্যাডলিও। অবাক হওয়ারই কথা, কেননা এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্লাক ক্যাপসদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি কোনো দলই। অথচ বাংলাদেশ তাদের নাস্তানাবুদ বানিয়ে ছেড়েছে। তাই শেষ আটের লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশকে হয়তো ভয়ই পাচ্ছে ভারত!