কিংস্টনের সাবিনা পার্কে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল ১৯৯২'র চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। এরপর যে অনর্থ হয়েছিল, তার কোনো নজির পুরো ক্রিকেট দুনিয়াতেই নেই। ক্রিকেটের শত শত বছরের ইতিহাসেও এমন কোনো ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাকিস্তানের কোচ বব উলমারকে ঠিক পরের দিনই টিম হোটেলে মৃত পাওয়া গেল। জ্যামাইকান পুলিশ প্রাথমিকভাবে দাবি করল এটা হত্যাকাণ্ড। পুরো দুনিয়া চমকে গেল। সেই চমক পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য অভিশাপ হয়েই দেখা দিল। পরবর্তী বছরগুলোতে অসংখ্য বিতর্কে জড়িয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট নির্বাসিত হলো আরব মরুর রুক্ষ্ন বুকে। বব উলমারকে কেন নির্মমভাবে পৃথিবী ছাড়তে হয়েছিল তার কোনো সদুত্তর আজও খুঁজে পায়নি ক্রিকেট দুনিয়া। তবে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা তার চলে যাওয়ার জন্য আইরিশ ক্রিকেটের ধাক্কাকেই অনেকটা দায়ী করে। গতকাল আইরিশদের মুখোমুখি হওয়ার আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ ইউনুস খান বলছিলেন, আমরা আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে বব উলমারকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। শক্তির বিচারে আয়ারল্যান্ড তো পাকিস্তানের কাছে দুগ্ধপোষ্যই। কিন্তু ম্যাচের গুরুত্বের বিচারে ম্যাচটা দাঁড়িয়েছিল 'প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে'। সেই অলিখিত প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল জিতেই শেষ আট নিশ্চিত করল পাকিস্তান। আইরিশ প্রাইড ধুলোয় মিশিয়ে ৭ উইকেটের জয়ে বি গ্রুপে তিন নম্বরে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল মিসবাহবাহিনী। শেষ আট নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। তারা শেষ ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে। আয়ারল্যান্ড ম্যাচের আগে নাকি কোচ ওয়াকার ইউনুস বলছিলেন, এখনো আমরা বিশ্বকাপে একটা সেঞ্চুরিও পাইনি। এই হতাশাটা দূর করতে হবে। সরফরাজ সম্ভবত কোচের কথাটা হৃদয়ের গভীরে গেঁথে নিয়েছিলেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে তো তাই বললেন। 'কোচ বলেছিলেন, আমাদেরকে সেঞ্চুরি করতে হবে। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।' সরফরাজের এই বাক্যে কেবল একটা সেঞ্চুরির ব্যাকগ্রাউন্ডই লুকিয়ে নেই আছে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনের পরিবর্তিত ধারটাও। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০১ রানের ইনিংসকে এতটা গুরুত্ব হয়ত দেওয়া ঠিক নয় তবে যে দলটা ব্যাটিংয়ে চলছিল শম্ভুক গতিতে তাদের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপারই। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের মুখোমুখি হওয়ার আগে এমন একটা টনিক প্রয়োজন ছিল বৈকি! এক মিসবাহ ছাড়া পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নিয়মিত ছিলেন না কেউই। অস্ট্রেলিয়ার দুরন্ত পেস আক্রমণের মুখে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন কেমন গুটিয়ে যায় তার প্রমাণ ১৯৯৯'র ফাইনাল। ওয়াসিম আকরামের যে দলটা পুরো টুর্নামেন্টে দাপুটে ব্যাটিং প্রদর্শনী করেছিল সেই দলটাই ম্যাকগ্রাদের বোলিং তোপে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অসিদের মুখোমুখি হওয়ার আগে বোলিং নির্ভর পাকিস্তান ব্যাটিং অনুশীলনটাও ভালোভাবেই সেরে নিল।
পোর্টারফিল্ডের ১০৭ রানের ইনিংসটা আইরিশদের জয় উপহার দিতে পারল না। আইরিশদের ছুড়ে দেওয়া ২৩৮ রানের টার্গেটে ২৩ বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যেই পৌঁছে যায় পাকিস্তান। সরফরাজ ছাড়াও শেহজাদ (৬৩) এবং অধিনায়ক মিসবাহ (৩৯) জয়ের পথ দেখান দলকে। কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তান এই অ্যাডিলেড ওভালেই মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়ার। এছাড়াও শেষ আটে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত, শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ।