আফগানিস্তান ম্যাচের আগে দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রিয় সন্তান অসুস্থ, তাই মাশরাফি খেলতে চাননি বিশ্বকাপ। টাইফয়েডে আক্রান্ত সন্তানকে ২১টি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো বাবারই স্থির থাকার কথা নয়। মাশরাফিও পারছিলেন না। কিন্তু প্রিয় দেশের লাল-সবুজ পতাকার টানে থেকে যান অস্ট্রেলিয়ায় এবং দলকে সামনে থেকে নেতৃৃত্ব নিয়ে টেনে তুলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। শুধু এবার নয়, দেশের টানে নিজেকে জলাঞ্জলি দেওয়ার আরও বহু কাহিনী রয়েছে মাশরাফির। পদ্মা পাড়ের দেশ বাংলাদেশের জন্য সময় ক্ষেপণ না করে ফিরিয়ে দেন আইসিএলের ১৬ কোটি টাকার প্রস্তাব। এমন ছেলের জন্ম দিতে পেরে গর্বিত বাবা গোলাম মর্তুজা স্বপন।
বিশ্বকাপে প্রিয় ছেলে ও প্রিয় দেশের খেলা দেখতে বাংলাদেশ থেকে উড়ে আসেন গোলাম মর্তুজা। খেলা দেখেন শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ম্যাচ দেখে চলে গেছেন দেশে। দেশে থেকেই জানিয়েছেন ছেলে মাশরাফির অনেক অজানা কথা। যে তথ্য আগে কেউ জানেনি। 'ছোট থেকে ছেলে আমার চঞ্চল। অস্থিরতাও ছিল। কিন্তু পরোপকারী তখন থেকেই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে, পাড়া-মহল্লার যে কেউ বিপদে পড়লে কিংবা সাহায্য চাইলে, সময় নেই অসময় নেই ঝাঁপিয়ে পড়তো। অনেক বকা দিয়েছি। কিন্তু সে এসব গায়ে মাখেনি। আজ বুঝি, যদি সে গায়ে মাখতো, তাহলে আজকের মাশরাফি হতে পারতো না'- বাবা গোলাম মর্তুজা ফোনে বলছিলেন এসব কথা। তবে অবাক হতে হয়েছে ধর্ম ভীরুতার কথা শুনে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজও পড়েন, 'দুষ্টামি বাদরামি করলেও মাশরাফি কিন্তু ছোট থেকেই নামাজ পড়ে। কখনোই জুম্মার নামাজ বাদ দেয়নি। খেলা থাকলে হয়তো জামাতে নামাজ পড়া হয় না। কিন্তু অন্য সময় জামাতে নামাজ পড়ে। এছাড়া প্রতিদিন সে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যায়। রোজা সেই ছোট বেলা থেকেই রেখে আসছে। এমন ছেলের বাবা হতে পেরে আমি গর্বিত।' শুধু নামাজই পড়েন না মাশরাফি। ইসলামে সুদ হারাম বলে ব্যাংক থেকে সঞ্চিত টাকার সুদও নেন না। ভাবা যায়!
২০০৮ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঝড়। সিডরের গতির ওই ঝড়ে তচনচ হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেই ঝড়ে আক্রান্ত হওয়ার কথা ছিল মাশরাফিরও। কিন্তু দেশের প্রতি অবিচল ভালোবাসায় অন্ধকার পথে হাঁটেননি টাইগার অধিনায়ক। আইসিএলে ঢাকা ওয়ারিয়র্সের পক্ষে খেলার জন্য ১৬ কোটির টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল মাশরাফিকে। মাশরাফি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে বলেন, 'আমি টাকার জন্য ক্রিকেট খেলি না। খেলি পতাকার জন্য।' এ কথা শোনার পর অনেকেই বিস্মিত হয়েছিল। কিন্তু ছেলেকে চিনেন এবং জানেন বলেই অবাক হননি বাবা গোলাম মর্তুজা, 'আমার ছেলের কোনো লোভ নেই। সে সৎ। দেশপ্রেমিক।'
৩৬ টেস্ট ও ১৪৮ ওয়ানডে খেলা মাশরাফি ছোট থেকে মানুষের শোকে কাতর। মানুষের দুঃখে দুঃখিত। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনো ছোট বেলার সেই অভ্যাস রয়ে গেছে টাইগার অধিনায়কের। পড়াশোনার খরচ জোগান ১০-১২ ছাত্র-ছাত্রীর। বাবা গোলাম মর্তুজা যখন ছেলের এই গুণের কথা বলছিলেন, তখন বুঝাই যাচ্ছিল ছেলে জন্য কতটা গর্বিত বাবা তিনি, 'আমার জানা মতে ১০-১২ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াশোনার খরচ জোগায় মাশরাফি। তবে সেটা আরও বেশি হতে পারে।' অদ্ভুত এক চরিত্র মাশরাফির। ছেলের জন্য ভালোবাসায় মন উথলে উঠে। আবার দেশের জন্য উজার করে দিতে পারেন সবকিছু। ছয় ছয়টি অস্ত্রোপচারের পরও যে অদম্য মানসিকতার বলে এখনো ক্রিকেট খেলছেন মাশরাফি। এটা সম্ভব শুধু মাশরাফি বলেই। তাইতো দলে সাকিব, মুশফিক, মাহামুদুল্লাহদের তো পারফরমার থাকার পরও জনপ্রিয়তায় সবার ওপরে মাশরাফিই।