হঠাৎ করেই এক তরুণীকে প্রশ্ন করে বসেন মাইকেল ক্লার্ক, 'অস্ট্রেলিয়া যে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো, কেমন লাগছে তোমার?' প্রশ্ন শুনে ললাটে চোখ উঠে গেল তরুণীর। আমতা আমতা করতে লাগলেন। এরপর ঢোক গিলে কোনো রকমে বললেন, 'ভালো'। উত্তর শুনেই হেসে ফেলেন অসি অধিনায়ক। শুধু ক্লার্কই নন, হেসে ফেলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলের সব ক্রিকেটার। কাল ফেডারেশন স্কয়ারে এমনভাবেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা মিশে গিয়েছিলেন সমর্থকদের সঙ্গে। মেলবোর্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে ফেডারেশন স্কয়ারে কাল সকালে ক্লার্কদের সংবর্ধনা দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। প্রিয় ক্রিকেটারদের দেখতে দর্শকরা উপচে পড়েছিল স্কয়ারে।
১৯৯২ সালেও বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফেবারিট হয়েও সেবার সেমিফাইনালের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ২৩ বছর পর আবার আয়োজন করে ক্রিকেট মহাযজ্ঞের। এবার অংশ নেয় ১৪ সেরা দল। বাংলাদেশও ছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল অব্দি পৌঁছেছিল টাইগাররা। বাজে আম্পায়ারিংয়ে স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় মাশরাফিদের। মাশরাফিরা না পারলেও বিশ্ব ক্রিকেটের শাসনভার আগামী চার বছরের জন্য নিজেদের হাতে তুলে নেন মাইকেল ক্লার্করা। ২৯ মার্চ তাসমান সাগরের দুই পাড়ের দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ফাইনালটা একপেশে করে দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপরাষ্ট্রটি। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠা নিউজিল্যান্ডকে দাঁড়াতেই দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে শিরোপাকে নিয়ে যায় পঞ্চমবারে।
ফাইনালটি ছিল আবার ক্লার্কের বিদায়ী ম্যাচ। ম্যাচটি জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। বিদায়ী ম্যাচে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে স্মরণীয় বিদায় নেন ক্লার্ক। কাল তাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল চরিত্রে ছিলেন ক্লার্ক। যিনি ২০০৭ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সাধারণ সদস্য হয়ে। আট বছর পর এবার দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিলেন অধিনায়ক হয়ে। কালকের অনুষ্ঠানে মিডিয়ার উপস্থিতি ছিল সরব। কিন্তু ছিল না কোনো আড়ম্বরতা। কালকের দিনটি ছিল শুধুই ক্রিকেটার ও ক্রিকেটপ্রেমীদের। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনোবাসনা পূরণ করতে ক্রিকেটাররা তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। অটোগ্রাফ দিয়েছেন। ১৭ বছরের কিশোর ফ্রাঙ্কলিন অনেক কষ্টে প্রিয় ক্রিকেটার স্টিভ স্মিথের অটোগ্রাফ নেন ছোট্ট এক কাগজে। এমনটা দেখে বিস্মিত স্মিথ নিজেই উপহার দেন একটি অসি ক্যাপ। তাতে লিখে দেন 'প্রিয় ফ্রাঙ্কলিনকে'। এমন উপহার পেয়ে যারপরনাই খুশি। এতটাই খুশি যে, ক্যাপ উঁচিয়ে সবাইকে দেখান। বলেন, 'আমার জীবনের সেরা উপহার। আমি সারাজীবন আগলে রাখব এটা।'
শুধু ফ্রাঙ্কলিন নন, প্রিয় ক্রিকেটারদের সামনে থেকে দেখে, ছবি তুলে, সানি্নধ্য পেয়ে আনন্দের সর্বাসনে বসেছিলেন ফেডারেশন স্কয়ারে আসা হাজার হাজার অসি। ক্রিকেটাররাও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মিশে যান সমর্থকদের সঙ্গে। সমর্থকদের নানান প্রশ্নের উত্তরে নানান কথা বলে উৎসাহ জুগিয়েছেন। অসি অধিনায়ক ক্লার্ক সমর্থকদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, 'আমি শুধু একটি বিষয়ই জানি। পরিশ্রম। জীবনে সফল হতে পরিশ্রম করতেই হবে। পরিশ্রম করলে সাফল্য পাওয়া যায়। সফল হওয়ার পর শুধু আনন্দ উদযাপন করেন। আমি এখন শুধুই আনন্দ করব।' কালকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্লার্কের পাশাপাশি কথা বলেন স্মিথ ও 'ম্যান অব দ্য ফাইনাল' মিচেল স্টার্ক। অস্ট্রেলিয়ান সরকার থেকে উপস্থিত ছিলেন উপ প্রধানমন্ত্রী ওয়ারেন টাস ও ক্রীড়ামন্ত্রী সুসান লে। ক্রিকেটারদের সাফল্যে আনন্দিত অস্ট্রেলিয়ান সরকারও। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ারেন টাস বলেন, 'আমরা ত্রিকেটারদের নিয়ে গর্বিত। ওরা আমাদের আবার বিশ্বসেরা করেছে।'
এগারো আসরের পাঁচটিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও অস্ট্রেলিয়া এখন সমার্থক ও সমোচ্চারিত শব্দ। ২৯ মার্চ রবিবার ব্ল্যাক ক্যাপসদের দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে আবার ক্রিকেট শাসনের রাজদণ্ডটা হাতে তুলে নেল অস্ট্রেলিয়া। নতুন শাসকের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত।