গুঞ্জনটা আগে থেকেই ছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দলে সুযোগ পাচ্ছে নতুন মুখ-লিটন কুমার দাস কিংবা রনি তালুকদার। বিশ্বকাপে নিয়মিত ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের ইনজুরি এবং তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েসও ফ্লপ! এদিকে ঘরোয়া লিগে দুই ওপেনার লিটন ও রনির আগুন ঝড়া পারফরম্যান্স! তাই 'নতুন মুখ' অবধারিতই ছিল।
দল নির্বাচন করতে গিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েছিলেন নির্বাচকরা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে তারা লিটন ও রনির মধ্যে দলে কাকে রাখবেন, আর কাকে বাদ দেবেন! দুই ক্রিকেটারই যেভাবে নিজেদের সামর্থ্য প্রদর্শন করছেন, তাতে দুজনই দলে সুযোগ পাওয়ার দাবিদার। টেকনিক্যালি লিটন দাস এগিয়ে থাকলেও অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য রনি তালুকদারকেই সুযোগ দিয়েছেন নির্বাচকরা। বিশ্বকাপ চলাকালীন বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিটন দাসকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, 'বাংলাদেশ এমন একজন ওপেনারকে পেতে যাচ্ছে, যে উইকেটরক্ষক হিসেবেও সেরা।' কিন্তু সেই লিটনের জায়গা হয়নি দলে।
তবে প্রথম দুই ওয়ানডের দলে জায়গা না পেলেও তৃতীয় ওয়ানডেতে দেখা যেতে পারে লিটন দাসকে। সে কারণেই এই ওপেনারকে রাখা হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য ঘোষিত বিসিবি একাদশে। ১৪ সদস্যের দলে ফিরেছেন অলরাউন্ডার আবুল হাসান রাজু। বিশ্বকাপে খেলা ইমরুল কায়েস ও তাইজুল ইসলাম বাদ পড়েছেন দল থেকে। দলে জায়গা হয়নি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা পেসার আল আমীন ও শফিউল ইসলাম সুহাসেরও।
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পরও লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়ায় মনঃক্ষুন্ন হয়েছিলেন কোচ হাতুরাসিংহ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরও লিখনকে দলে না নেওয়ায় মিডিয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন কোচ। এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজেও উপেক্ষিত হলেন বাংলাদেশের একমাত্র লেগ স্পিন বিশেষজ্ঞ।
স্পিনার তাইজুল ইসলাম বাংলাদেশের হয়ে এ পর্যন্ত দুটি ম্যাচ খেলেছেন। ঘরের মাঠে সব শেষ সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে। কিন্তু এই সিরিজে তার পরিবর্তে নেওয়া হয়েছেন আবুল হাসান রাজুকে। প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, 'রাজু বর্তমানে দারুণ ফর্মে। তাছাড়া বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংও ভালো করেন তিনি।'
আল আমীন ও শফিউলকেও দলে নেওয়া হয়নি ফর্মহীনতার জন্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেলেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আল আমীনকে কোনো ম্যাচ না খেলিয়েই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরিবর্তে শফিউল অস্ট্রেলিয়া গেলেও তাকে মাঠে নামানো হয়নি। তারপরেও 'ফর্মহীন' তকমা লেগেছে তাদের গায়ে!
গতকাল ঘোষিত ১৪ সদস্যের দলে খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি বিশ্বকাপ দল থেকে। রনি তালুকদার ও আবুল হাসান ছাড়া বাকি সবাই অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ দলে ছিলেন। এই সিরিজেও অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা এবং তার ডেপুটি সাকিব আল হাসান। প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য ঘোষিত ১৪ সদস্যের বিসিবি একাদশের অধিনায়ক নাসির হোসেন।
অনেক দিন পর দলে আবারও স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের আধিক্য। স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে সাকিবের সঙ্গে রয়েছেন আরাফাত সানি। বিশ্বকাপ মাতানো তিন পেসার মাশরাফি, তাসকিন ও রুবেলের সঙ্গে দলে ঢুকেছেন রাজু। হোম সিরিজে দীর্ঘদিন পর ১৪ সদস্যের দলে সুযোগ পেয়েছেন চার পেসার। বিশ্বকাপে সফলতার কারণেই যে নির্বাচকরা স্পিনিং কন্ডিশনেও চার পেসার নিয়েছেন -তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
প্রথম দুই ওয়ানডের স্কোয়াড
তামিম ইকবাল
রনি তালুকদার
সৌম্য সরকার
মুমিনুল হক সৌরভ
সাকিব আল হাসান
(সহ-অধিনায়ক)
মুশফিকুর রহিম
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
নাসির হোসেন
সাব্বির রহমান রুম্মন মাশরাফি বিন মর্তুজা
(অধিনায়ক)
তাসকিন আহমেদ আবুল হাসান রাজু রুবেল হোসেন
আরাফাত সানি