হারের তিক্ত স্বাদ দিয়ে পাকিস্তানকে বরণ করল বাংলাদেশ। জয় দিয়ে বাংলা নতুন বছর উদযাপন করল বিসিবি একাদশ। হউক প্রস্তুতি ম্যাচ, তারপরও পাকিস্তানকে ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম হারের লজ্জায় ডুবাল বাংলাদেশ। আগামীকাল শুরু তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ। তার আগে গতকাল খেলল একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ। সেখানে সাব্বির রহমান রুম্মনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৭ বল হাতে রেখেই ১ উইকেটের জয় তুলে নেয় বিসিবি একাদশ। এ এমন এক জয়, যা উদ্দীপ্ত করবে পুরো দলকে। উদ্দীপনা জোগাবে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি জাতিকে।
বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও কোয়ার্টার ফাইনালের বেড়া টপকাতে পারেনি। 'হার্ট অব ক্রিকেট' মেলবোর্নে ভারতের কাছে হারলেও ১৬ কোটি বাঙালির মন জয় করে নেয়। আর ওই হার মেনে নিতে পারেনি বাঙালি। ওইদিন দুই আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড ন্যক্কারজনকভাবে সহায়তা করেছিল ভারতকে। কোয়ার্টার ফাইনালে না পারলেও গ্রুপ পর্বে অসাধারণ ক্রিকেট খেলে আত্মবিশ্বাসের পারদটাকে মাশরাফিরা বাড়িয়ে নিয়েছে অনেক। আইপিএল খেলতে যাওয়ার আগে তাই সাকিব আল হাসান জোর গলাতেই বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ এবার ফেবারিট।' বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্স চুলচেড়া বিশ্লেষণ করেই হয়তো এমনটা বলেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার বিশ্লেষণ যে ভুল নয়, গতকাল তা বুঝিয়ে দিল বিসিবি একাদশ। পাকিস্তানের ২৬৮ রান টপকে গেল অনায়াসে। যদিও ৯ উইকেট খুঁইয়েছে। কিন্তু জয়ের পথে সেটা বাঁধা হতে পারেনি। সেই কাজটা সহজ করেন সাব্বির রহমান মিডল অর্ডারে ব্যাট করে। খেলেন ১২৩ রানের নান্দনিক ইনিংস। তার ইনিংসই জয়ের বন্দরে নিয়ে যায় বিসিবিকে।
গতকাল সাব্বির এমন এক সময় ব্যাটিংয়ে নামেন, যখন ৯ রানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও রনি তালুকদারকে হারিয়ে কোণঠাসা দল। সেখান থেকে লিটন দাস, ইমরুল কায়েশকে নিয়ে গড়ে তুলেন জুটি। বিশেষ করে ইমরুলকে নিয়ে ১২৪ রান যোগ করেন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১৯ ওভারে। ইমরুল করেন ৩৭ রান। সাব্বির ১২৩ রানের ইনিংস খেলেন ঝড়ো গতিতে মাত্র ৯৯ বলে। যাতে ছিল ৮টি ছক্কা ও ৭টি চার। দলীয় ২১৩ রানে সাব্বির সাজঘরে ফিরলে হুরমুর করে ভেঙে পড়ে বিসিবি একাদশের ব্যাটিং লাইন। কিন্তু শেষ দিকে সোহাগ গাজী ও মোহাম্মদ শহীদ দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সোহাগ। দীর্ঘদিন পর গতকাল ফের খেলতে নামেন এই অফ স্পিনার অলরাউন্ডার। যদিও ৩ ওভার বোলিং করেন সোহাগ। তারপরও সফল ছিলেন। ১৬ রানের খরচে উইকেট নেন আসাদ শফিকের। ব্যাটিংয়ে খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস। তার ইনিংসটিই বিসিবির জয়কে সহজ করে দেয়। তিন ওয়ানডে, দুই টেস্ট ও একটি টি-২০ খেলতে ১৩ এপ্রিল ঢাকায় পা রাখে পাকিস্তান। একদিনে অনুশীলন শেষে কাল মাঠের লড়াইয়ে নামে। ব্যাটিংটা খারাপ করেনি। মোহাম্মদ হাফিজের ৮৫ রানের ইনিংস খেললে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬৮ রান করে পাকিস্তান। হাফিজ ছাড়াও ৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ফাওয়াদ আলম।
পাকিস্তানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ৩২টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। একটি মাত্র ম্যাচ জিতেছে। তাও ১৬ বছর আগে ১৯৯৯ সালে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সেবার পাকিস্তানকে হারিয়েছিল টাইগাররা। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত জয় পায়নি বাংলাদেশ। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে জয়ের কাছাকাছি এসেছিল। কিন্তু হেরেছিল মাত্র ২ রানে। এবার ফেবারিট হয়েই সিরিজে নামছে বাংলাদেশ। ফেবারিটের তকমাটা যে গায়েই চড়িয়ে থাকবে, তার প্রমাণ রাখল গতকাল প্রস্তুতি ম্যাচে জাতীয় দলের কিছু ক্রিকেটারকে নিয়ে গড়া দল নিয়ে খেলতে নেমে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভেন্যু: ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম
ফল: বিসিবি একাদশ ১ উইকেটে জয়ী
পাকিস্তান: ২৬৮/৯, ৫০ ওভার ( মোহাম্মদ হাফিজ ৮৫, আজহার আলি ২৭, হারিস সোহেল ২৩, মোহাম্মদ রেজওয়ান ১৮, ফাওয়াদ আলম ৬৭*, সাঈদ আজমল ১৬*। আল-আমিন ০/৪২, মোহাম্মদ শহীদ ১/৩৪, মুক্তার আলি ১/৪০, জুবায়ের হোসেন ১/৫৬, শুভাগত হোম ৩/৩৯, তাইজুল ইসলাম ১/৪০,
সোহাগ গাজী ১/১৬)।
বিসিবি একাদশ : ২৭০/৯, ৪৮.৫ ওভার ( তামিম ইকবাল ৯, রনি তালুকদার ০, লিটন দাস ২২, সাব্বির রহমান ১২৩, মুমিনুল হক ১২, ইমরুল কায়েশ ৩৬, শুভাগত হোম ৫, মুক্তার আলি ১, সোহাগ গাজি ৩৬, মোহাম্মদ শহীদ ১২*, তাইজুল ইসলাম ৬*। জুনায়েদ খান ৪/৩৮, রাহাত আলি ২/৫৪, ওয়াহাব রিয়াজ ১/৪৫, ইয়াসির শাহ ১/৩৭)