রিয়াল মাদ্রিদকে যেন পেয়ে বসেছে নগর প্রতিদ্বন্দ্ব্ব্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেলেই যেন বাড়তি শক্তি ভর করে দলটির গায়ে। ছিড়ে ছিবড়ে ফেলতে চেষ্টা করে। চলতি মৌসুমে রিয়াল ও অ্যাটলোটিকো সাত সাতবার মুখোমুখি হয়েছে পরস্পরের। কিন্তু একবারও জিততে পারেনি 'অল গ্যালাকটিকো' রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটের লড়াইয়ের প্রথম পর্বেও জিততে পারল না রিয়াল। অবশ্য জিতেনি অ্যাটলেটিকোও। ভিসেন্ট ক্যালদেরনের টানটান উত্তেজনার ম্যাচটি গোল শূন্য ড্র হয়েছে। জিততে না পারলেও এই ড্রয়ে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে রিয়াল। ২২ এপ্রিল ঘরের মাঠ বার্নাব্যুতে জিতলেই সেমিতে চলে যাবে রিয়াল। একই সমীকরণ অ্যাটলেটিকোর জন্যও। ড্র করলে গোল পার্থক্যে চলে যাবে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্য ম্যাচে জুভেন্টাস ১-০ গোলে হারিয়েছে মোনাকোকে।
একে নগর প্রতিপক্ষ। তার উপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল। হারলেই বিদায়। তাই ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনার কমতি ছিল না। দুই দলের ফুটবলাররাই ছিলেন উত্তেজিত। তাই ম্যাচে বলের লড়াইয়ের পাশাপাশি ছিল শারীরিক লড়াইও। এজন্য রক্তাক্ত হতে হয়েছে অ্যাটলেটিকোর ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিকে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র দুর্বল রেফারিংয়ের জন্য। দুর্বল রেফারিংয়ের জন্যই নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছে স্বাগতিক অ্যাটলেটিকো। মানজুকিকের পেটে ঘুষি মেরেও রিয়ালের রক্ষণভাগের দানি কারভালহো বেঁচে যান এবং পেনাল্টি পায়নি অ্যটলেটিকো।
নিজেদের মাঠে খেললেও আধিপত্য ছিল কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জেমস রদ্রিগেজদের। তাদের গতিশীল ফুটবলের সঙ্গে পেরে উঠছিল না অ্যাটলেটিকো। দুই দলের লড়াইয়ের আড়ালে আবার লড়াই হয়েছে গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস ও ইয়ান ওবাকের। এই লড়াইয়েও হারেনি কেউ। তবে নজর কেড়েছেন ওবাক। রোনালদো, রদ্রিগেজদের বেশকিছু শট দুর্দান্তভাবে সেভ করে দলকে বাঁচিয়েছেন ওবাক। এরমধ্যে রিয়ালের ওয়েলস তারকা গ্যারেথ বেলের দুর্দান্ত একটি সোয়ার্ভিং শট বাঁচিয়ে নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন। ৩৬ মিনিটে রদ্রিগেজের দারুণ একটি শট বাঁচান অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক ওবাক। প্রথমার্ধে এতটাই দুর্দান্ত খেলেছে রিয়াল যে, পাঁচ পাঁচবার আক্রমণ করেছে প্রতিপক্ষের গোলবারে। বিপরীতে অ্যাটলেটিকোর আক্রমণ ছিল মাত্র একবার।
প্রথমার্ধে গোল না পাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া হয়ে উঠে রিয়াল। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে। তবে শেষ দিকে অ্যাটলেটিকো বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ক্যাসিয়াসের দৃঢ়তায় গোল পায়নি। এর মধ্যেই মানজুকিককে কনুই মেরে রক্তাক্ত করেন সার্জিও র্যামোস। এজন্য অবশ্য লাল কার্ড দেখতে হয়নি র্যামোসকে। ৬২ মিনিটে রেফারির খামখেয়ালিতে পেনাল্টি পায়নি অ্যাটলেটিকো। হঠাৎ করে কালভালহো ঘুষি মেরে বসেন অ্যাটলেটিকোর ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার মানজুকিককে। কিন্তু রেফারি এড়িয়ে যান বিষয়টি। এমনকি কোনো কার্ডও দেখাননি রিয়ালের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় কারভালহোকে। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াইয়ে জয়-পরাজয় না হলেও আধিপত্য ছিল রিয়ালের। বল দখলের লড়াইয়ে রিয়ালের পায়ে বল ছিল ৬১ শতাংশ। পক্ষান্তরে ৩৯ শতাংশ ছিল অ্যাটলেটিকোর।
জিততে না পারায় হতাশ রিয়ালের কোচ কার্লোস আনচেলত্তি, 'প্রথমার্ধেই আমাদের গোল পাওয়া উচিত ছিল। আমরা ভালো খেলেছি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ওরা ভালো খেলেছে। তারপরও আমাদের জেতা উচিত ছিল। আশা করি পরের ম্যাচে এই পারফরম্যান্স আমাদের উদ্দীপ্ত করবে।' প্রতিপক্ষের মাঠে পরের ম্যাচ। তাই বলে আশা ছাড়েননি অ্যাটলেটিকোর কোচ দিয়াগো সিমিওনে, 'লড়াই এখন উন্মুক্ত। প্রথমার্ধে ওরা ভালো খেললেও আমাদের ওবাক ছিল দুর্দান্ত। আশা করছি পরের ম্যাচে আমরা আরও ভালো খেলব।'