স্টেডিয়ামে এসেই সাকিব আল হাসান সোজা চলে গেলেন মাঠের মাঝখানে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন ৫নং পিচটি। শের-ই-বাংলার এই পিচেই আজ খেলা হবে। নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি না থাকায় আজকের ম্যাচে অধিনায়ক সাকিব। বাড়তি দায়িত্বের কারণেই হয়তো উইকেট নিয়ে বেশি ভাবতে হচ্ছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে।
উইকেট কেমন, কাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করতেই সাকিবের কূটনৈতিক উত্তর, 'স্পোর্টিং উইকেটই মনে হচ্ছে। আশা করি ভালোই হবে।' স্পোর্টিং উইকেট বলতে সহজ বাংলায় নিজেদের পছন্দের উইকেটই বোঝায়! সেখানেও অনেক প্রশ্ন থেকে যায়। উইকেট কী স্পিনসহায়ক নাকি পেস? তাহলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে তিন পেসার দলে নিয়ে সফল হয়েছে, আজ কি তবে দেখা যাবে দুজনকে? সাকিব পরিষ্কার করে কিছু বলেননি, 'উইকেট দেখেই একাদশ গঠন করা হবে। এটা ঠিক সেরা দলটাই খেলবে।'
টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এই পাকিস্তানকেই পরাজিত করেছিল। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর টাইগারদের কাছে অন্য টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো পরাজিত হলেও একমাত্র পাকিস্তানই অজেয়। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জয়ের পর ১৬ বছর পার হয়ে গেল, কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়টা অধরাই রয়ে গেল। টেস্ট, টি-২০ কিংবা ওয়ানডে কোনো ফরমেটেই জয় নেই। তবে এবার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলায় টাইগারদের মনোবল এখন তুঙ্গে। তাই সাকিব মনে করেন পাকিস্তানকে হারানোর এটাই সেরা সুযোগ। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলেন, 'আমি আত্মবিশ্বাসী। আমরা সিরিজ জয়ের টার্গেট নিয়েই খেলব।' নিজের আত্মবিশ্বাসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাকিব বলেন, '১৬ বছরে হয়নি বলে এখনো যে হবে না, তাতো হতে পারে না। এখন আমাদের দলের সবাই পারফরম্যান্স করছে। সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাসী পাই। তবে কোনোভাবেই পাকিস্তানকে ছোট করা হচ্ছে না। পাকিস্তান অবশ্যই ভালো দল। তাদের সঙ্গে জিতলে হলে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আমরা বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে খেলছিলাম, এখন আমরা যদি সেই পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে পারি, বিশ্বাস আছে ফল আমাদের পক্ষেই থাকবে।'
সফল বিশ্বকাপ মিশন শেষে দেশে ফেরার পর সাকিব বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবার বাংলাদেশই ফেবারিট। কাল সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরে ফিরে একই কথা বললেন। কিন্তু বড় দলের বিরুদ্ধে আগেই নিজেদের ফেবারিট ভাবাটা বাড়তি চাপ হিসেবে কাজ করবে কিনা, এমন প্রশ্নে সাকিব বলেন, 'যখন আমরা বলি জেতার সুযোগ কম। অন্যদল খারাপ খেললে আমাদের সুযোগ তৈরি হবে, তখনো আমরা চাপে থাকি। যদি বলি প্রতিপক্ষ ফেবারিট তখনো আমরা চাপে থাকি। আমরা সব সময় চাপে থাকি বিশেষ করে ঘরের মাঠে। আমার মনে হয় না; এটা নিয়ে কেউ কোনো কিছু চিন্তা করছে। আমি মনে করি আমরা ফেবারিট, আমাদের দলটি পাকিস্তানকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। বিশ্বকাপে আমরা বেশ ভালো করেছি। জুনিয়ররা বেশ ভালো পারফর্ম করছে। আমরা দলগতভাবে ভালো করছি।'
পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াকার ইউনুসও কাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশকে ফেবারিট বলেছেন। বিশ্বকাপের পর অবসরে গেছেন পাকিস্তানের দুই তারকা ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি ও মিসবাহ্-উল-হক। ইউনুস খানও নেই। নেই ওমর আকমল ও আহমেদ শেহজাদের মতো তারকা ব্যাটসম্যানও। ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন মাকসুদ, সোহেল খান ও ইয়াসির। দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই তরুণ। অভিজ্ঞতার দিক দিয়েও এই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। তাছাড়া একদিন আগে ফতুল্লায় বিসিবি একাদশের বিরুদ্ধেই হেরেছে পাকিস্তান। তারপরেও সতীর্থদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন সাকিব, 'পাকিস্তান দলে এমন অনেক খেলোয়াড় আছে যারা এখনো ম্যাচ জেতাতে পারেন। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা এটা খুব ভালোভাবেই জানি ওদের সঙ্গে জিততে হলে আমাদের সেরা খেলা খেলতে হবে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করতে হবে।'