সূর্য মধ্য গগনে। সূর্য কিরণে যাপিত জীবন নাভিশ্বাস! সবাই যখন একটু আধটু ছায়ার খোঁজে ব্যস্ত। তখনো মিরপুরে নিরলস অনুশীলন করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। খররোদকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা স্লিপ ফিল্ডিং করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে কিপিং করছেন মুশফিকুর রহিমও। মুশফিক কিপিং করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আঙুলের ব্যথায় খুলনায় শেষ দুদিন গ্লাভস হাতে নামেননি। মিরপুরে তার গ্লাভস হাতে মাঠে নামাও সংশয়াচ্ছন্ন। কিন্তু অদম্য মানসিকতার মুশফিক সমস্ত আশঙ্কাকে পিছনে ফেলে কিপিং করতে চাইছেন এবং চাইছেন বলেই কাল অনুশীলন করলেন। এই যে আত্দবিশ্বাস, এটা শুধু মুশফিকের একার নয়, খুলনা টেস্টে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলার পর তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান-সবার মধ্যেই টগবগ করে ফুটছে এই আত্দবিশ্বাস। আত্দবিশ্বাসী দল নিয়ে টাইগার অধিনায়ক তাই স্বপ্ন দেখছেন ইতিহাস গড়ার। ইতিহাস রচনা করতে টার্গেট করেছেন জয়কে।
ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের পর মুশফিকরা এখন বসে আছেন চালকের আসনে। ওয়ানডে সিরিজের আত্দবিশ্বাস নিয়ে টি-২০ ম্যাচেও উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানকে। এরপর খুলনা টেস্ট, সে তো ইতিহাস। ইনিংস হারের শঙ্কায় দুলতে দুলতে যে ক্রিকেট খেলেছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, তাতে স্বপ্ন দেখা অতিরঞ্জিত নয়। অতিশয়োক্তি নয় বলেই টাইগার অধিনায়ক স্বপ্ন দেখছেন পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো হারানোর। জয় পেতে অবশ্য জুড়ে দিয়েছেন শর্ত, 'খুলনা টেস্টের প্রাপ্তি অনেক। আশা করি খুলনার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আত্দবিশ্বাসের সঙ্গে মিরপুর টেস্ট খেলব। ফাইনাল ম্যাচ। তাই আমাদের লক্ষ্য জয়। ফাইনাল ম্যাচ জয়ের জন্য যা যা করার দরকার, সেগুলো যেন পুনরায় করতে পারি। এই সাফল্য পেতে পুরো দল যথেষ্ট কষ্ট করছে। আশা করি পাঁচদিন ভালো ক্রিকেট খেলে ইতিবাচক রেজাল্ট আনতে।'
খুলনায় টেস্ট হয়েছে তিনটি। ফল তিন রকমের। জয়-পরাজয় এবং হার। মিরপুরে ১২ টেস্টে দুটি মাত্র ড্র এবং একটিতে মাত্র জিতেছে বাংলাদেশ। তাও গত অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এছাড়া বাকি ৯টিতেই হার। তাই খুলনার তুলনায় মিরপুর অনেক বেশি বেদনার ভেন্যু টাইগারদের। মিরপুরে হরহামেশাই ফল হচ্ছে। এমন ফল নির্ণায়ক উইকেটে খেলতে একাদশ গুরুত্বপূর্ণ অন্য যে কোনো বিষয়ের চেয়ে। এটা মাথায় রেখেই একাদশ সাজানো হবে- বলেন টাইগার অধিনায়ক, 'বোলিং বিভাগে আমাদের হাতে দুটো অপশনই আছে। আমরা তিন পেসারও খেলাতে পারি। আবার দুজনও খেলাতে পারি। যদি দুই পেসার খেলানো হয়, তাহলে একজন বাড়তি স্পিনার খেলতে পারেন। তবে একাদশ নিয়ে এখনো কিছু ঠিক করিনি। ম্যাচের আগে ঠিক করব।' খুলনায় কিপিং করার সময় আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলেন। তাই বাকি সময় ফিল্ডিং করেননি ম্যাচে। তবে কাল করেছেন। পায়ের আঙুলের ব্যথা পাওয়ায় হালকা চোট রয়েছে তামিম ইকবালের। এই ইনজুরি নিয়েই খেলবেন দুজন, কাল নিশ্চিত করেন মুশফিক, 'ক্রিকেটে ছোটখাটো ইনজুরি থাকতেই পারে। ব্যথা থাকলেও আমার ও তামিমের কোনো চিড় নেই। তাই দলের প্রয়োজনেই খেলব ইনশাল্লাহ।'
বাংলাদেশ সফরে এখনো জয়ের মুখ দেখেনি পাকিস্তান। প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু। সেটা রয়ে গেছে টি-২০ ম্যাচ পর্যন্ত। খুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। তারপরও তামিম ও ইমরুলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের জন্য পারেনি। তাই মরিয়া মিসবাহবাহিনী। কিন্তু তাতে কি? জয় পেতে মরিয়া টাইগাররাও। টাইগার অধিনায়কের বিশ্বাস ফাইনাল টেস্টে জিততে মরিয়া দুদলই, 'পাকিস্তান খুবই বিপজ্জনক দল। তাদের ব্যাটিং ও বোলিং বিশ্বমানের। ম্যাচে দুই দলের মধ্যে যে কোনো এক দলের জেতার সুযোগ থাকে। তবে এটা ঠিক আমাদের ব্যাটিং ও বোলিং ভালো। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা ফর্মে রয়েছি। তাই আমাদের সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতেই হবে, পাঁচদিন যারা ভালো ক্রিকেট খেলবে এবং ১৫ সেসনের মধ্যে কয়েকটা সেসন যারা ভালো খেলবে, তারাই জয়লাভ করবে। দুদলই চাইবে জিততে। তাই আমি মনে করি ম্যাচে পরিষ্কার অর্থে কোনো দলই ফেবারিট নয়।'
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করেছে। হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকেও। হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, টি-২০ ম্যাচ জয় এবং টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখা-সব মিলিয়ে যদি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ হয়েই যায়, তাহলে ক্রিকেটপ্রেমীদের মতো টাইগার অধিনায়কও একবাক্যে সিরিজটিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বলতে দ্বিধা করবেন না, 'অবশ্যই। এখন পর্যন্ত আমরা ভালো ফল করেছি। আমার মনে হয় না, এর আগে এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছি। তিন ফরম্যাটে ওদের তিন রকম দল, তাই আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। সবার মতো আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল বিশ্বকাপের মতো ভালো করা। সেটা করতে টেস্টের পাঁচদিন ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।'
শুরু থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে স্বপ্নকে প্রসারিত করেছেন মুশফিকরা। সেই দিগন্ত প্রসারী স্বপ্নের স্বার্থকতা দিতে টেস্ট সিরিজও জিততে চান টাইগার অধিনায়ক।