লাঞ্চ বিরতি চলছিল। সাজঘরে বসে মধ্যাহ্নের রোদ এড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ক্রিকেটাররা। এই ফাঁকে কেউ কেউ লাঞ্চও সেরে নিচ্ছেন। টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ তাকে লাঞ্চ সেরে নিতে বলেন। কিন্তু টিম ম্যানেজারের আহ্বানকে পাত্তা দেননি। বরং জানালেন, হিথ স্ট্রিককে নিয়ে একটু বোলিং করবেন। বুঝতে চাইবেন, কেন এমন হয়েছিল যে মাঠ ছেড়ে বাইরে চলে আসতে হয়েছে। ব্যক্তিটি আর কেউ নন, শাহাদাত হোসেন রাজিব। যিনি মিরপুর টেস্টে খেলার সুযোগ পান ইনজুরিতে আক্রান্ত পেসার রুবেল হোসেনের বদলে। অথচ সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারলেন না। মাত্র দুই বল করেই বিদায় নেন। মানে, ম্যাচের এবং নিজের ওভারে মাত্র ২ বল করার পরই আহত হন। চলে আসেন মাঠের বাইরে। এরপর ফিরেন আবার। কিন্তু বোলিং করা হয়নি। বোলিং করার প্রস্তুতি নিতেই মধ্যাহ্ন বিরতিতে অনুশীলন করছিলেন। তখনই বিপত্তি বাঁধে। ডান হাঁটু মচকে স্ট্রেচারে করে চলে আসেন মাঠের বাইরে। তার ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মিনিসকাসেও চিড় ধরেছে। ফলে টেস্টে আর খেলা হচ্ছে না এই ডান হাতি পেসার! শাহাদাতের ইনজুরি যতটা না বেদনার, তারচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। যে বোলার শারীরিকভাবে পুরো ফিট কি না, সেটা না জেনেই কিভাবে টেস্ট খেলিয়ে দিলেন, সেই প্রশ্ন এখন সবার। এছাড়াও তিনজন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে খেলার যৌক্তিকতাই বা কি?
খেলার কোনো সম্ভাবনা ছিল না শাহাদাতের। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় সুযোগ পান মিরপুর টেস্টে। খুলনা টেস্টে সাইড স্ট্রেইন হয় রুবেলের। তারপরও তাকে রেখেই মিরপুর টেস্টের স্কোয়াড ঘোষণা করেছিলেন নির্বাচক প্যানেল। কিন্তু টেস্ট শুরুর দুদিন আগে টিম ম্যানেজমেন্ট আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন। রুবেলকে বিশ্রাম দেন। তার জায়গায় নেন আবুল হাসান রাজুকে। টেস্টে আবুল হাসানের খেলার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। কিন্তু অধিনায়ক ও কোচের সিদ্ধান্তে সুযোগ পান শাহাদাত। এরপর তো সবই পরিষ্কার আয়নার মতো।
লাঞ্চ বিরতিতে বোলিং করার সময় স্ট্রিকের চোখের সামনে মাটিতে পড়ে যান শাহাদাত। পরে তাকে স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিসিবির মেডিক্যাল রুমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসক ডা. দেবাশিষ বলেন, 'রাজিবের ডান হাঁটু মচকে গেছে। ২৪ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হবে। এমআরআই করা হয়েছে। ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছেড়া ছাড়াও মিনিসকাসে চিড় ধরেছে।' ৫-৬ দিন অবজারভেশনে থাকলেও দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, এই টেস্টে আর বোলিং করা সম্ভব নয় তার। হয়তো অস্ত্রোপচার করতে হবে শাহাদাতের। এর আগে শাহাদাত সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বোলিং করেন মাত্র ১২ ওভার। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংস বোলিং করার সুযোগই পাননি। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে শাহাদাত টেস্ট খেলেন ৩৭টি। উইকেট মাত্র ৭২টি। অথচ দেশের মূল স্ট্রাইক বোলার হওয়ার সব ধরনের সামর্থ্যই ছিল শাহাদাতের। কিন্তু নিয়ম শৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোয় এখন অনিয়মিত। কখনো সুযোগ পান। আবার বছরের অধিকাংশ সময়ই পার করতে হয় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে।
খুলনার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে উজ্জীবিত পুরো দেশ। স্বপ্ন দেখছিলেন সবাই মিরপুর টেস্ট জয়ের। তাই তিন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে খেলতে নামে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে। কিন্তু কি হলো? দিনের অধিকাংশ সময়ই মুশফিকবাহিনীকে এক বোলার কম নিয়ে বোলিং করতে হয়েছে। অথচ দিনের শুরুতে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাপুষ্ট মোহাম্মদ শহীদ যে ধারায় বোলিং করেন, তাতে একজন তৃতীয় পেসারের অভাব অনুভূত হয়। সেটা দূরে থাক, শাহাদাতকেই মাঠের বাইরে চলে আসতে হয়। শাহাদাতের ফিরে আসায় ওভার সে করেন সৌম্য সরকার মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে। অবশ্য সৌম্য ৫.৪ ওভার বোলিং করে রান দেন ১৩। কিন্তু তাতে কি? তার বোলিং কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের উপর। ওয়ানডে সিরিজ জয়, টি-২০ জয় এবং সর্বোপরি খুলনায় অবিশ্বাস্য ড্রয়ের পর টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করেছেন, পরশ পাথর পেয়েছেন হাতে! যখন যেখানে, যাকে স্পর্শ করবেন, সোনা হয়ে বেরুবে! কিন্তু তারা যে বোকার স্বর্গে বাস করছেন, তার প্রমাণ আনফিট শাহাদাত হোসেনের দলভুক্তি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিন)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩২৩/৩ (ইউনুস ১৪৮, আজহার ১২৭*, সামি ১৯, হাফিজ ৮, মিসবাহ ৯*, শহিদ ২/৪৩, তাইজুল ১/১০২)।