টেস্ট ক্রিকেটে টস নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত। বিশেষ করে ডবি্লউ জি গ্রেসের 'দ্য লেডি' কল এখনো বিশ্ববিখ্যাত। এই ইংলিশ কিংবদন্তির ক্রিকেটার যখনই টস করতেন, তখন টস কয়েনের এক পাশে থাকত রানী ভিক্টোরিয়ার ছবি এবং উল্টো পাশে দ্যা লেডি ব্রিটানিয়ার ছবি। গ্রেস টস করতে নেমেই চোখ বন্ধ করে কল করতেন 'দ্য লেডি'। টস জিতলে ব্যাটিং করার জন্য কোনো সময় নিতেন না গ্রেস। ডবি্লউ গ্রেস সব সময়ই ব্যাটিং করতেন শুরুতে। কেন আগে ব্যাটিং করবেন, তার পক্ষে থাকত নানান যুক্তি। আগে ব্যাটিং করে তিনি ব্যর্থ হননি, এমন নয়। ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু গাণিতিক হিসাবে সাফল্যের পরিমাণই বেশি। তার টস জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়ার থিওরি অনুসরণ করেছেন মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়াহদের মতো ক্রিকেট লিজেন্ডরা। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। উইকেটে কোনো প্রাণ না থাকার পরও মিরপুরে টস জিতে প্রতিপক্ষকে অনুরোধ করেন ব্যাটিং করতে। সিদ্ধান্তটি যে কতটা বুমেরাং হয়ে ফিরেছে, দ্বিতীয় দিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন আজহার আলির ডাবল সেঞ্চুরি এবং আসাদ শফিকের সেঞ্চুুরিতে পাকিস্তান যখন পাহাড়সম স্কোর দাঁড় করিয়ে চাপা দিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। এখন লড়ছেন ফলোঅন এড়াতে। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন তার খেসারত গুনছেন।টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে লজ্জাজনক হারের স্বাদ নেওয়ার বহু ইতিহাস আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। অধিনায়কত্বের পদও হারাতে হয়েছে এজন্য। নাইমুর রহমান, খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ, হাবিবুল বাশারের দেখানো পথে এবার হেঁটেছেন মুশফিক।
২০০৭ সালে বিশ্বকাপে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে ঝড় তুলেছিল বাংলাদেশ। শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলীদের নিয়ে গড়া বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনের ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল বিশ্বকাপ থেকে। সেই উদ্ভাসিত সাফল্যের রেশ শেষ হওয়ার আগে নিজের পায়ে কুড়াল মারেন হাবিবুল বাশার। মে মাসের প্রচণ্ড গরমে এই মিরপুরে টস জিতে ডবি্লউ জি গ্রেসের শেখানো পথে না হেঁটে প্রতিপক্ষ ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকা ভারতও লুফে নেয় সিদ্ধান্ত। দিনেশ কার্তিক, ওয়াসিম জাফর, রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ৬১০ রান তুলে বাংলাদেশের ললাটে লিখে দেয় ইনিংস ও ২৩৯ রানের হার। শুধুই এটাই নয়, ফিল্ডিং করার ওই সিদ্ধান্ত বাশারের অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার পথও মসৃণ করে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান এখন তুখোড় ফর্মে। তার উপর ম্যাচ উইনার। তার বিপক্ষে কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হাজারবার ভাববে ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু মুশফিককেও ভাবতে হবে। উইকেটে হালকা ঘাস থাকার পরও মাত্র দুই পেসার নিয়ে একাদশ সাজানোয় যেমন বিস্মিত সবাই, তেমনি একজন আনফিট পেসার রাখার কোনো যৌক্তিকতাও খুঁজে পাননি কেউ। পাননি বলেই প্রথম দুই দিন মোহাম্মদ শহীদের কোনো সঙ্গী খুঁজে না পাওয়ায় অকেশনাল পেসার সৌম্য সরকারকে বোলিং করতে হয়েছে ১৭.৪ ওভার। এমন বিকল সিদ্ধান্তের জন্য আজহার আলি তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। ২২৬ রানের ইনিংসটি খেলে আজহার পুরোপুরি ব্যাকফুটে ঠেলে দেন বাংলাদেশকে। এছাড়াও সেঞ্চুরি করে ইউনুস খান ও মোহাম্মদ শফিক। ক্যারিয়ারে ২৯ সেঞ্চুরি হাঁকানো ইউনুসের বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা তৃতীয় এবং শফিকের দ্বিতীয়। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে ইনিংস হারের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন ইউনুস ও শফিক। ওই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ইউনুস। সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজও। মজার বিষয় চার বছর আগের চট্টগ্রাম টেস্টে একটি ডাবল ও দুটি সেঞ্চুরিতে ৫৯৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে। এবার মিরপুরে একটি ডাবল ও দুটি সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৫৫৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ভুল থেকে কোনো শিক্ষা না নিলে তার খেসারত দিতেই হয়। মিরপুরে সেই খেসারত গুনছে বাংলাদেশ, শুধু টাইগার অধিনায়কের খামখেয়ালির জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (২য় দিন)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ১৫২ ওভারে ৫৫৭/৮ ডিক্লে. (ইউনুস ১৪৮, আজহার ২২৬, আসাদ ১০৭, তাইজুল ৩/১৭৯, শহীদ ২/৭২ শুভগত ২/৭৬)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৭.৫ ওভারে ১০৭/৫ (ইমরুল ৩২, মাহমুদুল্লাহ ২৮, সাকিব ১৪*, মমিনুল ১৩, মুশফিক ১২, তামিম ৪, ইয়াসির শাহ ২/১৫, জুনায়েদ ২/২৬, ওহাব ১/৩৩)।