ইমরুল যখন ধীর পায়ে মাঠ পেরিয়ে মিডিয়া সেন্টারে আসছিলেন, তখন মিরপুরের আকাশ থেকে ঝরছিল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পরশ বুলিয়ে দেওয়ার মতো বৃষ্টি! দিন শেষে ক্লান্ত পথিকের হয়তো পরশ বুলিয়েছে এই মিষ্টিমধুর বৃষ্টি! কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কিংবা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে কোনো সান্ত্বনার প্রলেপ দিতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র, তাতে ফলোঅনের সঙ্গে ইনিংস হারের গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে টাইগাররা। ক্রিকেটপ্রেমী এবং পাকিস্তান এখন অপেক্ষায় কখন শেষ উইকেটের পতন হয় ম্যাচের। কিন্তু খুলনায় তামিম ইকবালকে নিয়ে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়া ইমরুল স্বপ্ন দেখতে বললেন গোটা দেশকে। ফলোঅন এড়াতে যে দলের দরকার আরও ২৫১ রান এবং খেলার বাকি ৯ সেসন ও ২৭০ ওভার; সে সময় এমন স্বপ্নের কথা শুনে চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক! কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি স্বপ্ন দেখবেন কোনো সন্দেহ নেই। স্বপ্ন দেখাও উপরকরণও রয়েছে হাতে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে খুলনায় ৩১২ রানের রেকর্ড জুটিই স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি আত্দবিশ্বাসী করেছে ইমরুলকে।
প্রথমে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে এমনিতেই সমালোচিত। তার উপর চাপের মুখে যেভাবে ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হয়েছেন, তাতে মুশফিকুর রহিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। শঙ্কিত অনেকেই ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ডাবল মাইন্ডেড ব্যাটিং করে ৩২ রানে সাজঘরে ফেরা ইমরুল হাসিমুখে এবং ঠাণ্ডা মাথায় বলেন স্বপ্ন দেখতে, 'আমরা জানি ম্যাচের এখন অনেক বাকি। আমাদের প্রথম লক্ষ্য ফলোঅন এড়ানো। তারপর আমরা যতদূর পারি সামনে এগুতো চাই।' ফলোঅন এড়াতে ২৫১ রান বাকি এবং হাতে আছে ৩ উইকেট! যেহেতু শাহাদাত হোসেন রাজিব আহত থাকায় বাটিং করতে পারছেন না। তাই কতটা সম্ভব, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। কিভাবে এটা সম্ভব, এর একটি সরল ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন খুলনায় ১৫০ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলা ইমরুল, 'ফলোঅন এড়াতে যে কোনো দুজন ব্যাটসম্যানকে থিতু হতে হবে। তবে সাকিবের মতো বিশ্বমানের ক্রিকেটার রয়েছেন। রয়েছেন সৌম্য সরকারও। যদি এরা থিতু হতে পারেন এবং একটি জুটি গড়তে পারেন, তাহলে অবশ্যই সম্ভব।'
স্বপ্ন দেখা স্বাভাবিক। খুলনায় ২৯৬ রানে পিছিয়ে যখন ইনিংস হারের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তখনই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে উদ্বোধনী জুটিতে ৫৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে বিশ্বরেকর্ড গড়েন তামিম ও ইমরুল ৩১২ রান যোগ করে। তাই স্বপ্ন দেখতে বলতেই পারে ইমরুল, 'এখনই আমরা ম্যাচ হারার কথা বলব না। এখনো দ্বিতীয় ইনিংস বাকি। আগের টেস্টে ব্যাকফুটে থেকেও আমরা অনেক একটা ভালো জায়গায় গিয়েছিলাম। এই ইনিংসে আমাদের টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে। অসুবিধা নাই। পরের ইনিংস আছে। আমরা যদি থিতু হতে পারি, তাহলে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করব।' অবশ্য টপ অর্ডারের ব্যর্থতার জন্য তামিমের দুর্ভাগ্যজনক আউটের কথা বলেন ইমরুল। কিন্তু বলেননি নিজের ও অধিনায়ক মুশফিকের আউটের কথা।