কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ১৮ নম্বর হোল। দর্শকরা অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সিঙ্গাপুরের গলফার মারদান মামত তার শেষ স্ট্রোক কতটা চমৎকারভাবে করেন তাই দেখতে আগ্রহী সবাই। ততোক্ষণে প্রথম বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেছে এ সিঙ্গাপুরবাসীর। দক্ষিণ কোরিয়ান সুমিন লি কিংবা ভারতীয় খলিন যোশীর পক্ষে মারদান মামতকে স্পর্শ করা অসম্ভব। সিঙ্গাপুরবাসী তার শেষ হোলটা সম্পন্ন করতেই কয়েকজন স্বদেশি তার মাথায় ঢেলে দিল 'মিনারেল ওয়াটার'। কেউ একজন পিছন থেকে বরফের বাকেট উপুড় করল মামতের উপর। ভ্যাপসা গরমে এমন ঠাণ্ডার প্রয়োজন ছিল বইকি তার! ঘেমে-নেয়ে একাকার এ সিঙ্গাপুরের গলফার যখন তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম এশিয়ান ট্যুর শিরোপা ও প্রাইজমানি নিতে মঞ্চে এলেন তখন তার চেহারায় ক্লান্তির লেশ মাত্র নেই। টুর্নামেন্টের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বিজয়ী মামতের হাতে তুলে দিলেন ৫৪ হাজার ডলার প্রাইজমানি। আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার ট্রফি দিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া। মিউজিকের তালে তালে ততোক্ষণে নাচতে শুরু করেছেন মারদান মামত।
'আমার জন্য আজ বিশেষ একটা দিন। আমি সত্যিই দারুণ আনন্দিত। বিশেষ করে এ টুর্নামেন্টের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমি এ আনন্দের সীমা নির্ধারণ করতে পারব না।' মামতের আকর্ণ বিস্তৃত হাসি আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার ট্রফি হাতে আপন আনন্দে নেচে উঠতে দেখে দর্শকদের বুঝার বাকি ছিল না তিনি কতটা সুখী। মারদান মামতের মোবাইল ফোনে এরই মধ্যে একটা ম্যাসেজ এল। 'ইউ আর দ্য চ্যাম্পিয়ন, ইউ আর দ্য উইনার, ইউ আর দ্য রিয়েল ম্যান'- ম্যাসেজটা পাঠিয়েছেন মারদান মামতকে পাঁচটি চমৎকার সন্তান উপহার দেওয়া স্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে মামত যখন এই ম্যাসেজের কথা বলছিলেন, তার চেহারায় ছিল আনন্দের পাশাপাশি বিচ্ছেদের একটা ছায়াও! আহা, পাশে যদি স্ত্রী-সন্তানও থাকত! তবে বাড়ি ফিরে মারদান মামত একজন গর্বিত পিতা ও একজন গর্বিত স্বামী হিসেবেই সদর দরোজা দিয়ে প্রবেশ করবেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের স্পন্সরে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো এশিয়ান ট্যুর টুর্নামেন্ট। নিজেদের মাঠেও কেন ব্যর্থ হলো বাংলাদেশি গলফাররা! বিজয়ী মামত জানালেন, অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। তবে এ টুর্নামেন্টটা তাদেরকে নতুন প্রেরণা দিবে, ভবিষ্যতে লড়াই করার শক্তি জোগাবে বলে জানালেন বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন। একটা গলফ টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য কিসের প্রয়োজন? যেমন মারদান মামতের কথাই ধরা যাক। 'আমি যদি বলি শেষদিনে কোনো চাপ ছিল না আমার উপর, তবে আমি মানুষ নই। অবশ্যই আমি চাপে ছিলাম। তবে নিজেকে সব সময়ই বলেছি, শান্ত থাক। একটা টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য নিজেকে শান্ত রাখাটাই সবচেয়ে বড় কাজ। মনোযোগ ধরে রাখতে হয় সব সময়। আর এখানে কার্লোসের (স্পেন) মতো গলফাররা খেলেছে। তাদের সঙ্গে লড়াই করা সত্যিই কঠিন ছিল।' মারদান মামতের ভাষ্যে, বাংলাদেশের গলফ অনেকদূর এগিয়ে গেছে এ টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে। বসুন্ধরা গ্রুপকে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন স্পন্সর হওয়ার জন্য। ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রাণোচ্ছ্বল দর্শকদেরও। আর শেষটায় আম-লিচুর পাশাপাশি কাঁঠালের চমৎকার স্বাদের কথা বলতেও ভুলেননি বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন মারদান মামত।