শেষ হলো স্বপ্নের এশিয়ান ট্যুরের আসর। ভারত ছাড়া সার্ক অঞ্চলে গলফে এশিয়ান ট্যুরের টুর্নামেন্ট বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো। এত বড় আয়োজন করা চাট্টিখানি কথা নয়। এতে বিশাল বাজেটের প্রয়োজন পড়ে। শেষ পর্যন্ত দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ পৃষ্ঠপোষকতা করায় বাংলাদেশ গলফে এশিয়ান ট্যুর করা গেছে। তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ ঢাকায় আরও দুবার এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে গলফ খেলা অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। অধিকাংশ টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষক করছে বসুন্ধরা গ্রুপই। সিদ্দিকুর রহমান দেশের বাইরে ট্রফি জেতাতে ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু গলফকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য দেশে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের প্রয়োজন ছিল। খ্যাতনামা গলফারদের অংশগ্রহণে এশিয়ান ট্যুর আয়োজনে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলবে এ প্রত্যাশা ছিল সবারই। কিন্তু এতটা উন্মাদনা সৃষ্টি হবে তা কেউ ভাবতেও পারেননি।
ক্রিকেট, ফুটবল বা হকিতে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলে ক্রীড়াঙ্গন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। ২০১১ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করে বিশ্ববাসীকে চমক দেখিয়েছিল। গলফ ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলা নয়। অথচ এবার বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনকে ঘিরে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে তা অবিশ্বাস্যই বলা যায়। গলফ ঠিকমতো না বুঝলেও পত্রিকা অফিসে ফোন করে অনেকেই জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশের গলফারদের অবস্থান। পরিচিত গলফার বলে সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে আগ্রহটা ছিল বেশি। না, টুর্নামেন্টে সিদ্দিকুর জ্বলে উঠতে পারেনি। দুলাল হোসেন ভালো খেললেও তিনিও শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের সাফল্য এনে দিতে পারেননি। এশিয়ান ট্যুরে নিজেদের চেনা কোর্সে বাংলাদেশের কেউ চ্যাম্পিয়ন হলে নিঃসন্দেহে আসরটা আরও স্মরণীয় হয়ে থাকত। কিন্তু এনিয়ে আবার হতাশারও কিছু নেই।
বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে প্রথম বারের মতো আয়োজিত এশিয়ান ট্যুর নিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে এটাই তো বড় প্রাপ্তি। এক আয়োজনে গলফ সাধারণ দর্শকদের মনে ঢুকে গেছে। জনপ্রিয় খেলার কাতারে ঠাঁইও পেয়েছে। বিদেশি গলফাররাও আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছে। কুর্মিটোলা গলফ কোর্স দেখে অনেকে বলেছেন, এমন মনোরম পরিবেশ পেয়ে ভালোই লেগেছে। শিরোপা জয়ী সিঙ্গাপুরের মারদান মামত বলেন, 'বাংলাদেশে এশিয়ান ট্যুর হওয়াতে গলফ নতুনভাবে জেগে উঠবে। টুর্নামেন্টকে ঘিরে যে আগ্রহ দেখলাম, তাতে আমি নিশ্চিত অনেক তরুণই খেলা হিসেবে গলফকেই বেছে নেবেন।' আসলেও তাই বাংলাদেশে তেমনভাবে গলফার নেই। তরুণদের আগ্রহ থাকে মূলত ক্রিকেট ও ফুটবলকে ঘিরে। যে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে তাতে আশা করা যায় নতুন নতুন গলফারের সন্ধান মিলবে। সামনে দেখা মিলবে আরও সিদ্দিকুর ও দুলালের। গলফ এমনভাবে জেগে ওঠার পেছনে মূল কৃতিত্ব বসুন্ধরা গ্রুপেরই।
বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল সানাউল্লাহ বলেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে না আসলে এত বড় আয়োজন করা সম্ভব হতো না! বিদেশি সংগঠকরা বলেছেন, এ ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা একটা দেশের গলফকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শুক্রবার বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন দেখতে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে ছুটে যান। তিনিও টুর্নামেন্টে স্পন্সর করায় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এমন আয়োজনে বাংলাদেশ গলফে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু স্পন্সরই নয়। আয়োজন যেন স্বার্থকভাবে শেষ হয় সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবরও রেখেছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও বসুন্ধরা গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফওয়ান সোবহান কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে ছুটে যান। প্রো-অ্যাম টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি গলফারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করেছেন।
মূলত তার আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বাংলাদশে গলফের এত বড় আয়োজন হয়। বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনকে ঘিরে প্রাপ্তি অনেক। গলফের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে তাকে এখন ধরে রাখতে হবে। কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে কোনো অবস্থায় যেন এ উৎসাহ হারিয়ে না যায়।